দেশ, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে ও নৈতিক থাকতে রাজনীতি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২৪

মারজাহান আক্তার:

যারা মনে করেছিল এই দেশ একটা রাজনৈতিক দল দ্বারা শাসিত হবে, তারা ভুলে গিয়েছিল দেশটা বীরের রক্তে স্বাধীন করা, তারা যেই প্রজন্ম রেখে গেছেন সেখানেও রয়েছে লক্ষ লক্ষ বীর, বিজয় অতি সন্নিকটে শুনে যারা আন্দোলনে যুক্ত, বিজয় উৎসবে সামিল হয়েছেন ও সর্বদাই দুই দিকে থেকে সুবিধা ভোগ করেন সেই ব্যক্তিগুলোর প্রতি রইল ঘৃনা ও ধিক্কার। ১৯৭১ ও ২০২৪ এর শহীদ ও বীরদের সম্মানার্থে, আজকে স্বাদ পাওয়া স্বাধীনতার অর্থ আজীবন বজায় রাখতে-

১ম: কৃতজ্ঞতা প্রতিটি নায়ক ও বাঘ হয়ে হুংকার তুলে দেশকে স্বৈরাচারী শাসন হতে মুক্ত করা সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের প্রতি। এর পর কৃতজ্ঞতা শহীদ হওয়া হীরক ও তাদের পরিবার বর্গের প্রতি। কৃতজ্ঞতা সাধারণ জনগণের প্রতি যারা বাকরুদ্ধ হতে হতে সহ্যসীমা ছাড়িয়ে হায়াত আছে বলে কোনমতে বেঁচে আছেন ও সুযোগ পাওয়ামাত্রই তা কাজে লাগিয়ে ফেলেছেন। আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে মুক্ত করতে হবে। জীবন্ত বাঘগুলো বা হীরার টুকরোগুলোর কোনভাবেই যেন একাডেমিক, রাষ্ট্রীয় ও বিদেশেগমন বা উচ্চ শিক্ষার জন্য কোনভাবে সমস্যার সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা এই যুদ্ধে আহত হয়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা। কেননা দেশের ক্রান্তি লগ্নে এদের ভূমিকা হীরক প্রাপ্তির সমতুল্য।

২য়: সবার আগে যেকোন মূল্যে পরাধীনতার শৃঙ্খল বিলুপ্ত করা। পরাধীনতার অদৃশ্য শৃঙ্খল রয়ে যাওয়ায় ৭১ এর মুসলিমলীগের সমর্থক, শহীদ ও বীরদের ত্যাগ ৫৩ বছরেও সফল হয়নি। এমনকি দেশকে নৈরাজ্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করার দ্বারা অব্যাহত রাখায় ২০২৪ আরেকটি স্বাধীনতার প্রয়োজন হয়েছে। তাই পরাধীনতার শৃঙ্খল দেশ থেকে স্বমূলে উৎখাত করা। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরেকটি স্বাধীনতা যুদ্ধ করতে না হয়।

৩য়: সেনা প্রধানের ৩রা আগস্টের কথা প্রত্যাখ্যান করে বলছি “ওনার সুচিন্তিত অভাবে সময় বেশি লাগা, বেশি প্রাণ যাওয়া, ক্ষয়ক্ষতি, মানুষের শারীরিক ও মানসিক চাপ, কষ্ট বেশি তরান্বিত হয়েছিল”। ১৯ই জুলাই যেটার সমাধান হয়ে যেত সেটা হয়েছে ৫ই আগস্ট। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেনা অভ্যুথান সাধারণ ঘটনা। তাই সেনাপ্রধান নিয়োগের শর্তাবলী পুন:নির্ধারন করা দ্বারা আগামীদিনের জন্য যোগ্য, দক্ষ, দেশের ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরতে সক্ষম সেরকম করে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা। কোনভাবেই রাজনৈতিক দলের পছন্দ মত ব্যক্তি নিয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪র্থ: রাজনৈতিক দলগুলোর চক্রাকার আবর্তন ও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত (গণতান্ত্রিক) হওয়া নিশ্চিত করা। স্বৈরাচারী শাসন যেন বাংলার মাটিতে আগামী প্রজন্মকে আর দেখতে না হয় তার পূর্ণ ব্যবস্থা করা। রাজনীতিতে স্বচ্ছ ত্যাগি, কোটি কোটি টাকার মালিক হবে না, ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না, দেশের স্বার্থে কাজ করবে, দেশ সামর্থ্য অনুযায়ী যা দিবে তাতে তৃপ্ত থাকবে ও দেশের স্বাধীনতাকে ধূলিসাৎ করে দিবে না এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া।

৫ম: স্বাধীন দেশ সবার কর্মের মধ্যে দিয়েই সচল থাকবে তাই কারো কাজকে ছোট করে না দেখা। যার যার অবস্থা অনুযায়ী মর্যাদা দেয়া নিশ্চিত করা। কাউকে বাকরুদ্ধ না করে দেয়া। বড় সমস্যার পাশাপাশি ছোট সমস্যাগুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে তার সমাধান করা। কোন ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ না করা। শ্রম অনুযায়ী সকলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। অন্যায়কে অন্যায় বলে সকলের জন্য আইনের শাসন সুনিশ্চিত করা।

৬ষ্ঠ: শিক্ষাখাতে মেগা প্রকল্প দিয়ে সঠিক তদারকি ও বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে মানসম্মত ও সুশিক্ষা নিশ্চিত করনে প্রয়োজনে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করন না হলে শিক্ষকগণের সম্মানজনক বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ (গবেষণার ফলাফল অনুসারে ৭২.৩ শতাংশ)’ ও বর্তমান কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিক্ষক কল্যাণে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে মেধাবীরা শিক্ষকতাকে ১নং পছন্দের পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। সাথে শিক্ষক পিতৃ-মাতৃতুল্য মনোভাবসম্পন্ন পোষণ ও লালন করতে না পারলে ও নৈতিক না হলে ( মানসম্মত ও সুশিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না) তাকে শিক্ষকতা পেশা হতে অব্যাহতি দিতে কোন দ্বিধা না করা।

এছাড়াও দেশ সংস্কারের আরোও অসংখ্য জরুরি বিষয় আছে ক্ষুদ্র মানুষ হিসেবে আমার কাছে এগুলো একেবারে জরুরি মনে হয়েছে। এই দু:সময়ে যাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতিও রইল কৃতজ্ঞতা। এই যুদ্ধই প্রমান করল দেশ ও তার মানুষকে ভালোবাসতে রাজনীতি করার কোন দরকারই নেই। যার যার অবস্থান হতে ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্র ভূমিকা রেখে ও নৈতিকতাবোধ কাজে লাগিয়েও তা করা সম্ভব হয়। আমার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও লাইভ পর্যবেক্ষন থেকে, সবার দেশের প্রতি বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ত্যাগ ও ভালোবাসা দেখে হৃদয় শিক্ত। এভাবেই মনের পশুকে কবর দিয়ে দেশ করা হোক সকলকে নিয়ে, সকলের জন্য বহি:প্রভাবমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক।

 

লেখক: মারজাহান আক্তার

গবেষক ও সমাজবিজ্ঞানী