বিজয়ের মাস শুরু: প্রত্যাশা সুন্দর স্বদেশ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:০৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২০

দেশালোক: আজ ১ ডিসেম্বর। মহান বিজয়ের মাস শুরু। পাকিস্তানিদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালিরা। ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হওয়ায় বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় এই মাস। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয় পুরো মাসটি।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে অনন্য গৌরবময় ডিসেম্বরে বিজয় অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত। পশ্চিম পকিস্তানের সামরিক জান্তাদের শোষণ-বঞ্চনা এবং বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার হয়ে আসছিল বাংলার মানুষ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দেন বাংলার স্বাধীনতার।

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ১৮ মিনিটের তার এই কালজয়ী ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠিত হতে থাকে বাংলার মানুষ।

প্রতিবাদী বাঙালিকে দমাতে পাকিস্তান বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানে চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। ‘অপারেশ সার্চ লাইট’ নামে পরিচালিত ওই অভিযানে নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরপরই রাতের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে।

স্বাধীনতার বিজয়ের ঠিক দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনা বিধুর একটি দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন ঠিক সুনিশ্চিত তখনই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে নির্মমভাবে হত্যা করে।

দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা হাতে নেয় পাকবাহিনী। এই হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এক বর্বর ঘটনা যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ও নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। ওই দিন বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও আপোষহীন নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ মা-বোনের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

মাসের প্রথম দিনটি মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে পুরো মাস উদযাপিত হবে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান।

বিজয়ের মাসে আমরা প্রত্যাশা করি একটি শোষন বৈষম্যহীন সুন্দর স্বদেশ। একাত্তরের সংগ্রামী চেতনায় হোক জঙ্গীবাদ এ সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।