এমপিও’র দাবিতে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২১

বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজে নিয়োগকৃত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভূক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিটি লিখেছেন বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন এর আহবায়ক হারুন অর রশিদ। নিম্নে খোলা চিঠিটি তুলে ধরা হলো:

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স -মাস্টার্স শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সালাম ও অযুত শ্রদ্ধা জানাই। আমরা ৫,৫০০ জন শিক্ষক বুকভরা  আশা নিয়ে গত কয়েকবছর শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বহুবার আবেদন-নিবেদন করে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। জানি না আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে কিনা। তাই আবারও প্রবল আশা নিয়ে আপনার অথবা আপনার প্রেস উইংয়ের নজর কাড়তে চেষ্টা করছি।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের  এমপিওভুক্তি এখন সময়ের দাবি। দেশের সাড়ে ৫ হাজার নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক অধীর আগ্রহে দীর্ঘ দিন হতে অপেক্ষায় ছিলেন আপনার নিকট থেকে এমপিওভুক্তির  ঐতিহাসিক ঘোষণা শোনার জন্য। কিন্তু শিক্ষকরা আশায় বুক বাঁধলেও আপনার পক্ষ থেকে কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কোনরূপ আশার বাণী শুনতে পাচ্ছি না। তাই দু:খ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজকের এই লেখা।

 

হে সফল রাষ্ট্রনায়ক,

আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য উত্তরসূরি গণতন্ত্রের মানসকন্যা খ্যাত সফল রাষ্ট্রনায়ক। আপনি অত্যন্ত দূরদর্শীপূর্ণ সরকার প্রধান হিসেবে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। আপনার আদর্শবাদ, চিন্তা-চেতনা, কল্যাণধর্মী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম, মানবতাবোধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সাহসী ভূমিকা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আপনি বাংলার অসহায় নিপীড়িত, নির্যাতিত, গরীব-দুঃখী মানুষের নিকট আর্ত-মানবতার মূর্ত প্রতীক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার, এশিয়ার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, শান্তির অগ্রদূত। দূরদর্শিতা ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের কারণেই আপনি খ্যাতির চূড়ায় আসীন। দেশের এবং নিজের জন্য বয়ে এনেছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। আপনি বিশ্বের বিষ্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। আপনি বিশ্ববরেণ্য চিন্তাবিদ ও পরিকল্পনাকারী। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তকমা অর্জন করেছে। আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে।আমরা বিশ্বাস করি সেই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সত্ত্বেও আপনার দূরদর্শী ও সাহসী ভূমিকায় প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রায় এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে নির্মাণ করেছেন বেশ কিছু বৃহদাকার ফ্লাইওভার। নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মোদ্দাকথা আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে তা রীতিমত ঈর্ষণীয়।

 

হে মানবতার অগ্রদূত,

আপনি মানবতার মা, অপরের দুঃখে আপনার প্রাণ কাঁদে। কিন্তু আমরা যারা বেসরকারি কলেজে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক, রহস্যজনক কারণে আপনার কৃপা দৃষ্টিলাভ এবং আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি! সংখ্যায় আমরা সাড়ে ৫ হাজার  শিক্ষক  এবং দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সাড়ে ৩ লাখ গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের দ্বারা উচ্চ শিক্ষা লাভ করলেও আমরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। একই কলেজে ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হলেও,আমাদেরকে দীর্ঘ ২৯ বছর নন-এমপিও রাখা হয়েছে। যেহেতু রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আপনার কাছে সমান,সেহেতু একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়ে কেউ এমপিওভুক্ত হবেন,আর কেউ হবেন না তা বেমানান ও চরম বৈষম্য। এমপিও না থাকায় অর্থাভাবে প্রতিবারের মত আসন্ন ঈদ উৎসবে অনার্স শিক্ষকদের ঈদ মাটি হয়ে যাবে,প্রিয় সন্তানের লাল জামা কেনার সামর্থ্য থাকবেনা। বৃদ্ধ পিতা-মাতার আশাটুকুও পূরণ হবার নয়।  সমাজের আট দশজন মানুষের মত আমাদেরও স্বাদ-আহ্লাদ আছে, ঈদের কেনাকাটার শখ আছে। আমি নিজে একজন অনার্স শিক্ষক।কোভিড-১৯ এর তান্ডবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১৬ মাস থেকে বন্ধ থাকায় এবং সঙ্গত কারণে টিউশন ফিস আদায় না হওয়ায় বেতন- ভাতা পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ঈদের কেনাকাটা তো দুরের কথা, ডাল -ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব কিনা এ প্রশ্ন জাতির কর্ণধার হিসেবে  আপনার কাছেই রাখলাম। লজ্জাকর হলেও সত্য যে, নন-এমপিও হওয়ায় সহকর্মীদের কাছে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়।

 

হে বিশ্ববরেণ্য চিন্তাবিদ,

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি, বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও ভরসার স্থল, আপনি একটানা তৃতীয় বার সহ চার মেয়াদের সফল প্রধানমন্ত্রী। আপনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দুর এগিয়ে গেছে। বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশকে সমীহ করে। আপনি নিজেও স্বীয় দক্ষতা ও যোগ্যতাবলে খ্যাতির চূড়ায় আসীন।আপনি অত্যন্ত মানবিক ও কোমল মনের মানুষ বলেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। অথচ আমরা এদেশেরই নাগরিক, আপনার সন্তানের মত।শিক্ষকরা অর্ধাহারে, অনাহারে কিংবা উৎসব-পার্বণে মলিন মুখে থাকবে তা প্রত্যাশিত নয়। আমরা যে মহান ব্রত নিয়ে এ সেবামূলক পেশায় আত্মনিয়োগ করেছি তা যেন স্বার্থক ও সফল হয় তার কাণ্ডারী একমাত্র আপনিই হতে পারেন। আপনার সানুগ্রহ অনুমতি ও একটি সিদ্বান্তই আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে  বার্ষিক মাত্র ১৪৪ কোটি বিনিয়োগ করলেই এসব শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি জাতির পিতার রক্ত যাঁর শিরা-উপশিরা ও ধমনীতে প্রবাহিত, তিনি বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স  শিক্ষকদের এ দূরবস্হা দ্রুতই সমাধান করবেন। আশার কথা যে, আপনি ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছেন।সেসব প্রতিষ্ঠানের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা আত্তীকরণ হয়ে ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। এজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই।

অতএব এসডিজি-৪ ও শিক্ষানীতি-২০১০ এর উচ্চশিক্ষার কৌশল অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে সকল অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষককে এমপিওভুক্তির নির্দেশনা দিলে আমরা  এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কৃতজ্ঞ থাকবো।

 

ইতি

আপনারই গুণমুগ্ধ

হারুন-অর-রশিদ

আহবায়ক, বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন।