রামগতিতে চোর আতংক: ৫গরু হারিয়ে দিশেহারা কাশেমের পরিবার

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২৪

সারোয়ার হোসেন:
কুরবানী ইদে ভালো দাম পাওয়ার আশায় গতো ছয় মাস ধরে ৩টি ষাঁড় এবং দুটি গাভী পালন করছেন আবুল কাশেম। বিভিন্নজন থেকে ধার-দেনা করে প্রয়োজনীয় গো-খাদ্য সামগ্রি কিনছেন। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সবুজগ্রামে।

সোমবার গভীর রাতে সংঘবদ্ধ চোর হানা দিয়ে খোয়াড় থেকে নিয়ে যায় সবগুলো গরু। ভুক্তভোগী কাশেম জানান, রাত একটার সময় খোয়াড় দেখে-শুনে ঘরে ঘুমাতে যাই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোয়ালঘরের তালা খোলা ও শুন্য দেখতে পান। সাথে সাথে পরিবারের একাধিক সদস্যরা আশপাশের এলাকায় গরুগুলো খুঁজতে নেমেছেন। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত এখনো সন্ধান পাননি।

ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যরা জানান, চুরি হওয়া তিনটি ষাঁড়ের মধ্যে দুটি বিক্রি হয়েছিলো। ১লক্ষ ৫হাজার টাকা এবং একটি ৮০হাজার দরদামে বায়না করে গেছেন ক্রেতা। ইদের আগের দিন গরুগুলো হস্তান্তর করার কথা ছিলো। এরমধ্যে চুরি যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। ক্রেতাকে কীভাবে সামলাবেন সে চিন্তায় ভেংগে পড়েছেন তারা। চুরি যাওয়া গরুগুলোর বর্তমান মূল্য আনুমানিক ৫লক্ষ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগি কাশেমের পরিবারের তিন পুরুষ সদস্য ও আত্মীয়দের কয়েকজন মিলে আশপাশের এলাকায় গরুর খোঁজে নেমেছেন। হাটগুলোতেও পাঠিয়েছেন খোঁজ নিতে। শেষ সম্বল গরুগুলো হারিয়ে পরিবারের মহিলা সদস্যরা অনেকটাই নির্বাক, হতাশাগ্রস্ত। গরু না পেলে ধার-দেনা কীভাবে শোধ করবেন সে চিন্তায় পড়েছেন। আশপাশের মানুষজন গরুর পায়ের দাগ দেখে ধারনা করছেন মেঘনা তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় নদীপথে চোরেরা গরুগুলো নিয়ে গেছেন। ভুক্তভোগী পরিবার স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: শামীম নুরনবীকে চুরি হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। ইউপি সদস্য গরুগুলো উদ্ধারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানাতে আত্মীয় স্বজনসহ শতশত গ্রামবাসী বাড়িতে জড়ো হচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় দ্বীপ ইউনিয়ন চর আবদুল্যাহ এবং মেঘনা নদী তীরবর্তী চর আলেকজান্ডার, চরআলগী, চররমিজ, বড়খেরী, চরগাজী ইউনিয়ন ও রামগতি পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডের প্রায় তিন শতাধিক গরুচাষী প্রতিনিয়তই আতংকে রয়েছেন। কুরবানী ইদে এ আতংক বহুগুনে বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে ইদ আসলে গরুচাষী পরিবারের সদস্যরা রাত জেগে পালাক্রমে পাহারা দেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয় না। বেখেয়াল হলেই প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন গরুচাষীর গরু চুরি হচ্ছে। এলাকাবাসী ও সচেতনমহল মনে করেন, নদী তীর হওয়ায় চোরেরা খুব সহজে হানা দিতে পারছে। এছাড়াও বাহন হিসেবে নৌকায় করে সহজে চুরি করে গরুকে দ্রুত পারাপার করা যায়। আর চোরেরা এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। অন্যদিকে রামগতি উপজেলার দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমান্তে মেঘনা নদী এবং ভোলা জেলা সন্ধিপ উপজেলা এবং পূর্বদিকে নোয়াখালী সদর ও সূবর্ণচর উপজেলা সীমান্ত হওয়ায় সহজেই চোরচক্র এলাকা থেকে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে। তিনদিকে নদী এবং সীমান্ত হওয়ায় চোরের দল সহজ রুট হিসেবে উপকূলীয় এলাকাকে বেছে নিয়েছে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন।

এর আগে ১৮মে গভীর রাতে চররমিজ ইউনিয়নের চরমেহার গ্রামের সুয়েটার ফ্যাক্টরি সংলগ্ন কাঞ্চনের বাপের বাড়ী থেকে পিকআপ গাড়ীযোগে চোরচক্র একটি গাভী চুরি করে নিয়ে যায়। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১লক্ষ টাকা বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কাঞ্চন মিয়া। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও গরুটির এখনো সন্ধান পাননি। এছাড়াও চর আবদুল্যাহ, চরআলেকজান্ডার, চরআলগী এবং চররমিজ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই সংঘঠিত হচ্ছে গরু চুরির ঘটনা। নদী পথে সহজে পার হয়ে যাওয়ায় পাকড়াও করা যাচ্ছে না চোরের দলকে।

চর আলেকজান্ডার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামীম আব্বাস সুমন জানান, সকালেই স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে গরু চুরি হওয়ার বিষটি শুনেছি। আশপাশের এলাকা ও হাটবাজার গুলোতে খোঁজ খবর নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারকে। আমরাও চেষ্টা করছি গরু গুলো উদ্ধার করতে। রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মোসলেহ উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। দ্রুত থানায় অভিযোগ করার পাশাপাশি আশপাশে খোঁজ খবর নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।