আজাদ উদ্দিন চৌধুরী: ভূমিহীন নেতা থেকে জনমানুষের নেতা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২১

সারোয়ার মিরন: চরগজারিয়ার ভূমিহীন নেতা  থেকে আজাদ উদ্দিন চৌধুরী রুপান্তরিত হয়েছেন জনমানুষের নেতায়। ১৯৫০ সালের ২৫ অক্টেবর লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নে জন্মগ্রহন করেছেন। পিতার নাম হারিছ আহমদ এবং মাতা বেগম আনোয়ারা।

হাতিয়া দ্বীপ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন দুই দুইবার। ২০০২ সালে রামগতি পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান (বর্তমান পদ মেয়র) নির্বাচিত হন বিপুল ভোটে।

বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সাবেক আইনজ্ঞ মরহুম আলহাজ আবদুর চৌধুরীর হাত ধরে আসেন রাজনীতিতে। প্রথমে বিএনপির রাজনীতিতে স্থিত হলেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মরহুম রব চৌধুরীর দল বদলের সাথে সাথে তিনিও যোগ দেন আওয়ামীলীগে। কয়েক বছর পুর্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সদস্য পদ পেলেও ২০২১ সালের প্রথম দিকে রামগতি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

দ্বীপ এলাকা চর আবদুল্যাহ ইউনিয়নের চর গজারিয়ার ভূমিহীন মানুষের সংগঠিত করার মাধ্যমে নেতৃত্বদান শুরু হয় তাঁর। ভূমিহীনদের একাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর উত্থান ঘটে। হয়ে যান ভূমিহীন নেতা। এর পর আজাদ নেতা নামে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। তবে রাজনীতিতে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠিয়ে আনেন মরহুম রব চৌধুরী।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মরহুম আজাদ উদ্দিন চৌধুরী হরিণ প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আলহাজ মো: আবদুল্যাহ (আল মামুন) এর কাছে পরাজিত হন।

২০২১সালের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও ২০১৫সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল মার্কা প্রতিকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বর্তমান মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিনের কাছে হেরে যান।

দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মামলা জটিলতায় নির্বাচন করতে না পারলেও স্ত্রী বেগম রোকেয়া আজাদকে নির্বাচিত করেছেন তিনি। রোকেয়া আজাদ ছিলেন বাংলাদেশে নির্বাচিত দুইজন মহিলা চেয়ারম্যানের একজন।

রামগতি উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষের নন্দিত নেতায় পরিনত হয়েছিলেন মরহুম আজাদ উদ্দিন। অসম্ভব জনপ্রিয়তাই তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা অনুযায়ী প্রায় ৪৪টি মামলার (সাধারন ডায়েরি একটিসহ) আসামি হন তিনি। এর মধ্যে ৩৫টিতেই খালাস পান। নয়টি রয়েছে বিচারাধীন।তাঁর সত্তর বছরের জীবনে বেশ কয়েকবার রাজনৈতিক কারনে কারাবরণ করেন।

মেঘনার ভাঙ্গন কবলিত হয়ে মরহুম রব চৌধুরী রামগতি উপজেলার পূর্বপার্শ্বে শিক্ষাগ্রামে বাড়ি করলে আজাদ উদ্দিন চৌধুরী এ এলাকার নাম আরসি নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেই আরসি নগর ভবনে নিজ বাড়িতে তিনি গত চার দশক ধরে বসবাস করে আসছিলেন।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ উদ্দিন চৌধুরী।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে তিনিও হার মানেন। কোভিড আক্তান্ত হয়ে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল ২০২১ইং ভোর সাড়ে চারটায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যু কারে তাঁর বয়স হয়েছিল সত্তর বছর।

লকডাউন এবং করোনা সংক্রমন ভয় উপেক্ষা করে স্থানীয় আসম আবদুর রব সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাযায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি তাঁর জনপ্রিয়তা প্রকাশ করেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।

মৃত্যুকালে স্ত্রী রোকেয়া আজাদ, দুই ছেলে আরিফ আজাদ এবং এক মেয়ে রেখে গেছেন।

 

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম