ফেসবুকের সুখ দুঃখ, পর্ব-১

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০

সারোয়ার মিরনঃ যন্ত্র দিয়েছে বেগ কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আর ফেসবুক কিছু অদৃশ্য দুরত্ব গোছালেও কেড়ে নিয়েছে সবটাই। সবাই কেমন যেন বায়বীয় ভালোবাসা আর যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এ অশুভ মোহ থেকে আমি আপনী কেহই বাদ নেই।

আমার এক কাছের বন্ধু প্রায়ই আমাকে বলে ফেসবুকে আমার হাজারো ফ্রেন্ড কিন্তু অসুস্থ হলে একমাত্র বাস্তব বন্ধুটিই এগিয়ে আসে। খোঁজ খবর নেয়। আর ভার্চুয়ালরা বেখবর থাকে।কাজে আসেনা।হাজারো ভার্চুয়াল থেকে বাস্তব জীবনের স্বল্প বন্ধুই সত্যিকারের বন্ধু। সুখ দুঃখের সমভাগী।

এক সাপ্তাহ কোন পোস্ট না দিয়ে দেখেন কিংবা সাপ্তাহ খানেক অনলাইনের বাহিরে থাকেন আপনার কথা কেউই মনে করবেনা। খোঁজ খবর থাকবেনা। ভুলে যাবে সবাই সহজে। হাই হ্যালো পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে। এর পর ফিরে আসেন কোন ব্যত্যয় দেখবেন না। সবই ক্ষনিকের মেকি ভালোবাসা ও অনুভব।

ফেসবুক সম্পর্ক তৈরি করতে দারুন সহায়তা করে থাকে। এর কল্যানে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক গুলোকে ফেরত পাওয়া যায় সহজে। কিন্ত অতিরিক্ত ফেসবুকাসক্তি সব ধ্বংস করে দেয়।ব্যাপক সময়ের অপছয় ঘটায়।পারিবারিক কিংবা সামাজিক জীবনে নেমে আসে অশান্তির খড্গ।বন্ধুর চেয়ে শত্রুই জোটে বেশি।

একান্ত বিষয় গুলো যা আগে মানুষ ডায়েরীর পাতায় গোপনে লিখে রাখতো এখন তা ফেবুতে পোস্ট করে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পারিবারিক এলবামে থাকার মতো ছবি প্রকাশ্য করে দেয়া হয় জনসম্মুখে। পান থেকে চুন খসলেই স্ট্যাটাস হয়ে যায়!! পেটব্যাথা, সর্দি, কাশি, মাথাঘুরা, যাওয়া আসা, ঘুমানো, ধর্ম অধর্ম, কাজ অকাজ সবই এখন ফেবু পাতায়।

বাথরুমে যাবার ছবি, খাবার ছবি, ভুমিষ্ট শিশু, মৃত লাশের ভীবৎস ছবি, কবর খাটিয়া, গোসলসহ সব ধরনের ছবিই আপলোড হয় কোন সেন্সর ছাড়াই।প্রেম প্রনয়, গোপন অভিসার, বাসরঘর কোনটাই বাদ যাচ্ছে না।মসজিদ মন্দিরে, পড়ার ঘরে, ঘরে বাহিরে, স্কুলে কলেজে, আড্ডায় ফাড্ডায়, চাকুরীতে সর্বত্রই কেবল ফেসবুক আর ফেসবুক।

একবার কোন এক বিকেলে পুরোনো বন্ধুদের একত্রিত হবার জন্য একটা আয়োজন করা হলো। একে একে সবাই আসতে থাকলো। সবাই জড়ো হচ্ছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। সবার চোখ কেবল সেলফোনের স্কীনে। ভার্চুয়ালে। সামনে স্বশরীরে বন্ধু বান্ধব উপস্থিত থাকলেও হাই হ্যালো চলে ফেসবুকে।সময় গড়ালে সবাই বিদায় নেয়।অনলাইনেই বিদায়। বন্ধুদের মিলন মেলা হলেও কথা বলার ফুসরত হয়নি কারোরই। এ হলো বাস্তব চিত্র। রিয়েলিটি। ঘরে ফিরে স্ট্যাটাস দেয়, দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সাথে জম্পেস আড্ডা দিলাম! অনেক মজা করলাম!! বাহ কি সুন্দর বৈপরীত্য!

আগে কারো সাথে বহুদিন পর দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পর কুশলাদি জানা হতো। এরপর এলো মোবাইল নাম্বার নেয়া। সব জিজ্ঞাসা সেলফোনেই। আর বর্তমানে চলছে ফেসবুক ক্রেজ। দেখা হলেই আইডি নেয়। এরপর ভার্চুয়ালে অদৃশ্য সম্পর্ক!!

ফেসবুক এখন অনেকটাই নোংরামিতে ভরপুর। অগনিত চটি পেজ, গ্রুপ ও আইডি। ন্যুড ছবির অভয়াশ্রম। ফেক আইডির জ্বালাতন। আস্তিক নাস্তিক জোর দ্বন্ধ। সহজে কোটিপতি হবার উপায়। চিকিৎসা কিংবা ডাক্তার নামের উৎপীড়ন। যৌনতায় ভরপুর। লাইক কমেন্টস্ ভিক্ষা। ট্যাগ নির্যাতন আরো কতো কি!!!

যে কোন পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র মেলে ফেসবুকে। আমার এক বড় তার ইন্টার পরীক্ষার্থী ছোট বোনকে জিজ্ঞাস করলেন, কিরে তোর ইংলিশ পরীক্ষা কেমন হলো?? ছোট বোনের স্বহাস্য জবাব, ভাইয়া আমিতো ফেসবুক চালাই না!! পরীক্ষার আগের রাতে শিক্ষার্থীরা এখন পড়ালেখা বাদ গিয়ে ফেসবুকে প্রশ্ন খোঁজে।

চলমান—-
০৩.০৯.২০১৪

লেখকঃ

সম্পাদক, দেশালোক