জুনাইদ আল হাবিব

তরুণ সংবাদকর্মীর মেঘনা তান্ডব দর্শন

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২০

জুনাইদ আল হাবিবঃ আধা কিলোমিটার আগ থেকেই বলা হচ্ছে, সামনে যেতে পারবেন না৷ সামনে যাবেন না। গেলেই বিপদ। কিন্তু, মন মানছেনা। খুব তীরে যেন কিছু একটা হচ্ছে। নদীপাড় থেকে একজন বললো, ভাই আজ আসবেন? আজতো জোয়ার হবে। সকালেই বাতাসের গতিবেগ দেখে একজন বললো, জোয়ার আজ রাস্তায় হাঁটুসম হবে। আমার তেমনটা বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। কারণ, আগের দিন জোয়ার হয়েছিলো, নদী থেকে ১ফুট উঁচু। বিশ্বাস আর অবিশ্বাস নিয়ে নয়, অন্য খেয়ালে পড়ে আছি। হঠাৎ যখন খবর এলো, ভাই আধা ঘন্টা পর আইসেন। জোয়ার হবে।

এদিকে বিদ্যুৎ নেই, রাত ফোনে যা চার্জ দিয়েছি, সকাল হতেই তা খুইয়েছি। সর্বশেষ চার্জ ছিল ২০%। এমন সময় খবর এলো। নদীপাড়ে পথ দিলাম দুপুরে তাড়াহুড়ো করে, গোসল, নামাজ, খেয়ে। এ সময় কী করার? ভেবে কূল পাচ্ছি না। এক ছোট ভাইকে বললাম, ভাই তোমার ফোনটা দাও। প্লাইট মুড কর। আমি যাই নদীপাড়ে। ও না করলো না। চলে গেলাম।

ওই যে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। পথে পথে দেখা হলে, লোকজন বলে, সমানে অবস্থা খারাপ। যাইয়েন না স্যার। কিন্তু, আমার মনটা যে কোনভাবেই মানে না। একটু তীরে যাব। খুব কাছে যেতে চাই। দেখতে চাই, মেঘনা কতটা হিংস্র। পথে পথে বাঁধা, জোয়ারের পানির বাঁধা, ঢেউয়ের বাঁধা, বন-জঙ্গলের বাঁধা। আস্তে আস্তে প্যান্ট-শার্ট, সবই ভিজে গেছে। পথজুড়ে জোয়ারের ধ্বংসযজ্ঞ, মানুষের ঘর, ঘরের ভেতরে খাটে ছুঁই ছুঁই পানি। কেউ কেউ কাঁন্না করছে। সর্বত্র হাহাকার। আমি কাউকেই সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পাইনি৷

একদম তীরে গিয়ে দেখি, জলোচ্ছ্বাসের এ কী তান্ডব। মুহুর্তেই দোকানপাট ভেঙেচুরে ডুবে যাবে। দোকানের মালপত্র সব কিছুই ভেসে যাচ্ছে। দোকানীরা কান্না করছেন আর জোয়ারে বাসা মালপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ ভাবেনি, এভাবে জলোচ্ছ্বাস হবে। কম নয় ৭ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস। বিগত ২০বছরেও মানুষ এমন জলোচ্ছ্বাস দেখেনি।

এ গল্পটা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর মার্টিনের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণাংশ বাতিরখাল মাছ ঘাটের। মাছঘাটের একমাত্র মসজিদটিও জোয়ারে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। একমাত্র ভিডিও ধারণ করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভিডিও ধারণ করাটাও দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মুহুর্তেই জোয়ারের ঢেউ বুকে আঘাত করে। কয়েকবার ক্যামেরা ভিজে যায়। আমি তবুও শক্ত হতে চাই, খুটি করে দাঁড়িয়ে দৃশ্যগুলো ধারণ করতে চাই৷ সমুদ্রগামী ট্রলারে উঠলাম, ড্রোনতো নাই আমার। তাই উপর থেকে ড্রোনের মত করে ভিডিও ফুটেজ নিয়েছি। এভাবে ভিডিওগুলো করেছি। রাত আসলাম, তাও বিদ্যুৎ নাই। রাতের যখন ১১টা, তখন মোটামুটি বিদ্যুৎ পাই। এবার এডিটিং এ বসি। এডিটিং করে ভিডিওটি আপ করতে করতে রাত বেজে যায় ২টায়। জোয়ারের ঢেউয়ের সঙ্গে আমার পা’টা কম যুদ্ধ করেনি। বরাবর ৪ঘন্টা। রাত শেষমেশ পা’টা অবশ হয়ে যায়। রাত পায়ের যন্ত্রনায় ঘুমাতেও কষ্ট হয়। খুব ছটফটানি হয়েছিলো। যাই হোক, ঘুমের পর আল্লাহর রহমতে ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

যে সব এলাকায় জোয়ারের কথা মোটেও চিন্তা করিনি, সে সব এলাকায় জোয়ার হয়েছে ব্যাপক। মানুষের কোটি কোটি টাকার মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে। আজও অনেকের চুলোয় আগুন জ্বলেনি। কিন্তু, এত সমস্যা কেন? শুধু একটা বেড়িবাঁধের অভাব। আমাদের রাষ্ট্র পারে না? এই রাষ্ট্র কী পারে না, রামগতি-কমলনগরের মানুষের জন্য একটা বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা করতে?

[বি: দ্র: ছবি ও লেখা লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।]