রামগতিতে ৬ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চরম অব্যবস্থাপনা Sarwar Sarwar Miran প্রকাশিত: ১:৫০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ কর্মস্থলে দীর্ঘ অনুপস্থিত থেকেও বেতন উত্তোলন বন্ধ কেন্দ্রে ভুতুড়ে পরিবেশ পদায়ন করা হলে হয় অনুপস্থিত, না হয় নিচ্ছেন বদলি দেশালোকঃ কর্মস্থল ফাঁকি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও জনবল সঙ্কটসহ বিভিন্ন সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা। তৃণমূল পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই উপকূলীয় এ উপজেলায়। এতে করে কাঙ্খিত সেবা মিলছে না উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র, উপকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে। নির্ধারিত পদ সমূহে কর্মীদের পদায়ন করা হলে হয় দীর্ঘ অনুপস্থিত থাকেন, না হয় লবিং করে নিয়ে নেন ইচ্ছেকৃত বদলি। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে দু’টিই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে তালাবদ্ধ। অথচ, কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসাররা (সেকমো) বাড়িতে বসে নিয়মিত তুলে নিচ্ছেন বেতন-ভাতা। এসব বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে রামগতি উপজেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬টি, উপকেন্দ্র ২টি ও ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে এসব কেন্দ্র স্থাপন করার পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে আসলেও কাজের কাজ তেমন হচ্ছে না। কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা সেকমো, ভিজিটর ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডরদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। তাঁদের কেউ কেউ সকাল ৮টার পরিবর্তে ১০টায় এসে দুপুর ১২টা বাজতেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তাঁদের ইচ্ছেমতো আসা-যাওয়ার কারণে রোগীরা এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। চরগাজী ও চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্র দু’টি তালাবদ্ধ। এলাকাবাসী জানান, চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সোহরাব হাওলাদার সুজন সেকমো হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও তিনি একবারের জন্যও কর্মস্থলে আসেননি। ২০১৯ সাল থেকে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকলেও সেখানে এক ঘণ্টাও দায়িত্ব পালন না করে তিনি বাড়িতে বসে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। একই অবস্থা চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেকমোর দায়িত্বে থাকা রাসেল আমিনের ক্ষেত্রেও। তিনিও ২০১৯ সাল থেকে ঐ কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। একদিনও দায়িত্বপালন না করে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন তিনিও। তাঁদের দু’জনের কারণে কেন্দ্র দু’টি এখন পুরোপরি তালাবদ্ধ। অন্যদিকে বড়খেরী এবং চররমিজ কেন্দ্রে সাপ্তাহে তিনদিন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন একজন মাত্র সেকমো। অবশিষ্ট দুটিও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, এ দু’জন সেকমো কর্মস্থলে না থাকায় ক্ষুব্ধ উপজেলা ও জেলা স্বস্থ্য প্রশাসন। নিজেরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষককে লিখিতভাবে জানিয়েও এর কোনো সমাধান মিলছে না। চরগাজী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের জানান, সোহরাব হাওলাদার সুজন নামে একজন তাঁদের চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়োগ থাকলেও এলাকাবাসী কোন দিন তাঁর চেহারা দেখেননি। উম্মে সালমা নামে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা(ভিজিটর) এ কেন্দ্রে সাপ্তাহে একদিন (মঙ্গলবার) দায়িত্ব পালন করলেও তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। যে কারণে তিন মাস ধরে কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সুজনদের মতো লোকের কারণে বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। তাই এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসাররা (সেকমো) সোহরাব হাওলাদার সুজন দাবি করেন, তিনি কর্মস্থলে থেকে নিয়মিত দায়িত্বপালন করছেন। তবে, গত এক সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ করেও তাঁর কোনো দেখা মেলেনি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। অন্যদিকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেকমোর দায়িত্বে থাকা রাসেল আমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন জানান, জনবল সঙ্কটের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া চরগাজী ও চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা দুই জন সেকমো দুই বছরের বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে থাকছেন না। তাঁদের বেতন বন্ধ রাখতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই দুই সেকমোর ক্ষমতার কাছে আমরা নিজেরাই অসহায়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামনাশীষ মজুমদার বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন সঙ্কট সমাধানে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিগগিরই এসব সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আক্তার হোসেন রামগতি উপজেলার তৃণমূল স্বাস্থ্য সেবার নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে জানান, সমস্যাগুলো সমাধানে একাধিকার উদ্যোগ নিলেও মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কর্মস্থলে না থাকা ওই দুই সেকমোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সুজন ও রাসেলদের মতো লোকের কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। SHARES উপকূল বিষয়: