শিক্ষক দিবসে শিক্ষা হোক বৈষম্যে মুক্ত

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২০

সারোয়ার মিরনঃ আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এ দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়।

ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয় এ দিনটি।

বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (Education International – EI) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ কয়েক ভাগে বিভক্ত। সরকারী, বেসরকারি, এমপওভুক্ত, ননএমপিও, প্রাইভেট, কিন্ডার গার্টেন ইত্যাদি। সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের সরকারী নিয়ম নীতি, গেজেট এবং জাতীয় স্কেল অনুসারে বেতন ভাতা, আর্থিক সুবিধাদি, পদ পদবি, প্রমোশন ইত্যাদি পেয়ে থাকেন।

বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের মোটামুটি সম্মানি ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। এ ব্যবস্থাকে প্রাইভেটও বলা হয়ে থাকে। এ স্তরে শিক্ষা ব্যবস্থায় কেবলমাত্র ধনীদের অংশগ্রহন লক্ষ্য করা যায়।

এমপিও ব্যবস্থায় শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদানে মূল বেতনে জাতীয় স্কেল ধরা হলেও এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতার পূর্ন শতাংশ হিসেব করা হয়না। মূল বেতনের সাথে কেবল মাত্র থোক বরাদ্ধ হিসেবে এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং পাঁচশত টাকা চিকিৎসা ভাতা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ সরকারী শিক্ষকরা মূল বেতনের সাথে বাড়ি ভাড়া ৪০%-৪৫% পেয়ে থাকেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক সেটা পান না। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে, দশম গ্রেডের একজন এমপিওভূক্ত শিক্ষক ১৬ হাজার বেসিকে বেতন পান। এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া এক হাজার এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। অর্থাৎ মোট বেতন পান (১৬০০০+১০০০+৫০০)=১৭৫০০ টাকা। এখান থেকে কল্যান ফান্ড এবং ভবিষ্যত তহবিল বাবদ বেসিকের ১০শতাংশ হিসেবে ১৬০০ টাকা কর্তন করা হয়। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষক নিট বেতন পান (১৭৫০০-১৬০০)=১৫৯০০ টাকা। এবার লক্ষ্য করুন একজন এমপিও শিক্ষক তার মূল বেতনের চেয়ে কম বেতন হাতে পেয়ে থাকেন।

এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের নেই বদলির ব্যবস্থা। আছে ম্যানেজিং কমিটি নামের খড়গ!

ননএমপিও শিক্ষকদের আরো করুন দশা। এ শ্রেনির মধ্যে রয়েছে বেসরকারী অনার্স মাস্টার্স কোর্স। এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠানে এসব শিক্ষক ননএমপিও। দেশের তিন শতাধিক কলেজের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক ননএমপিও রয়েছেন উচ্চ শিক্ষার এ স্তরে। ননএমপিও হওয়ায় সরকারি কোন বেতন ভাতা নেই। প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র বেতন দেয়া হয় যা দিয়ে বর্তমান বাজারে জীবীকা নির্বাহ অসম্ভব। নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি বিধান মানা হলেও বেতনের বেলায় মানা হয়না। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গতো উনত্রিশ বছর ধরে এ করুন অবস্থা।

একজন বেসরকারি শিক্ষক কর্ম জীবনে দু বারের বেশি পদোন্নতির যোগ্য হবেন না। প্রসাশনিক দপ্তরে পদায়ন হন না। বেসরকারী কলেজের একজন প্রভাষক সহযোগি প্রভাষকের বেশি হতে পারেন না। এখানে রয়েছে কালো কানুন অনুপাত (১ঃ১) প্রথা। একটি কলেজে দুজন প্রভাষক থাকলে একজন সহকারী অধ্যাপক হতে পারবেন। আর অন্য জন প্রভাষক পদে থেকেই কর্মজীবন শেষ করতে হবে।

বেসরকারী শিক্ষকদের বেতন প্রক্রিয়া এখনো ব্রিটিশ আমলে পড়ে রয়েছে। বেতন ভাতা হাতে পেতে পেতে পরবর্তী মাসের অর্ধেক ছোঁয়।

নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতার সরকারি অংশ (এমপিও) পেতে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয়। জোড় বিজোড় মাসের কারিশমায় এক দু মাসের বিনা বেতন। কোন কারনে বা অজুহাতে এমপিওভুক্ত না হতে পারলে বকেয়া পাওয়া যাবে না।

— চলবে

 

লেখকঃ বেসরকারি স্কুল শিক্ষক

সম্পাদকঃ দেশালোক ডটকম