শিক্ষক দিবসে শিক্ষকরা হোক স্বাবলম্বি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২০

মোঃ মেহরাব আলীঃ শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষক জাতির কারিগর, জাতির বাতিঘর। নবী ও রাসুলগণ হলেন মানব জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁরা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ওহি প্রাপ্ত হতেন, সেই ওহির জ্ঞান মানব জাতিকে শিক্ষা দিতেন। সকল শ্রেণির মানুষ তাঁদেরকে শ্রদ্ধা, সম্মান করতেন, ভালবাসতেন। তাঁদের থাকা, খাওয়া, পরার ব্যবস্থা করতেন।

শুধু শাষক শ্রেণির ভিআইপি অংশ নবী রাসুলগণকে মানতে চাইতো না। শাসন ক্ষমতা হারাবার ভয়ে তারা মহান শিক্ষকদেরকে কষ্ট দিত, নির্যাতন করতো, তাদের শিক্ষাদীক্ষার বিরোধিতা করতো। কারণ তাঁদের মতাদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র হতে সকল প্রকার জুলুম, নির্যাতন, সুদ-ঘুষ, দূর্নীতি, শোষণ অন্যায়, অবিচার অবসান ঘটাতো। স্বৈরচারী জুলুমবাজ শাসকদের ঐ সবই শাসন শোষণের হাতিয়ার। “আদর্শের লড়াইয়ে যারা পরাজিত, অস্ত্র তাদেরই হাতিয়ার।”

বর্তমান বিশ্বে শিক্ষকরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে সম্মানিত,শোষিত নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের দেশে ব্রিটিশ বেনিয়াদের শাষনের প্রতিভু হিসেবে শিক্ষা খাতকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে। শিক্ষিত পন্ডিত ও মেধাবীদেরকে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আকর্ষণহীন বিকর্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা এখনো সহজলভ্য করা সম্ভব হয়নি।

মাধ্যমিক শিক্ষাকে প্রাচীন টোল শিক্ষাব্যাবস্থার আনুকুল্যে রাখা হয়েছে, ফলে বছরের পর বছর এমপিওবিহীন হাজার হাজার শিক্ষক অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা খাতকে তো প্রায় ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

উচ্চ শিক্ষায় অনার্স মাস্টার্স কোর্সে নিয়োজিত শিক্ষকগণ দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে শিক্ষা আইন ও নীতিমালার বেড়াজালে ননএমপিও অবস্থায় বেতন ভাতাবিহীন বিপন্ন মানবতার তলানিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শাষক শ্রেণি দেখেও না দেখার ভান করছেন।

জীবণ মরন সন্ধিক্ষনে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে কখনই উত্তম আদর্শের সৎ নৈতিকতা সম্পূর্ণ সুশিক্ষা দিতে পারে না। স্বার্থন্বেষী মহল সরকারের ছত্রছায়ায় শিক্ষাকে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। অদৃশ্য কারণে সরকারী মহল নিঃশ্চুপ। সরকারের বিরুদ্ধে কোন লেখা, পোষ্ট, প্রতিবাদ প্রচার হলে সরকারের বিভিন্ন ইউনিট দেখতে পান, স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠেন।

কিন্তু শিক্ষকদের দাবী দাওয়া, বেতন ভাতার কথা তারা শুনতে ও দেখতে পান না, যা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।

আজ শিক্ষক দিবস। কর্তা মহলের কিছু ব্যক্তি সুন্দর সুন্দর উক্তি পরিবেশন করে অনাহারি শিক্ষকদেরকে বোকা বানিয়ে বছরের পর বছর অশিক্ষা, কুশিক্ষার দার উন্মোচন করে রাখা হয়েছে। বাজেট নেই, টাকা নেই ইত্যাদি দোহাই দেয়া হচ্ছে, অথচ তাদেরই কিছু বন্ধুমহল হাজার হাজার কোটি টাকা আত্নসাৎ করে বিদেশে পাচার করছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে টাকা চুরি, লুটপাট করা হচ্ছে, তার কোন প্রতিকার নেই। নেই কোন প্রতিকারের সুষ্ঠ ব্যবস্থা।

হায়রে শিক্ষানীতি! কিছু সরকারি, কিছু বেসরকারি, আবার কিছু এমপিও, কিছু নন এমপিও, কিছু প্রাইভেট, কিছু শায়ত্বশাসিত, কিছু দেশি এনজিও পরিচালিত, কিছু বিদেশি গীর্জা – টোল, মন্দির পরিচালিত। ফলে জগাখিচুড়ি শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে জাতিকে কতখানি সুশিক্ষিত করা সম্ভব? তা পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার বিষয়। শিক্ষকরা আর কতো কাল তাঁদের দাবি দাওয়া নিয়ে পথে ঘাটে মিছিল মিটিং, মানব বন্ধন করবে? জাতি গঠনে শিক্ষাকে জাতীয় করণের আওতায় আনা হবে? কবে আসবে ফিরে শিক্ষকের সম্মান ও স্বচ্চলতা? শিক্ষক দিবসে আসান্বিত শিক্ষকরা, জয় হউক বিধ্বস্ত-শোষিত মানবতার।

 

লেখকঃ শিক্ষক নেতা, বেসরকারী অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক