চিনে রাখুন বেঁচে ফিরলে কাজে দেবে

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:১৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২১

সারোয়ার মিরন: আলীবাবা’র জ্যাক মা এলো বাংলাদেশের এ সংকটকালীন সময়ে মানুষ মানবতার শ্লোগান নিয়ে। দিলেন বিপুল সংখ্যক চিকিৎসা সরঞ্জাম। বুয়েট এর সাবেক কিছু শিক্ষার্থী এবং একজন উদ্যোক্তাও এলো এ বিপদে। উনারা দায়িত্ব নিলেন চিকিত্সকদের নিরাপদ পোশাকের দায়িত্ব। ব্যক্তি পর্যায়ে এ দুর্যোগে এগিয়ে এসেছেন এমন বেশ কয়েকজন মহান মানুষের নাম এখন আমরা বলতে পারি।

 

বিশ্বময় এ করোনা সংকটে বিল গেটস্ সায় দিলো। পাকিস্তানে নেমেছে ‘আফ্রিদি ফাউন্ডেশন’। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নিওনেল মেসিও ঘরে বসে থাকতে পারেন নি মানবতার তাড়নায়। রোনালদো নিজ বাড়িকেই বানালেন হাসপাতাল। মেসি একদিনে দান করলেন নয় কোটি। চীন, জাপান তো দেশ হিসেবে সব চাইতে এগিয়ে। বিশ্বময় যে কোন সংকটে এ দুটো দেশের সহযোগিতা চোখ ধাঁধানো।

 

বিশ্বব্যাপী সেলিব্রেটি ও ধনকুবেররা বিবেকের তাড়নায় বসে থাকতে পারেন নি। অবাক করা বিষয় হলো বসে থেকেছে কেবল এ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ মানচিত্রে। কথিত সব সেলিব্রেটি ও ধনকুবেররা লুকিয়েছে গর্ত সমেত। দু একজন তো ফরমায়েশি ভিড়িও বার্তা দিয়ে মহান দায়িত্ব কর্ম সম্পাদন করেছেন!

 

দেশের সুখের সময়ে দু হাতে, দু পথে মাল কামানো মাল্টিলেবেল ব্যবসায়ী ধনকুবেররা করোনায় নিঃশেষ প্রায়। স্বেচ্চায় কোয়ারিন্টিনে অবস্থান করছেন না জানি আবার কেউ দান দক্ষিনা চেয়ে বসে এ ভয়ে। ইউনিলিভার ৭৫টাকা হ্যান্ডওয়াশ পনের দিনের ব্যবধানে দাম বাড়িয়ে করেছে ১০০ টাকা। মুল্য বৃদ্ধি করেও অন্যান্যদের মতো বাজারে সাপ্লাইও দিচ্ছে না। দেখাচ্ছে নানান অজুহাত। এ অবস্থা প্রায় সমগোত্রীয় স্কয়ার, বেক্সিমকো, এসিআই, কোহিনুর, রেকিট বেনকিজারসহ সকল কোম্পানিরই।

 

মোবাইল সীম অপারেটর কোম্পানী। বরাবরই যাদের আমি বৃটিশ বেনিয়া বলেই সম্মোধন করতাম। এখনো করি। বাংলাদেশে টেলিটক বাদে রয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠান- গ্রামীনফোন, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল। টেলিটক রাষ্ট্রীয় হলেও মরে মরে বেঁচে আছে। বাকিরা সবাই আঙ্গুল ফুলে বট গাছ। কোথায় এসব বেনিয়া সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর মানুষ মানবিকতা। দিনরাত এলোমেলো এসএমএস, কলে ফাও বকতে পারলেও প্রয়োজনের এ সময়ে না কমিয়েছে কলরেট, না কমলো নেট প্যাকেজের দাম। দেখা যায়নি নিজস্ব কোন উদ্যোগ কিংবা সরকারি কোষাগারেও!

 

এনজিওগুলো ঋনের ছয় মাসের কিস্তি বকেয়া রাখার সুযোগ দিয়েছে। নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ যোগ্য। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থা গুলো মাঠে আছে। পল্লী বিদ্যুত, ওয়াসা, ডেসকো ইত্যাদি নাগরিক পরিসেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান গুলোও নির্দিষ্ট সময়ে সারচার্জ ও জরিমানা মওকুফ ঘোষনা করেছে! ব্যাংকিং সেবাও সরকারি চাপে দু তিন ঘন্টা কার্যক্রম চালু রাখতে বাধ্য হচ্ছে। বেশ কয়েকজন বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াদের বাসা ভাড়া এক দু মাসের জন্য মওকুফ করেছেন। অন্যান্য শ্রেনি পেশার বাকিরা গেল কই। হারিকেন জ্বালিয়ে খোঁজ নেয়া সময়ের দাবি।

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং সরকারী চাকুরীজীবিরা বন্ধ পেলেও অবস্থান করতে হবে নিজ নিজ কর্মস্থলে। ডাক্তার, নার্স, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক বাহিনী, সংবাদকর্মী, আধা সামরিক বাহিনী, ফায়ার বিগ্রেড…. কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদের তালিকায়। বাকী পেশাজীবীরা!!?? গায়ক, নায়ক, ক্রিকেটার, ফুটবলার, সেলিব্রেটি, মটিভেশনাল স্পিকার, নোবেল লরিয়েট, আইনজীবী, টকশোবিদ, বুদ্ধিজীবী…. উনারা কই থাকছেন এখন?

 

রাজনীতিবিদদের নিয়ে তো পুরো কলামই লেখা যায়। আমার এলাকার পরগাছা ব্যানারে নির্বাচিত সাংসদ তো সেলফ্ কোয়ারেন্টিনে আছেন নির্বাচনের পর থেকেই। করোনা কালে তো কথাই নেই। সব এলাকার একই চিত্র। সাংসদ, উপজেলা পরিষদ কারোরই খোঁজ নেই। প্রবাসি খুঁজতে ইউপি চেয়ারম্যান মাঠে। গ্রামে বা কাছে এলে না হয় করোনায় ধরবে, তাই বলে ভিডিও বার্তায়ও ভয়। সাহায্য সহযোগিতা তো রাজনৈতিক ধর্মে উপক্ষিত।

 

বিশ্বে তাবদ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তি, সেলিব্রেটিরা একেকজন একেকটা ফাউন্ডেশন চালায়। দেশমাতৃকা তো বটেই বিশ্ব সংকটেও সহযোগিতায় নেমে পড়েন ওরা। আমাদের দেশে সফলরা খোলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এর ব্যবসায়। লাভ আর লাভ। আমাদের প্রথম সারির এক ক্রিকেটারতো দিন কয়েক আগেই বলে বসলেন, করোনায় খেলা বন্ধ হয়ে গেলে খাবো কি!! হায় হায়!

 

করোনা ভাইরাস। আতংকের নাম। মহান আল্লাহ চাহে তো করোনা সংকট একসময় কাটবে ঠিকই। হয়তো এ যাত্রায় মানুষ চিনিয়ে দিয়ে যাবে। বেঁচে থাকলে এসব মর্দে মুজাহিদদের চিনে রাখাটা কাজে দেবে। ভীষন কাজে দেবে যদি আমরা মানুষ চিনতে ভুল না করি।

 

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম