শিক্ষানীতি এবং এমপিও নীতিমালায় বৈসাদৃশ্য

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২:২৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২০

মেহরাব আলীঃ একটা জাতি গঠনে জাতির শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা ঠিক করা দরকার। আপনি মূর্খ ও অর্ধমূর্খ জাতি গঠন করতে চাইলে উচ্চশিক্ষা ওভারলুক করে যাবেন! গুরুত্ব দেবেননা, সরকারি অনুদান বা এমপিও দিবেন না! নীতিমালায় উচ্চশিক্ষাকে ঐচ্ছিক হিসেবে রেখে দেয়াই যথেষ্ট।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা স্থাপন বন্ধ করে দেন। জ্ঞানীদের অসম্মান করেন, তাদের অবহেলা করেন। এতেই জাতি ক্রমান্বয়ে অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত হয়ে যাবে।পূর্ব বাংলাকে শোষণ করার জন্য, বিনা বাঁধায় শাসন করার জন্য বৃটিশ সরকার, পাকিস্তান সরকার, এমনকি তৎকালিন রাজধানী কলকাতার শাসক গোষ্ঠীও চাননি যে, পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠী উচ্চশিক্ষিত হোউক। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। কলকাতার জমিদার গোষ্ঠী টাকা খরচ করে সভাসমাবেশ করেছিল যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না হয়।তবু ১৯২১ খ্রিঃ শত বাঁধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,যার ফল আমরা ভোগ করতেছি।

এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে। সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০১০ শিক্ষানীতিতে অধ্যায়-৮,কৌশল-৬, বলা হয়েছে- “পর্যায়ক্রমে ডিগ্রি পাস কোর্সকে তুলে দিয়ে ৪ (চার) বছর মেয়াদী অনার্স (সম্মান) কোর্স চালু করা হবে।” সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারপর শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জনবলকাঠামো এমপিও নীতিমালা২০১৮ তে সেসব উপেক্ষা করা হয়েছে। অনার্স (সম্মান) শ্রেণির কথা উল্লেখ করাই হয়নি।

বর্তমান সংশোধনীতে যদি সংযুক্ত করা না হয় তাহলে উচ্চশিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়বে। জাতিকে কৌশলে সুশিক্ষা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তামুলুক কোন বার্তা এমপিওনীতিমালা২০১৮তে নেই। বরং বৈসম্যমুলক ধারা উপধারা বিদ্যমান। যেমন- গ্রড নির্ধারণ, অনুপাত প্রথা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণ, ছুটি,বদলি, নিয়োগ, দায় দ্বায়িত্ব, প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণ, শিক্ষক শিক্ষার্থীর যথার্থ সংজ্ঞা, নন এমপিও শিক্ষক ও নন-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাখ্যা, উচ্চশিক্ষার সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা, উচ্চশিক্ষা কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করবেন ইত্যাদি ব্যাপারে কোন সুনিদৃষ্ট নীতি বা আইন বা ব্যাখ্যা নেই।

সাধারণ শিক্ষায় কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে কিভাবে শিক্ষাকে যুগপোযোগী করা যায়। তার কোন ধারণা নেই। বরং শিক্ষাকে বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত করে জটিল করা হয়েছে। আইনের দোহাই দিয়ে, অর্থের পরিকল্পিত সংকট দেখিয়ে শিক্ষকদেরকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন শিক্ষিত বেকার তৈরী হচ্ছে অন্যদিকে জাতি সুশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়ে হতাশা গ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বৈষম্যের পাহাড় তৈরি করে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর প্রাণের বাংলাদেশ উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। সাধারণ জনগণ শোষিত বঞ্চিত হয়ে চলছে, সরকারের পালাবদল হচ্ছে, ক্ষমতার রদবদল হচ্চে কিন্তু জনস্বাধারণের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। বর্তমান সরকার ভাগ্য পরিবর্তনে যে যুগোপোযুগি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তা বাঁধাগ্রস্ত করতে করতে একশ্রেণির ষড়যন্ত্রকারিরা সদা তৎপর রয়েছে। শাসক শ্রেণির কিছু কিছু ব্যক্তিকে ভুল বুঝানোর মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্তয় ঘটানো হচ্ছে। তাদের অন্যতম শিকারে পরিণত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, ও সচিব মহোদয়গণকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে চোখ-কান খোলা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি। সকল বৈষম্যের অবসান হউক, জয় হোক বিপন্ন মানবতার। এটাই আমাদের কাম্য।

লেখকঃ

সদস্য সচিব

বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম