দেশের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করেও অন্যায় করা না-করা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১

মারজাহান আক্তার: জন্ম যখন বাংলাদেশে থাকতেও হবে বাংলাদেশে তাহলে এখানে উচ্চ বিলাসী জীবন-যাপন করার চিন্তা কি অন্যায় নয়? কেন বলছি? যেহেতু আপনার দেশই দরিদ্র সেহেতু আপনি বিলাসবহুল জীবন যাপন করবেন কি করে? করাটা অন্যায় নয়? আপনারা জানেন কোন বাবা-মা দরিদ্র হলে তাদের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সন্তানদের বিলাসবহুল জীবন যাপন আমাদের দেশের সমাজ-ব্যবস্থায় অপরাধ কেন অপরাধ তা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। দেশ যখন দরিদ্র তখন সেই দেশে আপনি যদি জন্মগ্রহন করেই পেলেন এবং বাস করতে থাকেন একটা পর্যায়ে এসে আপনার হাতে দুটো অপশন থাকে এক. আপনি যোগ্যতা অনুযায়ী এ দেশের কর্ম ও প্রাপ্যতা মেনে চলবেন যা সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত হবে দুই. রাষ্ট্র যখন আপনাকে আপনার বিলাসী জীবন দিতে পারবেনা তাহলে যেখানে আপনি এরকম জীবন উপভোগ করতে পারবেন সেখানে চলে যাবেন। কিন্তু দরিদ্র দেশে জন্ম নিয়ে সেই দেশে বড় হয়ে যখন দেশের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ আসে তখন নিজের বিলাসিতা ও অতিরিক্ত ভোগের জন্য সকল ধরনের অন্যায় কাজ করে অন্যায়ের চক্রবৃদ্ধি করে চলবেন তা কি করে হয়? অথচ আমার দেশে তাই হচ্ছে। দরিদ্র দেশেই যখন থাকছেন তখন দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আরোও বেশি প্রাপ্তির জন্য নিজে অন্যায় করছেন, বাকিদের অন্যায় করতে বাধ্য করাচ্ছেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের যিন বা রক্তের মধ্যে ‘অন্যায় করার বীজ বপন করে দিয়েছেন বা দিচ্ছেন’ (যিন বা রক্তের টানে বড় হয়ে এরাও অন্যায় করবে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই কেননা ভালো যিন নিয়ে জন্ম নিয়ার পরও সঙ্গদোষে ও বদঅভ্যাস গত কারনে মানুষ যেখানে অন্যায় করে চলছে,চলে সেখানে যিন বা রক্তে অন্যায়ের বীজ বোনা থাকলে আপনারাই বুঝেন…) এতো অন্যায় (দেশ ও দশের ক্ষতি) করার দুঃসাহস আপনাদের কোথা থেকে আসে বলতে পারেন?

মানুষের গড়ন একি হলেও চিন্তায়,চেতনায়,মননে, উচ্চতায়, বর্নে যেমন মানুষে মানুষে ভিন্নতা রয়েছে তেমনি ভিন্নতা রয়েছে জীবন ব্যবস্থায় তাই জীবন হয় বৈচিত্র্যময়। জীবন বৈচিত্র্যময় বলে বৈচিত্রতা দেখে যায় কর্মে যার থেকে উদ্ভব ঘটে বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশার। পেশা হল এমন এক ধরনের কাজ যার জন্য প্রাতিস্ঠানিক শিক্ষা, প্রশিক্ষন তথা দক্ষতা( নির্দিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়া, প্রশিক্ষন, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির মাধ্যমে) আবশ্যক। বৃত্তি হল এমন এক ধরনের কাজ যা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রশিক্ষন, দক্ষতা কোনটারই প্রয়োজন নেই শুধুমাত্র ব্যাক্তির মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা ও ইচ্ছাই যথেষ্ট। আর বিভিন্ন বৃত্তি ও পেশার সংমিশ্রণের নামই জীবন যা আদিকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত চলমান রয়েছে। ব্যক্তি মাত্রই তাকে কোন কোন কাজ এমনকি জীবনের একটা পর্যায়ে তাকে সুনির্দিষ্ট কোন পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়েই জীবন অতিবাহিত করতে হয়। এই জীবন চালিয়ে নিতে গেলে যে কর্মগুলোর সাথে মানুষেকে সংশ্লিষ্ট হতে হয় তাতে এসব কর্মের মধ্যে বর্তমানে দেখা যায় নৈতিক মূল্যবোধহীনতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নারীও শিশু নিরাপত্তাহীনতা, লুটপাটসহ অসংখ্য বিষয়ে অসংগতি । এই অসংগতিগুলো বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে (সংসদে ফরহান রুমিনের ১৫ মিনিটের বক্তব্য থেকে বুঝা যায়) বলে সমাজের স্থিতিশীলতা বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। তাই কথা বলতে গেলেই মনে হয় এগুলো এড়িয়ে অন্য যেকোনো কথা বলাই বৃথা । আপনারা হয়ত বলবেন এই সব প্রসঙ্গে কথা বললেই বা কি হবে? কিছু হবে না বা কিছু করতে পারব না জানি কিন্তু অন্যায়কে অন্যায় বলতে তো পারব? ( যা বলা একজন মুসলমান হিসেবে আমার ঈমানি দায়িত্ব) না তাও পারব না? নাকি তা বলা হতেও বিরত থাকতে হবে? তবে এটা নিশ্চিত পরিস্থিতি যখন থামিয়ে দিবে তখন আর বলা হবে না।

ভ্রুন এর বৃদ্ধি হতে শুরু করে মৃত্যু অবদি সবকিছুই একটা পরিপূর্ণ নিয়মের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হয় বলে মানবজীবনের সকল কাজ তথা কর্মস্থলের সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে আর এই নিয়মের কারনে বাকি সকলেই কল্যাণের ভাগিদার হয়। জীবন চালিয়ে নিতে বাংলাদেশে যে পেশাগুলো রয়েছে সেসব পেশার মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা হলো ‘সরকারি চাকরি’ যেখানে নিয়োগ পায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা। সরকারি চাকরির এই পেশায় রয়েছে সুনির্দিষ্ট কতগুলো নৈতিক নিয়ম আর এই নিয়মের কারনে আম-জনতা সকলে কল্যানের ভাগিদার হয় কারোর ক্ষতি হয় না। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি কাগজে কলমে এই নৈতিক নিয়ম থাকলেও এসব নৈতিক নিয়ম মানছেন না সরকারি কর্মস্থল ও সরকারের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষতদের দ্বারা এসব সুক্ষ্ম অনৈতিক বা অন্যায় কাজের প্রমান একেবারে ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে বলে হাজারো অন্যায় করার পরও তারা সবসময় প্রমান করতে সক্ষম হচ্ছেন তারা স্বচ্ছ, তারা কোন অনিয়ম বা অন্যায় করছেন না।

যারা এমন কাজগুলো করে চলছেন তাদের কাছে আমি জানতে চাই ‘ক্ষনস্থায়ী (স্বল্প বেঁচে থাকা জীবন) জীবনে’ অন্যায়ভাবে পেতে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগ করতে আপনাদের চাওয়া এত বেশি কেন হয়ে থাকে? যার জন্য আপনারা যেকোন অন্যায় করতে দ্বিধা করেন না। আপনাদের আমি মনে করিয়ে দিতে চাই সরকার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ডাবল বেতন স্কেল ঘোষনা করেছিলেন(০১-০৬-২০১৫) সালে তারপর থেকে বাংলাদেশের সকল সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী ডাবল স্কেলে শুধু বেতন পাচ্ছে তা নয়। সাথে ডজনেরও বেশি সরকারি সুবিধা ভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন যেমন- প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট প্রমোশন, হাউজ রেন্ট, পরিবহন ভাতা, মেডিকেল ভাতা, সন্তানদের জন্য বিভিন্ন ভাতা, গ্রেচুয়েটি ভাতা, কল্যাণ ভাতা, ছুটি ভাতা, এককালীন ভাতা, পেনশন ভাতা ইত্যাদি। এতসব সুযোগ থাকার কারণে সরকারি চাকরিকে সোনার হরিণ বলা হয় এটা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। এটাও নিশ্চয়ই জানেন এদের এই টাকা আমার আপনার টাকা যার অধিকাংশই আসে দরিদ্র, নিন্মবিত্ত, মধ্যবিত্তদের কাছ থেকে। আমার আপনার টাকা সরকার এই সরকারি চাকরিজীবিদের কেন দিচ্ছে জানেন তো ? দিচ্ছে দেশটাকে স্বচ্ছ কর্মের মাধ্যমে স্বচল রেখে চালিয়ে নেয়ার জন্য যাতে রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষ সমান সুখের ভাগিদার হতে পারে কেউ বাদ না পড়ে। একটি রাষ্ট্রে মানব জীবনের অস্তিত্ব থাকলে তা সকলের কর্মের মাধ্যমে চালিয়ে নিতে হয় কারন হিসেবে আমি মনে করছি, মানব জীবনের সকল অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনগুলোর যোগান ব্যক্তি নিজে একা কখনই দিতে পারে না ।

যার জন্য এই কথাগুলো বলা তা হলো সরকারি কর্মস্থলগুলো ঘুস,অনিয়ম আর দুর্নীতি,লুটপাটের সবচেয়ে বড় আকড়া। এখানে ভালো মানুষের অস্তিত্ব এত নগন্য যে আপনার মনেই হবে নিয়ম মানার মানুষ বা ভালো মানুষ একেবারে নেই। কিন্তু এরকম টা কেন হচ্ছে? কারা সরকারি চাকরি করছে জানেন তো? তারা যারা শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত, এরা সোনার হরিণ পাওয়া। তাহলে স্বভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে এদের বিবেকবোধ এত নোংরা কেন? এরা রাষ্ট্র কর্তৃক কাজের নিয়মের তোয়াক্কা করে না কেন? এরা জবাবদিহিতা ও শাস্তির আওতায় আসে না কেন? শাস্তির আওতায় আসেনা বলে একটি প্রবাদ চালু আছে হাজারো অন্যায় করলেও ‘সরকারি চাকরি হিচা দি হিডলেও যায় না’ অর্থ্যাৎ সরকারি চাকরি হতে যেমন কষ্ট তেমনি যেতেও সময় লাগে। আর এই সুযোগটারই যারা যতটা অপব্যবহার করে তারা তত বেশি সমাজের নোংরা ও অন্যায়কারী ব্যক্তি এদেরকে শিক্ষিত উচ্চ শিক্ষিত মানুষ না বলে জানোয়ার বা পশু বললেও গুনা হবে না বলে আমি মনে করি।

দেশের শিক্ষিত উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণীর মানুষেরা সরকারি চাকরির জায়গাটা দখল করে নেয়। ‘যারা তাদের উচ্চ বিবেকবোধ দ্বারা ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করে অন্যায়ের সাথে কোন ভাবে আপোষ না করা কারী শ্রেণী হওয়ার কথা ছিল’ তাদের কাছ থেকে আম-জনতার হয়রানি ছাড়া, স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে, বিশুদ্ধ সেবা পাওয়ার কথা ছিল। আম জনতার পরিপূর্ণ সেবা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র দেশের এই শিক্ষিত উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণিকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে তাদের জীবনের সমগ্র মৌলিক প্রয়োজন পূরনের দায়িত্ব নিয়ে থাকে যাকে আমরা সরকারি চাকরি করা বলি। যে রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিল নিজ নিজ চেয়ারে বসে তারা তাঁরই নির্দেশকে অমান্য করে তাকেই বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে। আমি বুঝি না এতবড় দুঃসাহস এদের আসে কোথা থেকে? কে বা কারা এদের এসব দুঃসাহসিক অন্যায় কাজের মদদ দাতা? এদের অন্যায় কাজের জয়জয়কার ধ্বনি বন্ধ হবে না কোনদিন? কে তা বন্ধ করবে? কবে করবে? বলতে পারেন আপনারা… আমি বলতে চাই দরিদ্র দেশে যখন থাকবেন তাহলে বিলাসিতা ও ভোগের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের কথা ভুলে গিয়ে রাষ্ট্র যা নৈতিকভাবে দিচ্ছে তাতে সন্তুষ্ট থাকেন আরো বেশি নৈতিকভাবে পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দরিদ্র দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রাপ্তির পর অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের জন্য সকল ধরনের অনৈতিক বা অন্যায় কাজ করা থেকে দয়া করে নিজে বিরত থাকুন অন্যদের বিরত থাকতে উৎসাহিত করুন। আর কোন অন্যায় করবেন না এত অন্যায় আল্লাহ সহ্য করবেন না ধ্বংস করে দিবেন।

 

লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী ও এমফিল গবেষক, নোয়াখালী