জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মদিন আজ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২১

ইন্টারনেট থেকে: সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।আজ তার শুভ জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তার ডাক নাম ছিল কমল।

জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত হন।

জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন এবং ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন।

পিতার চাকরির কারণে জিয়াউর রহমান কলকাতা হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন। ভারতবর্ষ ভাগের পর তার বাবা সপরিবারে পাকিস্তানের করাচিতে চলে গেলে তখন জিয়াউর রহমান করাচি একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন।

করাচি একাডেমি থেকে তিনি ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডিজে কলেজে ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৫৩ সালে তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন।

সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
করাচিতে দুই বছর চাকরি করার পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে।

১৯৬৯ সালে মেজর পদে উন্নীত হয়ে জিয়াউর রহমান জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।

অ্যাডভান্সড মিলিটারি অ্যান্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান এবং কয়েক মাস ব্রিটিশ আর্মির সঙ্গেও কাজ করেন।

১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।
১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, মিরসরাই, রামগড়, ফেনী প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন।

জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত যুগপৎ ১১ নম্বর সেক্টরের ও জেড-ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ৪৪তম ব্রিগেডের কমান্ডার নিয়োগ করা হয়, যে ব্রিগেডের সদস্যরা তারই অধীনে ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।

১৯৭২-এর জুন মাসে তিনি কর্নেল পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপ-সেনাপ্রধান পদে নিযুক্ত হন।

১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে এবং ওই বছরের শেষের দিকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ১০ দিন পর জিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতা বিপ্লবের পর জিয়াউর রহমান রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।

১৯৭৬ সালের ৮ মার্চ তিনি মহিলা পুলিশ গঠন করেন। ১৯৭৬ সালে কলম্বোতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ সাত জাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

সে বছরেই তিনি উলশি যদুনাথপুর থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন উদ্বোধন করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর মেজর জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন।

১৯ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করা হয়।

১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন, ১৯৭৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একুশের পদক প্রবর্তন করেন এবং রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েমের উত্তরসূরি হিসেবে ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়াউর রহমান দেশে আবার গণতন্ত্রায়নের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেন। দেশের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, I will make politics difficult for the politicians.

১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন।

রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।

বিপদের সমূহ সম্ভবনা জেনেও জিয়া চট্টগ্রামের স্থানীয় সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ঘঠিত কলহ থামানোর জন্য ১৯৮১ সালের ২৯ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে থাকেন।
পর দিন ৩০ মে গভীর রাতে সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন।

প্রেসিডেন্ট জিয়ার জানাজায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম ঘটে, যেখানে প্রায় ২০ লক্ষ্যাধিক মানুষ সমবেত হন।