ননএমপিও অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক বনাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০২০

মোঃ মেহরাব আলীঃ শিক্ষকতা মহান পেশা, গোটা বিশ্ববাসী জানে ও মানে। বর্তমানে এ পেশায় নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। শিক্ষাকে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে স্বার্থন্বেসি মহল ব্যবহার করছে। পত্রিকায় প্রকাশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অর্থের বিনিময়ে অনার্স কোর্সে অনুমোদন দেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ অর্জিত অর্থ সুচারু ভাবে ব্যয় না করে প্রশ্নবিদ্ধ ভাবে, প্রশ্নবিদ্ধ খাতে ইচ্ছে মত ব্যয় করছে।

শিক্ষার উন্নয়নে কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক নয়। ননএমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোর্স অনুমোদন নিয়ে শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন দেন। তাও আবার করোনা মহামারিতে সেই নগন্য বেতন ভাতাও বন্ধ!

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি ১৬ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার শিক্ষা লাইভে যা বল্লেন অনার্স শিক্ষা ও অনার্স কোর্স খোলার বিষয়ে এবং অনার্স শিক্ষক নিয়োগ ও বেতন ভাতা নিয়ে তা স্ববিরোধী বলে মনে হয়েছে।

১) তিনি বললেন- অনার্স কোর্স খোলার আগে কলেজ ইন্সপেকশন করা হয় যে, অবকাঠামো আছে কি না? তাহলে বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে অবকাঠামোর প্রশ্ন উঠছে কেন? তাহলে জাঃ বিঃ কর্তৃপক্ষের লোক সুবিধা গ্রহণ করে সাবজেক্ট অনুমোদন দিয়েছেন!

২) নিয়োগ পরীক্ষায় – জাতীয় বিশ্ববিদ্যালেয়র ভিসির প্রতিনিধি একজন, সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ যিনি ডিজির প্রতিনিধি একজন, বিষয় এক্সপার্ট একজন, গভার্ণিং বডির সদস্য দুজন মোট পাঁচজনের বোর্ড পরীক্ষা নিরীক্ষা করে৷ লিখিত ও ভাইবা নিয়ে বাছাই করে শিক্ষক নির্বাচন করে থাকে। তাহলে দুর্নীতি হলো কেমন করে? হয়ে থাকলে ভিসির প্রতিনিধি কি করলো? তিনি কি দুর্নীতির সাথে জড়িত?

৩) ভিসি স্যার বললেনন অনার্স শিক্ষক রা বিসিএস দিলো না কেন? বিসি এস পরীক্ষাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কলেজের শিক্ষক, হাইস্কুলের শিক্ষকও দেন না। তারা কি সরকারি সুয়োগ সুবিধা পান না? যারা বিসিএস পায় না, তারা NTRCA পাশ করে সনদ প্রাপ্ত হয়ে ২০০৫ সাল হতে শিক্ষকতার পেশায় এসেছেন। তারা অযোগ্য হলেন কি করে?

৫) তিনি বললেন- কলেজ কর্তৃপক্ষ মুচলেকা দিয়েছেন যে, তারা অনার্স শিক্ষক দের বেতন দিবেন, এখানে জাঃবিঃ কর্তৃপক্ষ বা সরকার এমপিও দিবেন কেন? আপনি একজন শিক্ষক হয়ে কেমন করে হাজার শিক্ষকের বেতন ভাতার দিক বিবেচনা না করে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে কথা না বলে কালো আইন তৈরি করে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিলেন? আপনার কি মানবিক দায় দ্বায়িত্ব নেই! অনার্স শিক্ষকরাতো আপনার সাথে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে এমপিও না নেয়ার কোন চুক্তি বা মুচলেকা দেয়নি। তাহলে কোন যুক্তিতে বলেন, অনার্স শিক্ষকদের এমপিও দাবী অনৈতিক!

৬) তিনি বলেছেন, সরকারি কলেজ ২৭৫ টি, অথচ তাঁর ভাল করে জানা আছে যে বর্তমান সরকার প্রায় ৩২০ টি কলেজ উপজেলা পর্যায়ে সরকারি করেছেন যা আত্মীকরণের আওতাধীন। সেখানে অনার্স শিক্ষকরাও আত্মীকরণ হচ্ছেন।

সরকারি কলেজে আসন সংখ্যা ২২০/৩০০/৪০০ পর্যন্ত আছে। ভর্তি প্রক্রিয়া কোন ছাত্র কোন কলেজে ভর্তি হতে পারবে তাও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করেন। আমার প্রশ্ন এমন কোন সরকারি কলেজ আছে একই বিষয়ে একসাথে এক ক্লাশে ২২০/ ৩০০/৪০০ জন শিক্ষার্থী বসে ক্লাশ করতে পারেন। আর কোন এমন সরকারি শিক্ষক আছেন ৪০০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাশ নিয়োমিত নিতে পারেন।?? তাহলে অবকাঠামো চিন্তা না করে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ চিন্তা না করে কেন ৩০০/৪০০ আসন সংখ্যা দেয়া হচ্ছে?

৭) ভিসি স্যার বলেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ না কি আত্মীয়তার সম্পর্ক বা টাকা পয়সা লেনদেন করে অনার্স শিক্ষকরা নিয়োগ নিয়েছেন। এটা যদি তিনি জানেন তাহলে তা বন্ধ করতে ভুমিকা নিলেন না কেন? এর দায়ভার কার?

৯) শিক্ষক সমাজ জানতে চায়, তিনি একজন গবেষক, ইতিহাসবিদ, বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত। তিনি শিক্ষকদের কল্যাণে কি কি কোন কোন পর্যায়ে ভুমিকা রেখেছেন?

৯) ২০১৩ সাল হতে অনার্স কোর্স যত্রতত্র খোলা হয়েছে, বিশেষ করে ২০১৫, -১৬-১৭ তিন বছরে অনেক বেশি। এ সময়টা তো তাঁরই সময়।

১০) অনার্স শিক্ষকরা এমপিও পেলে মাননীয় ভিসি স্যারের ক্ষতি কি? তিনি কি মনে করেন আজীবন জাঃবিঃ এর ভিসি থাকবেন? অনার্স শিক্ষকরা কি তাঁর শত্রু, বা তাঁর প্রফেশনের বা জীবন জীবীকার বিরুদ্ধে? আমি মনে করি ৭৮% অনার্স শিক্ষক তাঁকে ও তাঁর চিন্তা চেতনাকে ভালবাসে, ও সমর্থন করে। তাহলে একজন শিক্ষাগুরু তাঁর আদর্শের শিষ্য শিক্ষকদের স্বার্থবিরোধী বক্তব্য দেয়া কতখানি গ্রহনীয় ও সহনীয়??

করোনায় তাঁর শিষ্যরা বা অনার্স শিক্ষকরা বেতন ভাতা বিহীন না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, তাঁর নিকট সাহায্যের হাত পেতেছেন। আার তিনি তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে অবসরে যাওয়ার পূর্বে স্মরণী বরণীয় হয়ে থাকবেন এটাই শিষ্যদের আকাংখা। শিক্ষকরা
রাজপথে ভিখারীর মতো মানববন্ধন করবে ভিসি স্যারের মতো ব্যক্তিবর্গ দাঁডিয়ে দাঁডিয়ে দেখবেন তা কারই কাম্য নয়।

লেখকঃ প্রভাষক ও সংগঠক

বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক