শিক্ষা ব্যাংক সময়ের দাবি

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১:১৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২০

সারোয়ার মিরনঃ দেশের অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো শিক্ষকদেরও একটা ব্যাংক হোক। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিষেশায়িত ব্যাংক হিসেবে শিক্ষা ব্যাংক স্থাপন সময়ের দাবি। নানামূখী সমস্যা ও সম্ভবনার হিসেব নিকাশে এটাই এখন একমাত্র উপযুক্ত সমাধান।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ট্রাস্ট ব্যাংক, কৃষকদের কৃষি ব্যাংক, আনসার ব্যাটলিয়নের আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসীদের প্রবাসী কল্যান ব্যাংকসহ আরো বেশ কয়েকটি পেশাজীবীর ব্যাংক রয়েছে। সরকারি, বেসরকারি সব ধরনের শিক্ষকদের নিয়ে হোক শিক্ষা ব্যাংক।

বেসরকারি শিক্ষকদের মাসিক এমপিও বা বেতন প্রদানে চারটি সরকারি কাজ কাজ করে। এ চারটি ব্যাংক নিয়ে শিক্ষক সমাজের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা ব্যাংক স্থাপিত হলে বেতন প্রদানে প্রায় দশ লক্ষাধিক শিক্ষকের বেতন ভাতা প্রদানে কোন সমস্যা হবে না। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, চাঁদা, উপবৃত্তি, মেধাবৃত্তি, ভাতা, রেজিস্ট্রেশন ফি, ফরম পুরন ফি, স্কুল ব্যাংকিং, অবসর ও কল্যান ফান্ড হস্তান্তর, পেনশন, ঋন ইত্যাদি শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্থিক কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন করা যাবে। এতে অন্যান্য ব্যাংকের উপর অতিরিক্ত চাপ কমবে।

শিক্ষকদের কল্যানে কাজ করবে শিক্ষা ব্যাংক। এতে দেশের সবচেয়ে বড় পেশাজীবী হিসেবে সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকরা হয়রানি মুক্ত হবেন। স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

শিক্ষা ব্যাংক স্থাপিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকল আয় ব্যাংকে জমা হবে। এতে করে জাতীয়করনে সরকারী উদ্যোগ তরান্বিত হবে বলে বিশ্বাস করি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত আর্থিক ব্যবচ্ছেদ নির্নয় এবং শিক্ষা খাতে বাজেট পরিচালনা অধিকতর সহজ হবে।

ইতিমধ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতাভোগিদের ভাতা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদানে সফলতা পেয়েছে। তাই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনও (অনুদান) মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেয়া হবে। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রনালয় ও শিক্ষামন্ত্রনালয় কাজ করছে। বেসরকারি প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষকের বেতন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় স্থানান্তর করতে অতিরিক্ত দুইশত কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে।

সরকারি শিক্ষকদের বেতন মাসের প্রথম দিনেই স্ব স্ব শিক্ষকদের একাউন্টে জমা হয়। বেসরকারি শিক্ষকদের বহু প্রক্রিয়া শেষে বেতন পেতে পরবর্তী মাসের আট-দশ তারিখ লেগে যায়। ব্যাংক গুলোর হয়রানির কথা আর না বললেও চলে!

বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে দেয়া হবে- সরকারে এমন সিদ্ধান্তে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক শ্রেনির মধ্যে বৈষম্য আরো বাড়বে বলে মনে করি। আমি চাই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন স্ব স্ব অনলাইন একাউন্টের মাধ্যমে মাসের শেষ তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করা হোক। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ০.১৮-০.২০শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় শিক্ষককেই বহন করতে হবে! তার মানে ঝামেলা আরো বাড়লো।

সরকার হয়রানি বন্ধে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটাতে আরো হয়রানি বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দোকান গুলোতে টাকা পয়সা পর্যাপ্ত থাকেনা। ব্যাংক যেখানে শিক্ষক বেতন দিতে ফান্ড জটিলতায় ভুগতে দেখা যায় সেখানে মোবাইল ব্যাংকিং দোকান গুলোতো নস্যিই।

শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। সন্মানজনক পেশা শিক্ষকতা। ব্যাংকের মাধ্যমে স্ব স্ব শিক্ষকের একাউন্টে বেতন -ভাতা জমা হলে শিক্ষকদের সন্মান আরো বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এ প্রক্রিয়া বেমানান ঠেকে। এছাড়া অতিরিক্ত দুশো কোটি টাকা ব্যয় হবে!

শিক্ষা বান্ধব সরকার।শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সাহসিকতার সাথে সম্পাদন করেছে। শিক্ষা খাতে বাজেটে সর্বাধিক বরাদ্ধ, ২৬হাজার প্রাইমারী জাতীয়করন, ২ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিও, ৩০৪ কলেজ সরকারি, ৪শতধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি, শিক্ষকদের পে-স্কেল, ইনক্রিমেন্ট, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদয়ালয় স্থাপনসহ আরো বহু যুগান্তকারী কাজ করেছে। শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন, এমপিও নীতিমালা নিয়ে কাজ চলমান। এমন শিক্ষাবান্ধব সরকার নিশ্চয় শিক্ষকদের কল্যানে একটি বিষেশায়িত ব্যাংক হিসেবে শিক্ষা ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নেবেন এ বিশ্বাস আমরা রাখতে পারি।

-লেখক
বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক

সম্পাদকঃ দেশালোক ডটকম