রামগতির দিদারের আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে বহুমূখী কৃতিত্ব

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২০

দেশালোকঃ মোঃ দিদার হোসেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার কৃতি সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়ে রেকর্ড করেছেন। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে   শিক্ষকতা করছেন রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। ওখানেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন সমান তালে।  বাকিটুকু জানুন তাঁর লেখা থেকেই।

আলহামদুলিল্লাহ।
উচ্চ শিক্ষা জার্নির গতো ১৪ মাসের মধ্যে সবচে দুর্দান্ত ছিলো গতো সপ্তাহ খানেক সময়। প্রথমত, ইউনির্ভাসিটি অব হাওয়াই আমাকে “এ্যাচিভমেন্ট স্কলারশিপ” এর জন্য নির্বাচিত করেছে। যার অংশ হিসেবে তারা আগামী দুই বছর প্রতি সেমিস্টারে আমাকে ২৫০০ ডলার হারে এওয়ার্ড মানি প্রদান করবে। দ্বিতীয়ত, এখানকার আমার ডিপার্টমেন্ট মাইরন বি থম্পসন স্কুল অব সোশ্যালওয়ার্ক আমাকে “৮০তম এনিভার্সারি কাউহালে স্কলারশিপ” এর জন্য নির্বাচিত করেছে যার অংশ হিসেবে চলতি শিক্ষাবর্ষে ২ সেমিস্টারের জন্য ৫০০ ডলার হারে এওয়ার্ড মানি প্রদান করবে। মূল ফান্ডিং এর বাহিরে এসব এক্সট্রা প্রাপ্তির অনুভুতিগুলো অন্তত এটা বুঝতে হেল্প করে যে আমি স্টিল ইন ট্র্যাক।
অর্থলাভের পাশাপাশি গবেষণা এবং একাডেমিয়া লাইফের সেরা কিছু আউটপুট ও এসছে গত দিন কয়েকের ব্যবধানে। প্রথমত, সোশ্যাল ওয়ার্ক দুনিয়ার সবচে কার্যকর সংস্থা আমেরিকা’র ন্যাশনাল এস্যেসিয়েশন অব সোশ্যাল ওয়ার্ক (এনএএসডব্লিউ) এর কনফারেন্সে প্রথমবারের মতো রিসার্চ পেপার প্রেজেন্ট করেছি। এটা সমাজকর্মের স্টুডেন্ট হিসেবে আমার জন্য বড় রকমের অজর্ন। দ্বিতীয়ত, আমেরিকান সাইকোলজি এসোসিয়েশন (এপিএ) কর্তৃক প্রকাশিত “জার্নাল অব রুরাল হেলথ” ‘এ একটি রিসার্চ পেপার পাবলিশ হয়েছে যেখানে আমিও একজন কোঅথর। তৃতীয়ত, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে ২০১৮ সালে সেখানকার কনফারেন্সে প্রেজেন্ট করা আমার একক গবেষণা প্রবন্ধটি তারা তাদের বিশেষ জার্নালে পাবলিশ করতে যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে।
লাস্ট নট দ্যা লিস্ট হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই এর ভাইস চ্যান্সেলর অফিস আমাকে আগামী দুই বছরের জন্য “লেজিসলেটিভ ফেলো” হিসেবে কাজ করার জন্য নির্বাচিত করেছে। এ পদে কাজ করার ফলে আমি আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি নেতৃত্ব বিকাশের বড় রকমের সুযোগ পাবো বলে আশাবাদী। এ নিয়োগের প্রক্রিয়াটা খুবই ইন্টারেস্টিং ছিলো সে বিষয়ে আরেক দিন লিখবো।

প্রসঙ্গত, আগের সময়গুলোও ভালো কিছু অর্জনে ভরপুর ছিলো। বিশেষ করে গতো একাডেমিক বছরে আমার বার্ধক্য বিষয়ক গবেষণা এবং উচ্চ শিক্ষার প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় হাওয়াই প্যাসিফিক জেরোন্টলজিক্যাল সোসাইটি তাদের ফ্ল্যাগশিপ স্কলারশিপের (এককালীন ২০০০ ডলার) জন্য আমাকে নির্বাচিত করে। ইন্টারেস্টিংলি, কেবলমাত্র বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের জন্য ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইতে একটি মাত্র স্কলারশিপ আছে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত গায়ক সৈয়দ আবদুল হাদি’র আমেরিকা প্রবাসী মেয়ে তনিমা হাদি যিনি কিনা নিজেও একজন সুকন্ঠী এবং প্রতিথযশ গায়িকা। মিস. তনিমা ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইতে পড়াকালীন স্টিভ লেন নামক এখানকার একজন নামকরা আইনজীবীকে হোস্ট ফ্যামিলি হিসেবে পেয়েছিলেন। আমি যতোটা জানি বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের প্রায় ৮০% এর জন্যই স্টিভ লেন হোস্ট হিসেবে ছিলেন এবং আছেন। আমেরিকান এই আইনজীবি প্রচন্ড বাংলাদেশী প্রেমিক মানুষ। আমি নিজেও তার বাসায় ডিনারের জন্য নিমন্ত্রিত হয়ে ছিলাম গতো বছরের সেপ্টেম্বরে। বলতেছিলাম, তনিমা হাদী এবং স্টিভ লেন দুজনেই বছর কয়েক আগে বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের জন্য একটা স্কলারশিপ চালু করলেন “সাইয়েদা তনিমা হাদী এন্ড স্টিভ লেন স্কলারশীপ” টাইটেলে। যার আওতায় একজন বাংলাদেশী স্টুডেন্ট কে বছরে এককালীন ১০০০ ডলার এওয়ার্ড মানি হিসেবে প্রদান করা হয়। এবং আমি ছিলাম তাদের গতো বছরের গর্বিত স্কলার। পাশাপাশি যৌবনে ভারত থেকে আগত অশীতিপর এক প্রবীন দম্পতি পাবর্তী এবং মেনন মোহন ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই এর দুজন আলোকিত এলামনাই। তারা এককালীন “পার্বতি এবং মেনোন মহন স্কলারশীপ” টাইটেলে ১২০০ ডলারের একটা স্কলারশিপ প্রতিষ্টা করেছেন সাউথ এশিয়ান স্টুডেন্টদের জন্য। ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টার গত সেশনে এডিশনাল স্কলারশিপের অংশ হিসেবে এটির জন্য আমাকে মনোনীত করেন।

একইভাবে সেন্টার পাকিস্তান থেকে আগত একজন আলোকিত এলামনাই কর্তৃক সাউথ এশিয়ান স্টুডেন্টদের জন্য প্রতিষ্ঠিত “সিদ্দিক এন্ড উলরিক স্কলারশীপ” টাইটেলে এককালীন ১০০০ ডলার এওয়ার্ড মানি আমাকে প্রদান করে সে বছরে।
সবচে বড়োটা মানে “ম্যান অব দ্যা সিরিজ” টাইপটা ছিলো- ন্যাটিভ হাওয়াইয়ানদের রাজা কামেহামেয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত “কামেহামেয়া স্কুল সোশ্যাল সার্ভিস এওয়ার্ড” এর আওতায় দুই সেমিস্টারে ইন্টার্নশিপ করার শর্তে আমার এককালীন ৪০০০ ডলার প্রাপ্তি।
শেষতক, করোনাকালে ইউনিভার্সিটি আমার মতো গরীব স্টুডেন্টদের জন্য ইমার্জেন্সী ফান্ডিং প্রদান করে। ভার্সিটি এবং ডিপার্টমেন্ট থেকে আমি যথাক্রমে ৩৫০ এবং ৫০০ ডলারের ইমাজেন্সি ফান্ডিং রিসিভ করি। প্রসঙ্গত, এই সাড়ে আটশো ডলার আমি দেশে আর্থিকভাবে অসচ্চল অামার পরিচিত জনদের মধ্যে উপহার হিসেবে শেয়ার করি।

আমি নিশ্চিত আমার নিজের ঢোল নিজে পেটানোর এই লম্বা পোস্টে বেশির ভাগ পাঠকই বিরক্ত হয়ে পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা এখনো পড়ছেন, বিশেষ করে আমার শিক্ষার্থী বা অনুজরা তাদের উদ্দেশ্যে আরো বলতে চাই; আমি যে কেবল আমেরিকা আসাতেই এই ধরণের সুযোগ পেয়েছি তা নয়, আমি দেশে থাকতেও বিশেষ করে ছাত্রাবস্থায় এরকম অসংখ্য সুযোগ খুজে নিয়েছি। যেহেতু, ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে থাকতেই নিজের খরচ নিজে ম্যানেজ করতে হয়েছে, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি একাডেমিক অপরচুনিটিজ গুলো কাজে লাগানোর। আমার বর্তমান ক্যারিয়ার মানে রুয়েটের ফ্যাকাল্টি পজিশনের কথাই বলি, বা ছাত্রবস্থায় ২০১১ তে ইউনেস্কোর ফেলোশীপ পেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের সুযোগের কথায় বলি এবং স্বপ্নের পিএইচডি ফান্ডিং এর কথায় বলি, সবগুলোই আমার সুযোগের সদ্ব্যবহারই বলবো। আমি সুযোগের পেছনে দৌড়ে বেড়িয়েছি। বাকীটা আল্লাহ ভালো জানেন।