চিন্তার স্বাধীনতা ও বাকরুদ্ধতা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২০

মারজাহান আক্তার: চিন্তা করার স্বাধীনতা জন্ম মাত্রই প্রত্যেক প্রাণীর অধিকার হলেও সেই চিন্তা স্বাধীন ভাবে প্রকাশ করবার ক্ষমতা শুধু মানুষেরই আছে। অর্থ্যাৎ শুধু মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে পারে না।

একজন শিশু যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন সে তার পরিবারের সংস্পর্শে থেকে ধীরে ধীরে কথা বলতে শিখে সেই সাথে তার মধ্যে চিন্তারও বিকাশ ঘটতে থাকে যা আমরা তার আচরণ দেখে বুঝতে পারি। বড় হতে হতে পরিবার, পরিবেশ, খেলার সাথী, সহপাঠী প্রভৃতি ব্যাক্তির চিন্তার জগৎ কে প্রসারিত করে। ভালো পরিবেশ পেলে ভালো চিন্তার অধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে আর খারাপ পরিবেশ পেলে বেশির ভাগ খারাপ চিন্তার অধিকারী হলেও সেখানে হতে অল্প সংখ্যক মানুষ হলেও ভালো চিন্তার অধিকারী হয়।

চিন্তার স্বাধীনতা ব্যাক্তিকে যেমন ভালো মানুষে পরিণত করতে পারে তেমনি খারাপ মানুষেও পরিণত করতে পারে এমনকি বিকৃত চিন্তার (হাসপাতালের মর্গে মৃত তরুণীদের সাথে মুন্নার যৌনতায় লিপ্ত হওয়া (সময়নিউজ. ২০/১১/২০) এবং মানুষ কর্তৃক সকল ধরনের অপরাধ করা) অধিকারী করে তোলে। যেমন- বাংলাদেশ একটি অনুন্নত দেশ এদেশের মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা মাত্রাতিরিক্ত বেশি বলে অপরাধ করা, নিয়ম-নীতি না মানার হার অত্যাধিক যা একটা দেশের জন্য কখনোই কল্যাণকর হতে পারে না। বর্তমানে আমাদের যে সমাজ ব্যবস্থা চলছে সেখানে ভালো চিন্তার মানুষের সংখ্যা অনেক কম যা আমার ক্ষুদ্র পর্যবেক্ষন হতে জানতে পেরেছি। ভালো চিন্তার মানুষ কমে যাওয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে আমি মনে করি চিন্তার অতিরিক্ত স্বাধীনতা। চিন্তার অতিরিক্ত স্বাধীনতা খারাপ চিন্তার মানুষ গুলোকে আরো খারাপ মানুষে পরিণত করছে। অর্থ্যাৎ আমাদেরকে ভালো মানুষ তৈরি না করে খারাপ মানুষে পরিণত করছে বিধায় সমাজস্থ মানুষের মাঝে নীতি, নৈতিকতা কমে গিয়ে অস্থিতিশীলতা বেড়েই চলছে। এতে ভালো চিন্তার মানুষগুলো বাকরুদ্ধ জীবন যাপন করছে কারণ অনিচ্ছা স্বত্তেও খারাপ দেখে প্রতিহত না করতে পেরে সহ্য করতে হচ্ছে বলে।

মানুষের মধ্যকার চিন্তা ভাবনা যখন বিভিন্ন কারনে প্রকাশ করার ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও মানুষ প্রকাশ করতে না পারে তখন তাকে এক ধরনের বাকরুদ্ধতা বলে। যা এক ধরনের থেমে থাকা।

আমার দৃষ্টিতে বাকরুদ্ধতা দুই ধরনের হয়ে থাকে

১. ইচ্ছাকৃত বাকরুদ্ধতা- ব্যাক্তি নিজের, পরিবারের ও সমাজের সম্মান রক্ষার্থে নেতিবাচক কর্মগুলো ইচ্ছে করে লুকায়িত রেখে আত্ন সম্মান বজায় রাখে। এ ধরনের বাকরুদ্ধতা ব্যক্তি,পরিবার ও সমাজে বেশি থাকে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে এ ধরনের বাকরুদ্ধতা বেশি দেখা যায় এর ফলে এ ধরনের মানুষগুলো ডিপ্রেশনে বা মানসিক অবসাদে ভুগে থাকে যা শহর এলাকায় বেশি দেখা যায়।

২. অনিচ্ছাকৃত বাকরুদ্ধতা- ব্যক্তির ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও যখন তা প্রকাশ করা যায় না বা প্রকাশ করলে অনাকাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হয় বা পাবার আশঙ্কা থাকে তখন তাকে থেমে থাকতে হয় বাধ্য হয়ে এই থেমে থাকা অনিচ্ছাকৃত বাকরুদ্ধতা বলা যায়। এ ধরনের বাকরুদ্ধতা ব্যক্তি বিশেষে কম হলেও সামষ্টিক ভাবে বেশি দেখা যায় অর্থ্যাৎ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে এ ধরনের বাকরুদ্ধতা বেশি দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সম্প্রতি দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে ফেসবুকে শিক্ষকদের এ ধরনের কোন পোস্ট শেয়ার, লাইক না করতে বা থামিয়ে দিতে শিক্ষকদের সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহারের সর্তকতা মনে করিয়ে দেয়া, কারফিউ জারি করা ইত্যাদি। এ ধরনের বাকরুদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারন হলো ভয় পাওয়া, ক্ষতির আশংকা থাকা ইত্যাদি। কেন ভয় পায় ও কি ক্ষতির আশংকা তা আপনাদের নিশ্চয়ই অজানা নয়, তাই না?

যাই হোক চিন্তার মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা যেমন সঠিক না তেমনি ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় যেকোনো কারনে বাকরুদ্ধ থাকা মানুষগুলো ভালো কাজ করে নিজেরা যেন ভালো থাকে অন্যদেরকে ভালো রাখে।

লেখক: ক্ষুদে সমাজ বিজ্ঞানী ও এমফিল গবেষক।