রামগতির বিভিন্ন স্থানে গরু চুরির হিড়িক: উপকূল জুড়ে আতংকে গৃহস্থ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৪

সারোয়ার মিরন:

গত এ সাপ্তাহে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ চোরের দল হানা দিয়ে বেশ কয়েকজন গৃহস্থের অর্ধশতাধিক গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। এর ফলে ধারদেনা করে গরু পালনকারী গৃহস্থ ও খামারীরা পড়ছেন ঋণের চাপে।  অন্যদিকে আয়ের একমাত্র অবলম্বন গরু ও পুঁজি হারিয়ে হচ্ছেন নিঃস্ব।

জানা যায়, বুধবার রাত ৩টার সময় চর রমিজ ইউনিয়নের চর রমিজ গ্রামের গোমস্তা বাড়ির ইব্রাহিম খলিল বাবুর ২টি, একই গ্রামের ফজলুর রহমানের ৩টি, শফিউল আলম ২, নিজাম উদ্দিনের ২টিসহ এ গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ১১টি গরু,  একই রাতে চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের জনতা বাজার এলাকার শারু মুন্সির ২টি, সোমবার রাতে চর রমিজের ৫নং ওয়ার্ড ক্বারির গোজা এলাকার আতিক উল্যাহর ২টি ও আবুল কালামের ৩টি, মহিউদ্দিনের ৪টি গরু ও অন্য একজনের ৩টি রাজহাঁস নিয়ে গেছে চোরেরা।

গত মঙ্গলবার রাতেও চরগাজী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের নোমান সিদ্দীকির ১টি গরু নিয়ে গেছে চোরেরা।
এ সময় তার এবং তিন প্রতিবেশির ১৩টি গরু গভীর রাতে পিকআপ ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার কালে জনসাধারণের উপস্থিতি টের পেয়ে ১২টি রেখে ১টি গরু নিয়ে পালিয়ে যায় চোরের দল। এছাড়াও চরলক্ষ্মী গ্রামের মো: রুবেল উদ্দিনের ৫টি, চরগাজীর সিদ্দিক উল্যাহর ৬টি, পার্শ্ববর্তী গ্রাম শাহাব উদ্দিন সমাজ থেকেও ১০টি গরুসহ গত এক সাপ্তাহে উপজেকার ভিবিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫০টি গরু নিয়ে গেছে চোরের দল।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের ধারনা নদীমাতৃক, চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকা হওয়ার সুযোগে সহজ রুট হিসেবে উপজেলার চরগাজী, বয়ারচর, টাংকিবাজার, বড়খেরী, চর রমিজ, চর আবদু্ল্যাহ, চর আলেকজান্ডার, চরবাদামসহ বেশ কয়েকটি এলাকাকে টার্গেট করেছে চোরেরা। সংঘবদ্ধ এ চোরচক্রকে সহায়তা করছেন স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও খামারি গোলাম রব্বানী জানান, একটি চক্র গরু চুরির সাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। চোরের দল গাড়ি নিয়ে বিকেলে টার্গেট এলাকার কিছুটা দুরে অবস্থান করে। গাড়ির চাকা পাংচার ও নষ্ট হওয়ার তালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করে। গভীর রাতে সংগঠিত হয়ে গরু চুরিতে নামে।

জানা যায়, চোরের দল ট্রাক ও পিকআপে বালি কিংবা ভুষি ছিটায়ে রাখে বলে গরু ওঠাতে শব্দ হয় না। এছাড়া গরুর মুখে লাল ও নীল কাপড়ের শালু ব্যবহার মুখে বেঁধে ফেলা হয়। মেঘনা উপকূলবর্তী হওয়ায় নৌকা ও ট্রলারে করে খুব সহজে গরু পারাপার করে চোরেরা। এছাড়াও নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় সহজে সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

চর রমিজের ইব্রাহিম খলিল বাবু জানান, ধারদেনা করে গরুগুলো পালছি। চোরের দল আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমাকে এখন পথে বসতে হবে। চরগাজী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের নোমান সিদ্দীকি জানান, আমার এবং প্রতিবেশীদের মোট ১৩টি গরু চুরির সময় জনগন টের পেলে ১টি নিয়ে পালিয়ে যায় চোরেরা। খামারি হিসেবে আতংকের মধ্য দিয়ে প্রতিটি রাত পার করছি। এছাড়াও রাতের বেলায় রামগতি-তোরাবগঞ্জ ও রামগতি-টাংকি বয়ারচর সড়কে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করলে চুরিসহ অন্যান্য অপরাধ কমবে বলে দাবি করেন এ ভুক্তভোগী। তিনি আরও বলেন, বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী মিলে এখন পালাক্রমে রাতভর গরু পাহারাও দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।

চর রমিজ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, গরু চুরির বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। তবে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছে এ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩টি গরু চুরি হয়েছে। চরগাজী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন জানান, প্রায় প্রতি রাতেই এ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু চুরির খবর আসছে। ভুক্তভোগিরা গভীর রাতে ফোনে দেন। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করেছি। প্রশাসনকে জানিয়েছি। তিনি আরো জানান, ই ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি গরু চুরি হয়েছে বয়ারচর থেকে। এ গণচুরির পেছনে শক্তিশালী চক্র থাকতে পারে বলেও তিনি ধারনা করছেন।

রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন জানান, সবচেয়ে বেশি গরু চুরি হচ্ছে বয়ারচর ও টাংকি এলাকায়। রামগতি-হাতিয়া নিয়ে সীমানা বিরোধ থাকায় এবং দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঐ এলাকায় আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালন করা কঠিন। ইতিমধ্যে গরু চুরির একটি অভিযোগ পেয়েছি। এটা নিয়ে কাজ করছি। এছাড়াও অন্যান্য এলাকায় পুলিশ তৎপর রয়েছি। জনসাধারণের সহায়তাও কামনা করেন তিনি।