মাহে রমজানে ত্রিশ শিক্ষা- ১ম পর্ব

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২১

সারোয়ার মিরন:

পবিত্র রমজান মাস আত্ম-সংযমের মাস। পরিশুদ্ধির মাস। আমল আখলাকের মাস। এ মাসে তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি নিজের চরিত্র গঠনের ট্রেনিং সেশন এ মাহে রমজান। রমজানের বহুমুখি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে উত্তম জীবন গঠনের নিজেকে পরিশুদ্ধ এবং খাঁটি মুমিন হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাই আসুন প্রতি ত্রিশটি রমজানে নিদেনপক্ষে ত্রিশটি শিক্ষা কাজে লাগাই। নিজের ইমানকে শানিত করি।

শিক্ষাঃ ০১.

আসুন যাবতীয় নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহন থেকে বিরত থাকি। কৌতুহলে হলেও মাদককে না বলি। অভ্যাস থাকলে বিড়ি, সিগারেট, পান, জর্দা, গুল ইত্যাদি ত্যাগ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। নেশা জাতীয় দ্রব্যে জড়িতদের সামাজিক ভাবে বয়কট করি। মনে রাখবেন, মাদক কোনভাবেই কোন সমস্যার সমাধান নয়। এটা প্যাশন বা ফ্যাশনও নয়। মাদকে ধ্বংস অনিবার্য। একটি আদর্শ যুব সমাজ গঠনে সচেতন হই।

শিক্ষাঃ ০২.

অযথা কাউকে গালি দিবেন না। এমনকি হাসি কিংবা দুষ্টামির ছলেওনা। গালি গালাজ মন্দ স্বভাব। এতে নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়। এমন কিছু উচ্চারন অযোগ্য শব্দ আছে যেগুলো অাপাতদৃষ্টিতে গালি মনে না হলেও এগুলো মূলত গালিই। (যেমনঃ খাপো, মাচো, কুবা, হাখো, শা, শুবা ইত্যাদি)

শিক্ষাঃ ০৩.

আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর রাখুন। বিপদ আপদে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। নিয়মিত যাতায়াত করুন। পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে নিজ থেকেই ভুমিকা রাখার চেষ্টা করুন। বর্তমান সময়ের বহুমুখী ব্যস্ততা ও সীমাবদ্ধতায় নিকটাত্মীয়দের মাঝে দুরত্ব বেড়েই চলেছে। এ দুরত্ব কমিয়ে আনুন। সমাজ সামাজিকতায় অবদান রাখুন নিজের সাধ ও সাধ্যমত।

শিক্ষাঃ০৪.

কথায় কথায়, কারনে অকারনে মিথ্যা কথা বলা পরিহার করুন। বেশির ভাগ সময়ই আমরা ঠুনকো কারনে মিথ্যে বলি বা ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলি। দেখা যায়, এ মিথ্যে না বললেও আমাদের তেমন কিছু আসতে যেতো না। খামোখায় মিথ্যে বলা!! ঠুঁনকো একটা মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে অআশ্রয় নিতে হয় আরো বড় ধরনের মিথ্যার। কথায় আছে, মিথ্যা সকল পাপের মূল।

শিক্ষাঃ ০৫.

একে অপরকে সালাম দিন। যথা সম্ভব আগে সালাম দেবার অভ্যাস করুন। ফোনালাপের শুরু এবং শেষে সালাম দিন। সালাম বিনিময়ে অহংকার ধ্বংস হয়ে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। পুণ্য তো থাকছেই। ছোট বড় যে কাউকেই সালাম দেয়া যায়। বড় ছোট, অধীনস্ত উর্ধ্বস্তন সবাইকে সালাম দেয়া যায়। সালাম বিনিময়ে কুন্ঠিত বোধ করা অনুচিত। যিনি আগে সালাম দিবেন তিনিই বেশি অহংকারমুক্ত বলে ধরে নেয়া হয়। কেউ সালাম দিলে অবশ্যই এর প্রতি উত্তর করবেন। অর্থাৎ সালামের জবাব দিবেন। সালাম বিনিময়কালীন সময়ে পরস্পরের চোখে চোখ রাখবেন। যথা সম্ভব হাসি খুশি থাকবেন।

শিক্ষাঃ ০৬.

দিনে অন্তত একবেলা সবাই মিলে এক সাথে খাওয়া খান। যৌথ ভাবে এ খাওয়ার আয়োজন করুন। এতে করে পরিবারের সকল সদস্যের সাথে পারিবারিক দুরত্ব লাঘব হবে। দুঃখ সুখ উন্মুক্ত শেয়ার করার সুযোগ হবে। খাওয়ার এ সময়ে পারিবারিক আলাপ আলোচনা, শলা পরামর্শ ইত্যাদি কাজ গুলো সেরে ফেলা যাবে। সৌহার্দ্য এবং আন্তরিকতা আরো বেগবান হবে। বিশেষ করে রাতের খাবারটা পরিবারের সকল সদস্য মিলে একসাথে করার অভ্যাস করুন।

শিক্ষাঃ ০৭.

বাবা-মা এর পর একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বন্ধু বান্ধব। তাই বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হোন। ভালো করে যাচাই বাছাই করে বন্ধু বানান। একজন ভালো বন্ধু আপনার জন্য আয়না সরুপ। সুখ দুঃখের, আনন্দ বেদনার সমান অংশীদার। খারাপ বা মন্দ কাজে উৎসাহদানকারী কখনোই আপনার বন্ধু বা শুভাকাংক্ষী হতে পারেনা।

শিক্ষাঃ০৮.

শশুর বাড়ির অহেতুক রছম জাতীয় জিনিসকে না বলুন। এ যেমন- বৈশাখে আম কাঠাল, রমজানে ইফতার, ঈদে সেমাই চিনি, কুরবানীতে ছাগল খাসি, বিয়েতে অতিরিক্ত পন্য সামগ্রী, যৌতুক, পন ইত্যাদিকে সরাসরি না বলতে শিখুন। বর্তমানের শিক্ষিত তরুন সমাজ চাইলেই বদলে দিতে পারে এ অমানবিক সিস্টেম। কথিত ধনী গোষ্ঠীর বিভিন্ন সময় আদর সোহাগে দেয়া এসব উপটোকেন সময়ক্রমে সামাজিক রছমে পরিনত হয়!! তাই কেউ নতুন কোন রছম চালু করতে গেলেই তাকে সমবেত প্রতিহত করুন। পুরোনো গুলো ধীরে ধীরে বর্জন করার সমুহ চেষ্টা করুন।

শিক্ষাঃ ০৯.

সকল ধরনের কল্যানকর কাজ গুলো ডান হাতে সম্পাদন করুন। যেমন, খাওয়া দাওয়া, হ্যান্ডশেক, দান অনুদান, দেয়া-নেয়া ইত্যাদি। পুন্যের কাজ গুলো করতেও ডান হাত ব্যবহার করুন। এসকল পজেটিভ কাজ গুলোতে বাম হাতের ব্যবহার দৃষ্টিকটু দেখায়। অহংবোধও প্রকাশ করে। ধর্মীয় রীতিনীতিতেও ডান হাত ব্যবহারে জোর দেয়া আছে।  (জন্মগত ভাবে বাম হাতিদের জন্য এ লেখা নয়)।

শিক্ষাঃ ১০.

জীবনের যে কোন পরিস্থিতেই হোক কখনোই মাজার পুজারী হবেন না। পীরের মুরীদও নয়। যে কপাল মসজিদে কিংবা খানায়ে কাবায় একবারের জন্য হলেও সেজদায় অবনত হয়েছে সে কপালে মাজারে সেজদাহ করার ন্যুনতম যৌক্তিকতাও নেই। মাজার ভক্তি কিংবা পীরের আশেকান হওয়া একেবারেই নাজায়েজ কাজ। নিজেও মাজার ও পীর ফকির এড়িয়ে চলুন। অন্যকেও সতর্ক করুন। মাজার নয়, মসজিদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

–চলবে

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম।