বত্রিশ ইটভাটায় বিপন্ন রামগতির জনপদ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:০৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩

দেশালোক:
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার প্রভাবে বিপন্ন বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষজন। বিষিয়ে ওঠছে তাদের জীবনযাত্রা ও স্বাভাবিক বসবাস। নানা জটিল রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে এলাকার শিশু সহ নানা বয়সী লোকজন। দেদারছে এসব ইটভাটায় প্রকাশ্য কাঠ পোড়ানো হলেও কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় একদিকে এলাকার বনজ সম্পদ কমিয়ে আসছে অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এলাকাবাসী এসব ইটভাটার বিরূদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আয়তন ৩৪৭ বর্গ কিলোমিটার। এ স্থল আয়তনের তিন ভাগের একভাগ মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আটটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এখানে সর্বমোট বত্রিশটি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বন্ধ হয়ে হয়ে গেছে। আবার এরমধ্যে কেবল ৭নং চররমিজ ইউনিয়নেই রয়েছে ১৪টি ইটভাটা।
এসব ইটভাটার সবগুলোতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কোনটিরই নেই সঠিক অনুমোদন কিংবা বৈধ কাগজপত্র। স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব ভাটার ইট পোড়ানোর কাজ। ভাটাগুলোর মালিকদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় একশ্রেণির প্রভাবশালী। কোনো প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতি বছরই কোন না কোন ইউনিয়নের ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে এসব ভাটা।
এদিকে কৃষি যন্ত্রপাতির ক্রয়ের ভর্তূকির সরকারি সুবিধা নিয়ে কেনা প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর ট্রলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো উপজেলা। এর ফলে গ্রামীন জনপদে সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে সৃষ্টি করেছে নানা বিপর্যয়ের। ক্ষত -বিক্ষত করছে গ্রামীণ কাঁচা, পাকা ও আধাপাকা সড়ক।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর সচেতন এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও প্রশাসনের অভিযান কিংবা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বেপরোয়া ইটভাটাগুলোর মালিকপক্ষ। ইটভাটা তৈরিতে একদিকে যেমন কৃষি জমি ধ্বংস করা হচ্ছে অন্যদিকে দখল করা হচ্ছে সরকারি খাল, নদী ও খাসজমি। এসব ভাটায় যানবাহন যাতায়াতে তৈরি করা হচ্ছে অবৈধ সড়ক। জনপ্রতিনিধিরা যুক্ত থাকায় খাল-নদী দখল করে দেয়া হচ্ছে রাস্তা তৈরির প্রকল্প।
অপরদিকে নির্বিচারে কাঠ পোড়ানোয় ধ্বংস হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছগাছালি। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ‘টপসয়েল’ বিক্রিতে হ্রাস পাচ্ছে জমির উর্বরা শক্তি। এছাড়া প্রায় প্রতিটি ভাটাতেই শ্রমিক হিসেবে যুক্ত আছে শিশু শ্রমিক। ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আছে মামলা হামলার অভিযোগও। ইটভাটা মালিক সমিতির বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আছে শ্রমিক নির্যাতন ও নিপিড়নের। এক ইউপি সদস্য মালিকের বিরুদ্ধে আছে ভুলুয়া নদী ও সরকারি খাস জমি দখলের। এছাড়াও প্রায় প্রতিবছর তার মালিকানাধীন ইটভাটায় অবৈধভাবে ভুলুয়া নদী খনন করে মাটি ব্যবহারের অভিযোগও।

সরেজমিন জানা যায়, এসব অবৈধ ইটভাটার মধ্যে রয়েছে ফাতেমা নাজ-আফ্রা ব্রিকস্, মেসার্স তৃষা ব্রিকস্ লাইন, মেসার্স ফারদিন আনাম ব্রিকস্, এমএস ব্রিকস্, শাওন সোহান ব্রিকস, মেসার্স আমরি ব্রিকস্, মেসার্স এআর ব্রিকস্, মেসার্স বাঘা ব্রিকস্, মেসার্স আবু ব্রিকস, মেসার্স নুরুল আলম ব্রিকস্, মেসার্স শাহপরান ব্রিকস্, মেসার্স শরাফত আলী ব্রিকস্, মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস্, মেসার্স মোহাম্মদীয়া ব্রিকস্, মেসার্স আল্লার দান ব্রিকস্।

ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, ইটভাটা মালিকদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে উপজেলা প্রশাসন যেন অসহায়। অভিযান চালিয়ে চিনমি ভেঙ্গে আগুন নিভিয়ে দেয়ার পরও পুনরায় চালু হচ্ছে ভাটার আগুন। গত বছরের ডিসেম্বরে উপজেলার ১১টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে চিমনি ভেঙ্গে আগুন নিভিয়ে দেয়াসহ সাড়ে ৯লক্ষ টাকা জরিমানা ও একজনকে কারাদন্ডাদেশ দেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেডের ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও প্রায়ই এসব ইটভাটায় বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এতো কিছুর পরেও ইটভাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না অদৃশ্য কারনে। সচেতন এলকাবাসী এসব অবৈধ ইটভাটা স্থায়ী ভাবে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতনের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরী জানান, পরিবেশ রক্ষা ও জনস্বার্থ বিবেচনা করে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।