পেঁয়াজঃ দামের আনুপাতিকে ব্যবহারের জ্যামিতিক হ্রাস

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:২২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০২১

সারোয়ার মিরনঃ 

দুশো টাকার পেঁয়াজে আগেও এক মাস যেত! এখনও যায় । আগে দুশো টাকায় ৫ কেজি কিনতাম। এখন এক কেজি কিনি! ব্যস হয়ে গেল সমাধান। কিচ্ছাও খতম!

তরকারিতে একেবারেই না দিলেই নয়, এ পরিমান ব্যবহার পেঁয়াজ ব্যবহার করি। বিজ্ঞানসম্মত কথা হলো- মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা অতি উত্তম। এ অতি হিসেবি মনকে ছিঁকোর নাগাল না পেলে এটা তেঁতো! এ থিওরী বললেও বলতে পারেন। দুর্মূল্যের এ বাজারে এটাই এখন নিম্নমধ্যবিত্তদের জীবন ধারনের খেরোখাতা। হিসেবের ধারাপাত।

সুদুর লন্ডনে পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম ৩০ টাকা। সৌদিঅারবে ২৫টাকা। ভারতে দাম ৫ থেকে ১২টাকা। অতি ঠুঁনকো কারনে ভারত আমাদেরকে পেঁয়াজ না দিলেও শ্রীলংকাকে ভরিয়ে দিয়েছে। ভারতের পেঁয়াজ চাষীরা ন্যায্য দাম না পেয়ে কাঁদছে। বাংলাদেশি হিসেবে আমরাও কাঁদছি পেঁয়াজ ইস্যুতে। দুই কাঁদনে প্রার্থক্য হলো- ভারতে কাঁদে দাম না পেয়ে, অার অামরা কাঁদি বেশি দামে!!

বিয়ে বাড়িতে নতুন বউকে পেঁয়াজ কাটতে দেয়া হতো। চোখে জল এলে ঝগড়াটে, না এলে নিচ্ছ্বল।সুবোধ বধু। বেমালুম কারনে চোখে যদি পানি এসেই যেত তবে তাতে বোঝার উপায় ছিলো না জলটা কি পেঁয়াজের ঝাঁঝে ছিলো নাকি অধিক পরিমান পেঁয়াজ কাটার কষ্টে! তবে এহেন কম্মে বহু নব বধুকে দেখেছি নাকের জল অার চোখের জলে একাকার করতে!! গ্রামাঞ্চলে এ কাজটি সকল পক্ষই সাদরে মেনে নিয়েছে।

গতো মাস তিনেক ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বগতি দেখা গেলেও সরকারি তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি দাম কমানোর ব্যাপারে। এ ব্যাপারে নির্বিকার রাষ্ট্রযন্ত্র। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী সমাধান দিলেন তরকারিতে পেঁয়াজ না খাওয়ার। জোর দিয়ে তিনিও বলেছেন তাঁর বাসায় রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয় না। অামিও এ নিতান্ত গোবেচরা মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এ থিওরী এপ্লাই করছি। দাম বৃদ্ধির আনুপাতিক হারের চেয়েও রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার জ্যামিতিক হারে কমিয়ে দিয়েছি। জব্বর সমাধান।

মহাময় মন্ত্রীবরের দাবি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রনে রয়েছে! যারা দাম বৃদ্ধি বৃদ্ধি বলে হাঁকডাক তুলছে তারা মিথ্যা বলছে!! ওরা দেশদ্রোহী। কুচক্রী! পক্ষান্তরে খবর বেরিয়েছে ভিক্ষুকরা টাকার বদলে পেঁয়াজ ভিক্ষা চাইছে। বিয়েতে মিষ্টির বদলে পেঁয়াজ, পেঁয়াজের গহনার আদান প্রদান হচ্ছে। বাজারে পুলিশের পরিবর্তে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জামাইয়ের চাহিদার পারদ হুহু করে বাড়ছে!! পেঁয়াজ সংরক্ষনে সিন্ধুক বানাচ্ছে অবস্থাশীলরা।

বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হলে অনেক জল ঘোলা হয় জানি। অনেক ঘাঁটের জল খেতে হয়। এ দেশে বাঁশের চেয়েও কঞ্চি বড় অাড়তদারুপি ডাকাত কম নয়। একটি রাষ্ট্র গুটি কয়েক ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা রাখেনা। ভাবনার বিষয়। তা না হলে তিন মাস ধরে পেঁয়াজের ঝাঁঝে জনসাধারনের চোখের জলে নাকের জল মেশাতে হতো না!! সো স্যাড!!

আমার মতো আম জনতার দামের বিপরীতে ব্যবহার কমানোর জ্যামিতিক হিস্যু হয়তো সামগ্রিক ব্যবসায় সিন্ডিকেটে ভাটা হয়তো পড়বে না জানি। কিন্তু বিন্দু বিন্দু জলে সিন্দু হয় সেটা বিশ্বাস করি। ঠাডা পড়ুক ওদের গুদাম ঘরে যারা অধিক দামের লোভে সিনক্রিয়েট করছে। ওদের অভিশাপ দেই। ওদের জমানো প্রতিটি পেঁয়াজই চারা হয়ে ওঠুক। পঁচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াক। হারাম খাক প্রতিটি কাগুজে নোটে। এছাড়া আর কিই বা করার আছে!! পেঁয়াজ ইস্যুতো আর চেতনায় গা ঢলা দেয় না। সরবে যেহেতু অক্ষম তাই নিরবে হোক প্রতিবাদ!

বাজারে চাউর হওয়া গোপন কথা বলি এবার, রাষ্ট্রযন্ত্রের যখন বড় ধরনের কোন টাকার ফান্ডের দরকার পড়ে, ঠিক তখনই রাষ্ট্রীয় কর্তারা বিশেষ বিশেষ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের (চাল, তেল, গ্যাস, বিদ্যুত, পেঁয়াজ) দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট করে! ওখান থেকেই ফান্ড গঠিত হয় বহু কায়দা করে। এ যুক্তিটি আমি বিশ্বাস করিনা। তবে পেঁয়াজ বিষয়ে সরকারি নির্লিপ্ততা এমন গালগপ্পো বিশ্বাস করতে উদ্বুদ্ধ করে! এ ব্যাপারে দোষই বা দেই কারে!!

 

– সম্পাদক, দেশালোক