পবিত্র মাহে রমজানের ত্রিশ শিক্ষা- পর্ব: ২

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৪:২৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২১

সারোয়ার মিরন:

পবিত্র রমজান মাস আত্ম-সংযমের মাস। পরিশুদ্ধির মাস। আমল আখলাকের মাস। এ মাসে তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি নিজের চরিত্র গঠনের ট্রেনিং সেশন এ মাহে রমজান। রমজানের বহুমুখি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে উত্তম জীবন গঠনের নিজেকে পরিশুদ্ধ এবং খাঁটি মুমিন হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তাই আসুন প্রতি ত্রিশটি রমজানে নিদেনপক্ষে ত্রিশটি শিক্ষা কাজে লাগাই। নিজের ইমানকে শানিত করি। তিন পর্বের ধারাবাহিক লেখার আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

শিক্ষাঃ ১১. আপনার পৃথিবীর সকল কর্মকান্ড হোক বাবা মাকে ঘিরে। আপনার জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো আপনার বাবা মা। জীবিত না থাকলে তাদের জন্য দোয়া করুন। সদকা করুন। বেঁচে থাকলে সর্বোচ্চ সেবা করুন। এক সাথে থাকুন। প্রান উজাড় করে ভালোবাসুন। সব কিছুর উর্ধ্বে রাখুন বাবা মাকে। পৃথিবীর তাবদ বৃদ্ধাশ্রম গুলো বন্ধ হয়ে যাক গ্রাহকের অভাবে- এমন প্রত্যাশায়।

শিক্ষাঃ ১২. যাকাত ফরজ হলে অবশ্যই শরীয়াহ মোতাবেক যাকাত প্রদান করুন। যাকাত প্রদানে শাড়ি লুঙ্গি চাদর ইত্যাদি দেয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। বহুজনকে না দিয়ে স্বল্প সংখ্যক লোককে স্বাবলম্বী করার নীতি গ্রহন করা উচিত। যাকাত বছরের যে কোন সময় দেয়া যায়। তাই রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়না। তবে রমজান মাসে সওয়াবের পরিমান বেশি। যাকাত প্রদানের পক্ষ হিসেবে প্রথমে নিকটাত্মীয়দের বিবেচনা করুন।

শিক্ষাঃ১৩. বাচ্চাদের শুরু থেকেই আদব কেতা, ধর্মীয় এবং নৈতিকতা বিষয়ক ছবক দেয়া জরুরী। বয়সে বড়দেরকে আপনী বলাতে শিখান। গুরুজনদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা করতে উদ্বুদ্ধ করুন। গৃহপরিচিকা কিংবা ভৃত্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করাতে শেখান। মোবাইল থেকে দুরে রাখুন। খেলার ছলেও ওদের সাথে মিথ্যা বলবেন না। ওরা দৃষ্টিকটু কিছু বললে বা করলে শুধরে দিন। বুঝিয়ে বলুন, নিষেধ করুন। বাচ্চারা অনুকরন প্রিয় তাই ওদের সামনে কাজ কর্মে, বলায় চলায় সতর্ক হোন।

শিক্ষাঃ ১৪. প্রতিনিয়তই শালীন পোষাক পরিধান করুন। প্রয়োজনে পোষাক পরিচ্ছদ নির্বাচনে দেশিয় এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোন আমলে নিন। ঢিলে ঢালা পোষাক পরুন। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় মানানসই পোষাক পরাই ভালো। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন পোষাক তৈরি করতে হবে এমনটা নয়, পুরোনো পোষাক নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। বয়স ও ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই পোষাক পরবেন। সম্ভব হলে ব্যবহার করা হয়না সেগুলো দান করুন।

শিক্ষাঃ ১৫. বাজি খেলবেন না। বাজি থেকেই জুয়ার উত্পত্তি। ইদানিং কালে খেলাধূলাকে ঘিরে নানান রকমের জুয়ার আবির্ভাব ঘটেছে। স্মার্টফোনেও জুয়ার ব্যাপক উপায় উপকরন রয়েছে। লোকারন্য কিংবা নিজে নিজেই জুয়া খেলা যায়। সচেতন ভাবে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর এসব গেমস্ এবং জুয়া এড়িয়ে চলুন। এদের সামাজিক ভাবেও বয়কট করুন।

শিক্ষাঃ ১৬. ওজনে কম দেবেন না। ওজন স্কেল কিংবা বাটখারা টেম্পারিং থেকে বিরত থাকুন। অন্যদেরকেও সচেতন করুন। যারা এ গর্হিত কাজে লিপ্ত তাদেরকে সব রকম পন্থায় প্রতিহত করুন। নিজের উৎপাদিত জিনিস হলে ওজনে বেশি দেবার অভ্যাস করুন।

শিক্ষাঃ ১৭. বিপদ আপদে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধরুন।হতাশ না হয়ে কৌশলে মোকাবেলা করুন। মাথা ঠান্ডা রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় নেয়া পদক্ষেপ কখনোই সঠিক ফল দেয় না।সর্বাবস্থায় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরন করুন, তার সাহায্য প্রার্থনা করুন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানা শোনা আছে এমন কারো পরামর্শ নিন।

শিক্ষাঃ ১৮. মোবাইল ফোনে রিংটোন/কলার টিউন হিসেবে কুরআনের আয়াত ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রায় সময়ই নানা কারনে (যেমবঃ কল রিসিভ করা, কেটে দেয়া, মিসড্ কল দেয়া) আয়াত অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে আয়াত সমুহের শাব্দিক অর্থেরও হেরফের হয়ে যেতে পারে। যা অত্যন্ত গর্হিত ও গুনাহের কাজ। তেলওয়াত শোনা বা নিজের পড়ার জন্য মোবাইলে কুরআন কিংবা কুরআনিক রিসোর্স রাখা যাবে।

শিক্ষাঃ ১৯. নিজ কিংবা অন্য কোন ধর্ম নিয়ে কুটক্তি করা থেকে বিরত থাকুন। মানুষ হিসেবে আপনী যে কোন ধর্মই পালন করতে পারেন। আবার নিদ্ধিষ্ট কোন ধর্মে বিশ্বাসী নাও হতে পারেন। হতে পারে আপনী স্রষ্টায় বিশ্বাসীও না। অর্থাৎ আপনী যেটাতেই বিশ্বাসী হোন কেন কোনটা নিয়েই অযথা সমালোচনা, কটুক্তি করবেন না। ধর্মীয় বিষয়ে স্ব স্ব স্বাধীনতা বিদ্যমান রয়েছে। এব্যাপারে কেউ কাউকে বাধা দেয়ার সুযোগ নেই।

শিক্ষাঃ ২০. ছেটে পুটে খাওয়া সুন্নাত। এর শারিরীক উপকারিতাসহ মনো তৃপ্তির একটা বিষয়ও জড়িত রয়েছে। অনেকেই কোথাও গেলে বা নিজ গৃহে কোন কিছু খেতে বসলে শেষের কিছুটা না খেয়ে রেখে আসেন। প্লেটে এ অবশিষ্টাংশ রেখে আসাটাকে ভদ্রতা বলে মনে করেন! এমন গর্হিত বদঅভ্যাস থাকলে দ্রুতই তা পরিত্যাগ করুন।

— চলবে।

প্রথম পর্বের লিংক: মাহে রমজানে ত্রিশ শিক্ষা- ১ম পর্ব

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম