দ্বিতীয় মৃত্যুবা‌র্ষিকীতে মা‌য়ের স্মৃ‌তিচারণ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২০

মো: রিয়াজ উল্যাহ: নূরজাহান বেগম, ডাক নাম রেনু। অজোপাড়া গ্রা‌মে তাঁর জন্ম । অল্প বয়সে রামগতি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড সবুজ গ্রামের স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান ওবায়দুল হক এর সা‌থে বি‌য়ে হয় রেনুর । বে‌শি পড়াশোনা করার সুযোগ না পেলেও  খুব বৃ‌দ্ধিমতী ছি‌লেন তিনি। যখন ৬ষ্ঠ সন্তা‌নের বয়স ৬ মাস  তখন অর্থাৎ ১৯৯৩ সা‌লে মারা যান তাঁর স্বামী ওবায়দুল হক। নুরজাহানের মাথায় নে‌মে আ‌সে কা‌লো অন্ধকার । তাঁর জীব‌নে নতুন অধ্যায় নে‌মে আ‌সে অভাব অনট‌নের। তখন বড় সন্তা‌নের বয়স মাত্র ১৪ বছর। ৮ম কিংবা ৯ম শ্রে‌ণির ছাত্র ফি‌রোজ আলম।

স্বচ্ছল প‌রিবা‌রে বি‌য়ে দি‌লেও স্বামীর মৃত্যু‌তে স্বচ্ছলতা কে‌ড়ে নেয় কা‌ছের মানুষ গু‌লো। এমন‌কি ভি‌টে মা‌টি ছে‌ড়ে আস‌তে পরি‌স্থি‌তিতে বাধ্য হন। সাথে নিয়ে আসতে হয় ৬ সন্তান‌কে অর্থাৎ ২ ছে‌লে এবং ৪ মে‌য়ে‌কে ও। বই খাতা ফে‌লে নাবালক দুই ছে‌লে ৭ সদ‌স্যের সংসা‌রে হাল ধ‌রেন। চার মে‌য়ে‌কে কুরআন শিক্ষা অর্থাৎ ইসলামী শিক্ষার পাশাপা‌শি একা‌ডে‌মিক শিক্ষায় শি‌ক্ষিত ক‌রেন। সব মে‌য়ে‌কে সবোর্চ্চ মাষ্টার্স (এম.এ)  পাশ করাতে পারলেও ছে‌লে‌দের‌কে পড়াশুনা বে‌শি করাতে পারেননি।প্রত্যেক সন্তান‌কে মানুষ ক‌রেন নিজস্ব কৌশ‌লি সরলতা, বু‌দ্ধিমর্তা, প্রজ্ঞা দি‌য়ে। এমন‌কি নি‌জের সন্তান‌দের‌কে কুরআন শিক্ষার পাশাপা‌শি ক‌য়েকটি গ্রা‌মের ছে‌লে মে‌য়ে‌কে কুরআন শিক্ষা দি‌য়ে যান নূরজাহান বেগম।

চার বো‌নের পিতৃসমতুল্য দুই ভাই এর হাঁড় ভাঙ্গা প‌রিশ্র‌মে আর মা‌য়ের করুণ চাওনি নিয়ে চার মে‌য়ে‌কে বি‌য়ে দেন।এ মহিয়সি নারীর ছোট জামাতা হিসা‌বে আমি মো: রিয়াজ উল্যাহ গর্বিত। খুব বে‌শি দিন পাই‌নি শ্বাশুরী মা হি‌সে‌বে তাঁকে। মাত্র ৯মাসের মত পাই সানিন্ধ্য। অর্থাৎ ২৯ ন‌ভেম্বর ২০১৮ ইং তা‌রি‌খে ছয় সন্তান এবং জামাতাসহ সকলকে ছেড়ে পৃ‌থিবী‌ থে‌কে বিদায় নেন নুরজাহান বেগম।

ফে‌রেশতার ম‌তো মাকে দেখার জ‌ন্য সুদূর ওমান থে‌কে সকল প্র‌তিবন্ধকতা ফে‌লে দুই ছে‌লে চ‌লে আসেন। ছোট ছে‌লে মিজানুর রহমান দীর্ঘ ৭ বছর পর আসলেও কপা‌লে জুট‌লো না ক‌ফি‌নে দুই‌দিন রাখার পরও এক‌টি বার দেখার। হয়ত মায়ের উপর অ‌নেক রাগ কিংবা অ‌ভিমান ক‌রে আ‌ছে ছোট ছে‌লে‌টি।

ছোট্ট বা‌ড়ি‌টির সাম‌নে রাস্তার পা‌শে চার দেয়া‌লের মধ্যে শু‌য়ে থাকা মা‌য়ের। বড়ই আফ‌সোস! আ‌ক্ষেপ! মা তার হাজারো দা‌য়িত্ব পালন করে গে‌লেও শুধুমাত্র ‌ছোট ছে‌লের বৌ দেখে যে‌তে পা‌রেন‌নি তিনি। হাজা‌রো দুঃখ ক‌ষ্টের মা‌ঝে হা‌সিমাখা মুখ খানা মাত্র ৯ মাসে দেখা আমার জীব‌নে শ্রেষ্ট মানুষ। হয়ত মা‌য়ের অভাব পুরণ করার জ‌ন্যে তারই মৃত্যুর পরপরই ক‌নিষ্ট কন্যা শি‌রিনে আক্তার এর গ‌র্ভে জন্ম দেওয়া সন্তা‌নের নাম রাখা হয় “সা‌বিহা নূরজাহান”।

২৯ ই ন‌ভেম্বর,  তাঁর ২য় মৃত্যুবা‌র্ষিকী। এই দি‌নে আমরা তার সন্তানরা এবং আত্মীয়-স্বজন মহান রব্বুল আলা‌মি‌নের কাছে ফ‌রিয়াদ! আল্লাহ যেন আমা‌দের মায়ের সকল গুনা মাফ ক‌রে উনা‌কে বে‌হেস্ত ন‌সিব করুক। বে‌হেস্ত ন‌সিব করুক পৃথিবীর সকল মা’ কে –আমিন।

লেখক: একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।