কোভিড-১৯ এ শিশুর সামাজিকীকরন ও শিক্ষা Sarwar Sarwar Miran প্রকাশিত: ৭:০৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২১ মারজান আক্তার: সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারনে ক্ষতিতে জর্জরিত। কোভিড-১৯ ভাইরাসে প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কম রয়েছে ৫৬% এছাড়াও মারাত্বক অসুস্থ হওয়া বা মারা যাওয়ার আশংকাও কম রয়েছে (বিবিসি নিউজ. ১৭ই আগষ্ট, ২০২০)। শিশুরা এই ভাইরাসে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতির অংশ হিসেবে জর্জরিত শিশুর সামাজীকীকরণ প্রক্রিয়া ও শিক্ষার দক্ষতা অর্জন। আপনারা জানেন ২০১৯ সালের শেষর দিকে চীনে প্রথম এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মানুষ চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে চীনের বাহিরে থাইল্যান্ডে ১৩ই জানুয়ারিতে এই ভাইরাসের আক্রান্ত মানুষ চিহ্নিত করা হয়। হু ফেব্রয়ারিতে এই ভাইরাসের নাম দেন কোভিট-১৯। বাংলাদেশ সরকার ৮ই মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করনের কথা জানান। তারপর মার্চ মাসের ১৮ তারিখ হতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন। পর্যায় ক্রমে যখন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন সরকার সকলকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে সুরক্ষা দিতে সাত দফায় ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন এবং সকল জনগণকে এই ছুটির আওতায়(যদি নানা কষ্ট ও দুর্ভোগে অতিক্রান্ত করেছে সবাই বিশেষ করে খেটে খাওয়া দৈনিক শ্রম মজুরেরা) রেখেছেন। ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি থাকার পর ৩১ শে মে হতে আস্তে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খুলে দেয়ার পর মানুষ তাদের কর্মস্থল গুলোতে প্রবেশ করলেও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন সরকার। পাশাপাশি পরিবার গুলো শিশু বা সন্তানের নিরাপত্তার জন্যও (বিশেষত শহরগুলোতে) গৃহবন্দী, বাহিরে অবাধ মেলামেশা হতে দূরে রেখেছেন যা মানসিক বিকাশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, করছে। বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ এদেশের বেশির ভাগ মানুষ অর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। এছাড়া শিক্ষা, সুশিক্ষা, সচেতনতা, নিয়ম মানা হার এদেশের মানুষের মধ্যে অনেক কম যা নেই বললেও চলে। দীর্ঘ বন্ধ থাকাকালীন সময়ে সরকার শিক্ষার্থীদের পড়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে (সংসদ টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে) পাঠদান ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি অনলাইন ক্লাস, এফবিআইডিতে ক্লাস আপলোড সহ বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করলেও এর ফলাফল বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে কারন এ পদ্ধতি গুলো দরিদ্র দেশের সকল শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাষ্ট্রের ছিল না । পরবর্তীতে সরকার এ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে ২০২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উর্ত্তীন হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। একটু দেরি হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছেন (যদিও ১০ বছর পর নতুন কারিকুলামের আলোকে পাঠদান সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হয় কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারনে মার্চ হতে বন্ধ থাকার কারনে তা সম্ভব হয় নি) এমনকি ২০২১ সালের মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা থাকলেও সংক্রমনের উর্ধ্ব গতির কারনে আবারও ছুটি বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার সাথে সংশ্লিষ্ট রাখতে এ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের আওতায় এসে তা শুরু করে দিয়েছেন যা তৃতীয় সপ্তাহে এসে গেছে। বলতে ছিলাম এত সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও আমি মনে করি শিশুর যথাযথ সামাজিকীকরণ ও শিক্ষার প্রসারতা-দক্ষতা ব্যাহত হয়েছে, হচ্ছে। কেনন শিশুর বা শিক্ষার্থীর সামাজিকীকরনের অন্যতম দুটি মাধ্যম হচ্ছে খেলার সাথী বা সহপাঠী ও বিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । এগুলো মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শুধু সামাজিকীকরণই সম্পন্ন হয় তা নয় শিক্ষার আগ্রহ বাড়ে আনন্দের সাথে প্রতিযোগিতা অংশ নিয়ে নিজের চিন্তার জ্ঞানের পরিধিকে বিকশিত করে থাকে যা একজন শিশু বা শিক্ষার্থীকে ঘরে বসিয়ে হাজারো চেষ্টা করে করা সম্ভব পর নয় বলে আমি মনে করছি। গত মার্চ এর ১৮ তারিখ হতে আজকের দিন পর্যন্ত ১২ মাসের অধিক সময় বন্ধ। এই বন্ধের কারনে তাদেরকে স্বাভাবিক সামাজিকীকরণ, মানসিক বিকাশ ও শিক্ষা গ্রহন ও অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষার সাথে সম্পর্ক নেই, অনেক বখাটে হয়ে গেছে, অনেকে পিছিয়ে গেছে আর পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা আরও পিছিয়ে গেছে, অনেকর আচরণ রুক্ষ হওয়া সহ ইত্যাদি অনেক সমস্যার কথা শুনা যায় যা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীর সুরক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণেই হয়েছে বলে আমি মনে করছি। হবে না কেন যার স্বাভাবিক বিকাশ যেভাবে হওয়া উচিত সেটা যদি সেভাবে না হয়ে বাঁধাগ্রস্ত হয় তাহলে যা হওয়ার কথা তাই এখন হচ্ছে। এগুলো চলার পথে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অন্যান্য শিক্ষদের সাথে আলাপ কালে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি খুব সহজেই বুঝতে পারছি। কিন্তু পরিস্থিতির কারনে শুধু শুনে থাকতে পারি কিছু করতে পারি না তবে এটা মনে করছি আগে তো সুস্থ থাকবে, বাঁচবে আর বেঁচে থকলে তো জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন পড়বে অন্যথায় তো নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বিশেষ যত্ননেয়ার মাধ্যমে তাদের দুটো বিষয়ের ক্ষতি পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে সকলকে কারন বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে সংগ্রাম করে টিকে থাকার জন্য ক্ষতি পূরন করার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আবশ্যক।এছাড়া এরাই ভবিষ্যতের দেশ গড়ার কারিগরি হবে তাই তাদের শিক্ষায় অভাব থাকা মানে ভবিষ্যতে দেশ ও দশের ক্ষতি। লেখক: ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী ও এমফিল গবেষক নোয়াখালী SHARES শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়: মারজান আক্তার