রামগতিতে জেএসডি-বিএনপি’র পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

সারোয়ার মিরন, রামগতি:
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরসহ ককলেট বিস্ফোরণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি। শনিবার সকাল ১১টায় জেএসডি উপজেলা কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন- উপজেলা জেএসডি সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বাবলু।
অন্যদিকে মিথ্যা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করার প্রতিবাদে একই দিন বিকেলে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন রামগতি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মর্তুজা আল আমিন।
শুক্রবার রাতে উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়ন রামগতি বাজারে স্থাপিত জেএসডির নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর এবং ককটেল বিস্ফোরণ এর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে জেএসডি নেতারা। লিখিত বক্তব্যে জেএসডি সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বাবলু বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও পৌরসভায় আমাদের দলের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। আগামী ৮ নভেম্বর জেএসডির উদ্যোগে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। বিগত কয়েকদিন থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান বিভিন্ন উঠান বৈঠকে আমাদের দলের নেতা আ.স.ম আবদুর রব এবং আমাদের নেত্রী মিসেস তানিয়া রবসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ন এবং অশালীন বক্তব্য প্রদান করছেন।
তিনি বলেন, দলীয় জনসভা সফল করার জন্য আমাদের সর্বস্তরের নেতা কর্মীরা যখন ব্যস্ত ঠিক সেই মূহুর্তে শুক্রবার রাতে সময় উর্ধ্বতন নেতাদের নিদের্শে জামাল উদ্দিন, মো. সিরাজ উদ্দিন, মো. জুয়েল, শিবলী নোমান, শিব্বির, ইরাজ, হান্নান, মিজান মেম্বার, জাহাঙ্গীর, আলম মাসুদ পারভেজসহ ৮নং বড়খেরী ইউনিয়ন জেএসডির কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় অফিসের চেয়ারসহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে। হামলায় বড়খেরী ইউনিয়ন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব এবং জেএসডি ছাত্রলীগের ইউনিয়ন সভাপতি জিসান এবং যুব পরিষদের নেতা ফয়েজের দোকানে ককটেল বিষ্ফোরণ করে।
লোকমান হোসেন আরো বলেন, ৮তারিখের জনসভা আমরা যেন সফল করিতে না পারি সে জন্য সোনাপুর বাস মালিক সমিতি, লক্ষ্মীপুর বাস মালিক সমিতি এবং ট্রাক মালিক সমিতিতে গিয়ে-ফোনে আমাদের জনসভায় গাড়ী না দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেন তারা। পাশাপাশি রামগতি উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং বাজারে গিয়ে প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি প্রদান করে যেন জেএসডির জনসভায় লোক না যায়। গেলে গাড়ী ভাংচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে বলেও প্রচার ভয়ভীতি প্রদান করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জেএসডি উপজেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন, সহ সভাপতি আবুল হাসানাত চৌধুরী মেহেদি, মীর গোলাম আজম ফারুক, পৌর সভাপতি জহিরুল ইসলাম নৌশাদ, সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, ইউপি সদস্য মোতাসিন বিল্লাহ বাবুলসহ সহযোগী সংগঠনের প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

জেএসডির সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করার অভিযোগে শনিবার বিকেলে আলেকজান্ডার বাজারে দলীয় কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। এতে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মর্তুজা আল আমিন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি আ.স.ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির একটি অংশ আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যমূলক এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করে ধারাবাহিকভাবে অপ-প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই এই অভিযোগসমূহ রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত, তথ্য বিবর্জিত এবং রামগতি বিএনপির সুনাম ও সাংগঠনিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার একটি ন্যাক্কারজনক অপচেষ্টা।
প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরি আল আমিন আরো বলেন, গতকাল (শুক্রবার) রাতে বড়খেরী ইউনিয়নে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে একটি নির্বাচনী প্রচারণার মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হঠাৎ জেএসডি অফিস থেকে উশৃঙ্খল কিছু ব্যক্তি আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এছাড়াও পরপরই আমাদের শান্তিকপূর্ণ মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা বিএনপির অভিভাবক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান এর নির্দেশে আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্য, সংযম ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে আমাদের নির্বাচনীয় পথসভা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করি। কিন্তু পরবর্তীতে জেএসডির ওই অংশ নিজেদের পার্টি অফিসের কিছু আসবাবপত্র নিজেরাই ভাঙচুর করে এবং পুরো ঘটনাকে উল্টোভাবে উপস্থাপন করে। এরপর তারা একটি সাজানো ও বানোয়াট সংবাদ সম্মেলনে আমাদের রামগতি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও চর আলগী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক তানভীর আহামেদ জুয়েল, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শিবলী নোমান, সদস্য সচিব শাহ মোঃ শাব্বির এর বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ উত্থাপন করে। বাস্তবে ওই সময় তাদের কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তারা চর রমিজ ইউনিয়নে একটি নির্বাচনী আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত ছিলেন। এ তথ্য জেনেও জেএসডির ওই অংশ বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে জনমনে ভুল বোঝাবুঝি তৈরির অপচেষ্টা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আল আমিন দাবি করেন, জেএসডির উসকানিমূলক হামলা ও ইটপাটকেলের আঘাতে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন মো. রুবেল, জমির আলী, আলাউদ্দিন বিসু। সৈয়দ মর্তুজা আল আমিন বলেন, রামগতি উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি এবং এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সবসময়ই শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করে আসছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা বা অপতৎপরতার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না।
আমরা জেএসডির বিভ্রান্তিমূলক, মনগড়া ও উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান জানাচ্ছি। তাদেরকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা এবং মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। রামগতি বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে যদি কোনো মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয় তাহলে আমরা রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে তা মোকাবেলা করব।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা, পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।