১২৬ ভোটের তহশীলদার বাড়িঃ অবহেলায় দুই যুগ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২০

দেশালোকঃ রামগতি পৌরসভার ০৯নং ওয়ার্ডে সবচেয়ে বড় বাড়ি আসলাম তহশীলদার বাড়ি। এ একটি বাড়িতেই আছে একশো ছাব্বিশ ভোট! এর মধ্যে তিন জন বিদেশে অবস্থান করছে। বারোজন ভোটার পৌর এলাকার বাহিরে থাকছেন।

পৌরসভার গতো তিনটি নির্বাচনে এ বৃহৎ বাড়িটির ভোট কাউন্সিলর নির্বাচনে নিয়ামক ভুমিকা পালন করে আসছে। এ বাড়ির ভোটেই নির্বাচিত হচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। মেয়র নির্বাচনেও একশো ছাব্বিশ ভোট বিশেষ ভুমিকা রেখে চলেছে। আসন্ন নির্বাচনেও এ ভোট গুলো ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। তাই সম্ভাব্য সব প্রার্থীদের আনাগোনা বেড়েছে বাড়িটিকে ঘিরে।

এ বাড়িতে প্রায় অর্ধশত পরিবারের স্থায়ী বসবাস। পুরাতন বাড়িটিট চারপাশেই নদী ভাংগন কবলিত বহু পরিবার নতুন করে বসতি স্থাপন করেছে। যার ফলে এ বাড়ির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরিই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে এ বাড়ির প্রায় ত্রিশটি পরিবার বছরের প্রায় তিনমাস পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটান। বিশাল ভোটার সম্পন্ন বাড়িটির ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও পরে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রায় তিন একর জমির এ বিশাল বাড়িটির প্রতি কোন জনপ্রতিনিধি নেক নজরে তাকান নি!

২০০০ সালের প্রথম পৌর নির্বাচনে ৭, ৮ এবং ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচত হন স্বপ্না মাহবুব। তিনি এ তহশীলদার বাড়ির গৃহবধু ছিলেন। তাঁর সময় কালে বাড়ির পশ্চিম দিকের দরজাটিকে তহশীলদার সড়ক হিসেবে নামকরন করেন। সে সময় তিনশো মিটার সড়কে ইট বসানো হয়। পরবর্তী নির্বাচনে পুর্বদিকের দরজাটিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছায়েদল হক সড়ক নামকরন করেন স্থানীয় কাউন্সিলর। তহশীলদার বাড়ির উন্নয়ন বলতে এই-ই।

সাবেক এবং বর্তমান মিলে দু জন মেয়রকে এ বাড়ির দরজাটির (রাস্তা) সংস্কার এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিক লিখিত আবেদন করা হলেও কোন লাভ হয়নি। ভোটের সময় সম্ভাব্য প্রার্থীরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে ভুলে যান।

এ ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি বাড়ির দরজায় ইট বসিয়ে দেন এক সাবেক মেয়র। সে সময়েও এ বাড়ির প্রতি নজর পড়েনি! স্থানীয় কাউন্সিলরদেও এ বাড়ির বিষয়ে নজর পড়েনা কোন এক অজানা কারনে। বাড়ির পুর্বদিকের দরজার দু পাশের পুকুরে মাছ চাষ করায় রাস্তাটি ভেংগে গেছে। বর্তমানে জন চলাচলের অনুপযোগী। বর্ষার তিন মাস গলা পানি থাকে।

পানি নিষ্কাশনের সকল পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিম দিকের রাস্তাটিও পানিবন্দি থাকে। বাড়ির একমাত্র সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা দুর করা গেলে চলাচলের রাস্তা গুলোও সংষ্কার হয়ে যেত।

ইতিপুর্বে এ বাড়ির জন্য বরাদ্ধকৃত বিদ্যুৎ অন্য এক বাড়ির নামে দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে সাবেক এক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। এমনটা না ঘটলে এ বাড়িতে বিদ্যুৎ পেতো আরো বিশ বছর পুর্বে।

অনেক পুরাতন বাড়ি হওয়ায় এ বাড়িতেই বেশ কয়েকটি প্রজন্ম বসবাস করে গেছে! যার ফলে জায়গা জমি ভাগ ভাটোয়ারা সংক্রান্ত কিছু জটিলতা আছে। এ টুকটাক জটিলতাকে একটি মহল আরো উসকে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন বাড়ির একাধিক সদস্য।

আসন্ন পৌর নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাড়ির সকল ভোটার নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে তরুন সদস্যরা। গঠন করা হয়েছে আসলাম তহশীলদার বাড়ি উন্নয়ন সোসাইটি (এটিবি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) নামের সংগঠন। সংগঠনের ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আসন্ন নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের অবহেলার জবাব দেয়া হবে বলে একাত্মতা পোষন করা হয়েছে। এসব এজেন্ডা নিয়ে করা হচ্ছে একাধিক পারিবারিক বৈঠক। সবার মুখেই একই সুর। দীর্ঘ অবহেলার জবাব দেবার এবারই মোক্ষম সুযোগ।

এটিবি’র সমন্বয়ক আফলাতুন মাহমুদ ছোটন দেশালোক ডটকমকে জানান, বাড়ির লোকজনকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি আমরা সফল হবো।

অন্য এক সংগঠক আবুল কালাম বলেন, এ ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি ভোটারের বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও আমরা কারো নজরে পড়িনি! এটা দুঃখজনক। আমরা এবার ভোটে জবাব দেব।

এ বাড়িতে বসবাসরত এক সেনাবাহিনীর সদস্য জানান, আমি নিজেই মেয়রের সাথে একাধিকবার কথা বলছি। লিখিত আবেদন দিয়েছি দরজার রাস্তা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভা থেকে বাজেট দেয়ার জন্য। কিন্তু তাও হয়নি। এবার আর জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আমরা ভুল করবো না।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এ বড় বাড়িটির দুটি প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা এবং রাস্তাটি সংষ্কারের দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশাবাদি বাড়ির সবাই।