রামগতিতে ভুলুয়ার মাটিতেই চলে আ.লীগ নেতার দুটি ইটভাটা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৫:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২৫

দেশালোক:

লক্ষ্মীপুরের অতি পরিচিত একটি নদী ভুলুয়া। এর অবস্থান রামগতির চরগাজী ইউনিয়ন থেকে চররমিজ, চরপোড়াগাছা হয়ে রামগতি অংশ শেষ হয়েছে চর বাদাম ইউনিয়নে। উপজেলার অন্যতম একটি ইউনিয়নের নাম চর পোড়াগাছা। এ ইউনিয়নে রয়েছে অন্তত ৮টি ইটভাটা। এর মধ্যে শুধুমাত্র ১নং ওয়ার্ডেই রয়েছে দুটি। দুটি ইটভাটাই গড়ে ওঠেছে ভুলুয়া নদীর পাড় ঘেঁষে। ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও পানিপ্রবাহে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে।

 

পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নির্বাচিত ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম (কালাম মাঝি) রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভাটার মাঝি থেকে হুট করেই দুটি ইটভাটার মালিক বনে যান। তার মালিকানাধীন ইটভাটা দুটি হচ্ছে মেসার্স কালাম ব্রিক্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং এবং মেসার্স ফাতেমা বিক্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং। ভুলুয়া নদীর পাড় এবং তৎসংলগ্ন সরকারি খাস জমি দখল করে ইটভাটাগুলো স্থাপন করে বিশাল এক সম্রাজ্য গড়েন। ৫ই আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রীতিমত সখ্য গড়ে তোলেন স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে। চলাফেরা এখন তাদের সাথেই। স্থানীয় এসব প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই চালাচ্ছেন অবৈধ দুটি ইটভাটা।

 

বর্ষা মৌসুমের পুুরোটা জুড়েই ভুলুয়া নদীর স্লুইসগেট এলাকার পশ্চিম পাশ থেকে কোডেক বাজার পর্যন্ত নদীর তলদেশের মাটি কেটে স্তুপ করেছেন ইটভাটার পাশেই। এখনো রাতের আঁধারে অবৈধ ট্রাক্টর ট্রলি এবং ভেকু মেশিনের মাধ্যমে মাটি কেটে নিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটায় বাধা দিলে স্থানীয়দের দিচ্ছেন মার-দোরের হুমকি-ধামকি। তাদের অভিযোগ অবৈধ ভাবে নদী থেকে মাটি কাটার ফলে দুপাশে ভাংগন দেখা দিতে পারে। সড়কগুলো যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে স্থায়ী দুর্ভোগের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও ভুলুয়ার মাটি দিয়ে ইট তৈরি করায় দ্বিগুন লাভবান হচ্ছেন। রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া কালাম ঐ ওয়ার্ডের একক আধিপত্য বিস্তার করেন। এলাকায় জনশ্রম্নতি আছে কালামের টাকার কারনেই সব পক্ষ ম্যানেজ।

 

ইটভাটার আগুন ও ধোঁয়ার প্রভাবে বেড়িবাঁধের স্লুইসগেট থেকে হারুন বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের দুপাশে লাগানো সরকারি গাছসহ বিশাল এলাকার গাছপালা মরে গেছে। রাস্তার ধারের বেশ কিছু গাছ ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য কেটে নিয়েছেন তিনি। ইটভাটার চার পাশে থাকা চারটি সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

 

ইটভাটার ধুলো বালি ধোঁয়া এবং আগুনের তাপে বন্ধ হয়ে গেছে একটি নুরানি মাদ্রাসা। প্রায় মুসুল্লি শুন্য হয়ে পড়েছে একটি মসজিদ।
দুটি ইটভাটায় তার মালিকানাধীন রয়েছে ১২টি অবৈধ ট্রাক্টর ট্রলি। এসব অবৈধ যানবাহন চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে একটি সেতু। যে কোনসময়ই এ সেতুটি ধসে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে সেতুর একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সরু এ সেতুটির দুপাশের রেলিং ইতিমধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে।

 

স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে রুটিন মাফিক অভিযান পরিচালনা করলেও স্থানীয়দের অভিযোগ প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা কালাম মাঝির মালিকানাধীন দুটি ইটভাটাতে কখনোই অভিযান পরিচালনা করতে দেখেননি স্থানীয়রা। কথিত আছে সকল পক্ষকে ম্যানেজ করেই নির্ভয়ে চালাচ্ছেন ভাটাগুলো। তার মালিকাধীন ভাটা থেকে ইট পরিবহন এবং ভুলুয়া নদীর তলদেশ থেকে মাটি নেওয়ার সুবিধার্থে নদীর দুপাশে প্রভাব খাটিয়ে কাঁচাসড়ক তৈরির একাধিক প্রকল্প নিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটার প্রভাবে নদী পাড়ের বৃহৎ অংশ জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা মরে পাতাশুণ্য হয়ে পড়েছে। নারকেল, কলা ও সুপারি গাছগুলোতে ফল ধরছেনা। বিবর্ণ হয়ে পড়েছে শত শত একর জমির সয়াবিন ও ধানসহ নানান ফসলের ক্ষেত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আবুল কালাম জানান, আমার জায়গায় আমি ইটভাটা চালাই, নদীর মাটি নয় পাড়ের মাটি দিয়েই কাজ করছি। পারলে কেউ কিছু করে দেখাক। আমি উপরের সবার সাথেই যোগাযোগ রক্ষা করি।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, অবৈধ ইটভাটাগুলোতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।  অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।