রামগতিতে পুুুুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২৩

দেশালোক:

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ছাত্রলীগ নেতার সাথে পূর্ব বিরোধের জের ধরে তার ভাই মো: সুমনকে (৩৫) পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও মারদোরের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। রাতের বেলায় নির্জন স্থানে নিয়ে গাছের সংগে বেঁধে রাখার পাশাপাশি উলঙ্গ করে তার গায়ে পিঁপড়া ছেড়ে দেয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে পানি চাইলে মুখে কাঁদা প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়।
শুক্রবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন থাকা সুমন এভাবেই তার উপর নির্যাতনের বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন। এ ঘটনায় রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভুক্তভোগী সুমন উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ রাজীবের বড় ভাই। তারা চরবাদাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম—আহবায়ক আবুল বাশারের ছেলে। তারা স্থানীয় পূর্বচরসীতা গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত আব্দুর রহিম উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য ও একই ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি।
ভূক্তভোগী সুমন জানায়, বুধবার (৭ জুন) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে সুমনদের এলাকা পঞ্চায়েত বাড়ি জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় দুটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে কয়েকজন লোক আসে। একপর্যায়ে মামলা আছে বলে তারা সুমনকে তুলে নিয়ে যায়। পঞ্চায়েত বাড়ির জামে মসজিদ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ভুলুয়া নদীর পাশে ফিরোজ মিয়ার প্রজেক্ট এলাকায় তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিনি সবাইকে চিনতে পারেন। সেখানে নিয়ে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। ওই লোকজন তার মোবাইলফোন থেকেই ইউপি সদস্য আবদুর রহিমকে কল দেয়। এরপর আবদুর রহিম আসার পরই তাকে উলঙ্গ করার নির্দেশ দেয়। একপর্যায়ে তার শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেয়। এসময় আবদুর রহিমসহ তার লোকজন সুমনকে এলোপাতাড়ি লাথি—ঘুষি মারতে থাকে। প্রায় ৩ ঘন্টা তিনি উলঙ্গ করে রাখে। পরে তার মুখে কাঁদা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিনি বমি করে দেন। এসময় ফের তার মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে মুখমন্ডলে কালোকাপড় বেঁধে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আব্দুর রহিম ও তার লোকজন।
এরমধ্যে পরিবারের লোকজন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে পুলিশের কেউই তাকে আটক করেনি। পরে পরিবার ও স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে ঘটনাস্থলে তাকে দেখতে পায়। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে বড়িতে নেওয়া হয়।
মো. সুমন বলেন, আমি বিভিন্নভাবে আব্দুর রহিম ও তার লোকজনের কাছ থেকে পানি চেয়েছি। তারা আমাকে পানি পর্যন্ত দেয়নি। তারা আমার মুখে কাঁদা ও লতাপাতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আব্দুর রহিম ঘটনাস্থল পৌঁছার পরই আমার ওপর নির্যাতন শুরু করা হয়।
ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মাজেদ রাজীব বলেন, রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে আব্দুর রহিমের সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। গত ডিসেম্বরে তিনি আমার হাত ভেঙে দেন। এ ঘটনার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পন করে আব্দুর রহিম ৮ দিন জেল খেটেছেন। পরে তিনি জামিনে বের হন। এরপর তিনি বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিয়েছে। আমার সঙ্গে শত্রুতার জের ধরেই তিনি সুমনকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, এ ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা রাজীব তার ভাইকে দিয়ে নাটক সাজিয়ে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, আব্দুর রহিম এখন যুবলীগের কমিটিতে নেই। বহু আগে তার কমিটি স্থগিত করা হয়েছে । তবুও সে পরিচয় দেয়।
এ ব্যাপারে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, সুমনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সে কয়েকজনের নাম বলেছে, তাদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।