মানবজাতির অবাধ বিচরণের সবিশেষ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

মারজাহান আক্তার:

“আসমান ও জমিনের সার্বভৌমত্বের অধিকারি একমাত্র আল্লাহ তায়ালা (সুরা বাকারা-১০৭)”। এই জমিনে মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করায় তার মন যেভাবে চাইবে সেই ভাবে চলার বা অবাধে বিচরণ করার কোন সুযোগ আল্লাহ তায়ালা রাখেননি। তাঁর জমিনে মানবজীবন চালিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি কদম নিয়ম মত পেলে চলার নিয়ম তিনি তৈরি করে দিয়ে তা নবী-রাসুলেরগনের মাধ্যমে মানব জাতিকে জানিয়েও দিয়েছেন। আর তা করেছেন সকলের কল্যাণের জন্য যাতে কেউ তাঁর নিয়ামত হতে বঞ্চিত না হয় এবং বন্টনে অনিয়ম না হয়। অবাদে না চলে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলার মধ্য দিয়েই মানবজাতি দুনিয়া ও আখিরাত উভয়স্থানে সফল হতে পারে। তাই বলা যায় ‘মানবজাতির বা জীবনের প্রতিটি ধাপ বা প্রতিটি কদমই নিয়মতান্ত্রিক’।

আমার মতে “যে চলা-ফেরা কোন নৈতিক নিয়ম মেনে হয়ই না তাই আবাধ চলাফেরা”( অবাদ বিচরণ কারীকে চেনা যায় তার চলনে বলনে এমনকি তার সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে) আর এরকম চলা-ফেরা মানুষ ছাড়া অন্য সকল পশু বা প্রাণীর জন্য আল্লাহ প্রযোজ্য করেছেন শুধুমাত্র মানুষের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন। মানুষের বিচরণ হবে সীমাবদ্ধ, নিয়মতান্ত্রিক কিন্তু তা না হয়ে যদি তা পশুর মতো অবাদ হয় তবে শিকার হওয়া, ঘায়েল হওয়া, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান ইত্যাদি ইত্যাদি তার জন্য সাধারন ব্যপার তাই সত্যিকারের সস্মানিত ব্যক্তিদের তার অন্যায় বিষয়কে সমর্থন করে কথা বলা উচিত নয়। আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করে সেসব মানুষ অবাদে চলার কারনে যখন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হন তখন তার সমর্থকরা মনে করে তার সম্মান নষ্ট (যে আল্লাহর অবাধ্য তার সম্মান কি? যার সম্মানই নেই তার সম্মান নষ্ট হয় কি করে?) করা হয়, তার পক্ষে কথা বলে, ব্যথিত হয়, তাকে শাস্তি পাওয়া হতে বাঁচাতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যায়। তারা ভুলে যান নোংরামী বা অন্যায় ভুলে একবার হয় বারবার হয় না। আর ভুল হলে তা পরিহার না করে সেটাতে স্বজ্ঞানে বা স্বেচ্ছায় নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়ে জীবন চালিয়ে নেয়াও অবাদ বিচরণ বা মনের মন্দ ইচ্ছা চালিত বা অন্যায় বা নোংরামি করা তা যেই করুক তার শাস্তি অবশ্যই আবশ্যম্ভাবী এটা আমার কথা নয় মহান আল্লাহ তায়ালার কথা। আপসোস তাদের জন্য যারা অবাদ বিচরণ কারীরকে সমর্থন করে নিজেরাও অন্যায়কারী হয়ে যায়। একজন সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আবাদ বিচরণ বা অন্যায় বা নোংরামি কারা করে? আর যারা করে তারা কোন ভালো মানুষ হতেই পারে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ অবাদে চলা দ্বারা নোংরামি বা পাপ কাজই বেশি হয় কেননা সেখানে শয়তানের পরিপূর্ণ হাত থাকে। আর এই জন্য আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে নোংরামি বা পাপ হতে নিজেকে মুক্ত রাখতে “শয়তানের পথ পরিপূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন নিশ্চয়ই শয়তান মানবজাতির জন্য প্রকাশ্য শত্রু (সুরা বাকারা-২০৮)”। শয়তানের এ পথ ‘কারা’ সর্বদা মাড়ায় বা আলিঙ্গন করে বা জীবনে ধারন ও লালন করে জীবন অতিবাহিত করে সেটা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন।

জন্মসূত্রে মানুষের মধ্যে প্রাণির বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে বলে মানুষ খুব সহজে, যখন-তখন মনের মন্দ ইচ্ছে দ্বারা চালিত হতে বা পশুর রুপ ধারণ করে নোংরামি বা পাপ কাজ করতে পারে বা করে। ‘পশুর এই রুপ হতে মুক্ত হয়ে শ্রেষ্ঠ মাখলুকাতে পরিণত হতে মানুষের বুদ্ধির বিকাশ, শিক্ষা, অভিজ্ঞতার সাথে কঠোর সাধনা ও ত্যাগ করতে হয়’। যা বেশির ভাগ মানুষের দ্বারা হয় না বলে তারা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করলেও পশু হতে বের হওয়ার শিক্ষা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় বলে তারা শিক্ষিত হয়েও পশু থেকে যায় জ্ঞানী হয় না। আর যদি শিক্ষা অর্জন না করে তো তার পশু হতে কোন বাঁধাই থাকে না। পশুরা যেখানে-সেখানে, যখন-তখন, যেভাবে-সেভাবে আবাদে বিচরন করে অবাদ যৌনাচার ও অন্যায় করে তৃপ্তিবোধ করে আর এটা তাদের জন্য স্বাভাবিক। তাদের এই স্বাভাবিকতা স্বাভাবিক নয় আমার আল্লাহর কাছে এবং যারা আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর নিয়ম এখনও মানার চেষ্টা করছে সেসব মানুষের কাছে।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ জন্মগতভাবে অতিমাত্রায় স্বাধীন। এত স্বাধীনতাও যে ভালো নয় তা এদেশের মানুষের বর্তমান ‘নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের রুপ দেখে প্রমানিত’। এদেশের বেশির ভাগ মানুষ বেশি নিজের মনের ইচ্ছা বা স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠে বলে স্বাধীনভাবে জীবন যাপনে খুব বেশি অভ্যস্ত হয়ে যায় সেখানে ভুল থাকলে তা থেকে তাদেরকে সঠিক নিয়মে আনা অনেক সময় সম্ভবপর হয়ে উঠে না।

স্বাধীনভাবে চলার সাথে দুটো বিষয় জড়িত হয় ভালোর দিক ও মন্দ দিক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা মানে মন্দ দিকের হার বেশি। স্বাধীনতা পেয়ে ভালো কাজ করলে তা সকলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে তাতে আল্লাহও খুশি হন। আর মন্দ কাজ করলে তা মন্দ কাজের হার ও মন্দ ব্যাক্তির সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি ও মন্দের চেইনকে দীর্ঘায়িত করে। মন্দ কাজে শয়তানের হাত থাকে বলে এর বৃদ্ধির গতিও অত্যন্ত দ্রুত। অর্থ্যাৎ এদেশের মানুষ তার স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে খারাপ ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে খারাপ কাজে লাগায় যা কখনই মানবজাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।

স্বাধীন সময়টায় ব্যাক্তি অবাধে বা মনের ইচ্ছা দ্বারা চালিত হয়ে থাকে অর্থ্যাৎ একজন মানুষ তার চিন্তা ও কাজে মনের ইচ্ছাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তার মন যা চাই যেভাবে চাই সেভাবেই সে করে থাকে (সেটা কখনও ভালো হয় কখনও মন্দ হয় তবে মন্দের হার খুব বেশি)। ব্যক্তির কাছে মনের ইচ্ছা বা অবাধে চলার গুরুত্বই হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তাতে অন্যের ভালো হোক বা ক্ষতি হোক তা ভাবার মত বিবেকবোধও তার থাকে না বলে যেকোনো মূল্যে সে তার ইচ্ছাকেই বাস্তবতায়ন করে থাকে। নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করা সর্বদা সম্ভব যখন হয় না তখন মানুষ তার ইচ্ছাকে সম্বন্বয় করে ‘দুভাবে’ হয় ‘বাধ্য হয়ে’ নতুবা ‘বিবেকবোধ’ থেকে। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় বর্তমান প্রেক্ষাপটের কারনে ঘরে-বাহিরে সর্বত্রই নিয়মের চেয়ে ব্যক্তির মনের ইচ্ছা প্রাধান্যই বেশি। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত অবাধে বিচরণ করতে গিয়ে বা মনের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আল্লাহ কর্তৃক নিয়ম অমান্য করে অন্যায় করার সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে অনেক দূর গেলেও একসময় পতন আবশ্যম্ভাবী কারন এই পতন তাঁরই নির্দেশ অমান্য করার শাস্তি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা এরুপ করছে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তোমারা যাই করছ সেই সম্পর্কে আমার পূর্ণ মনোযোগ রয়েছে (সুরা বাকারা-৮৫)”।

 

লেখক:

বেসরকারি শিক্ষক এবং এমফিল গবেষক ও ক্ষুদে সমাজবিজ্ঞানী