রুপালি গিটারওয়ালার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০২০

দেশালোক ডেস্ক: আইউব বাচ্ছু। ব্র্যান্ড গানের জগতে বিশ্বব্র্যান্ড। গুনী এ কন্ঠশিল্পী ছাড়া দু বছর হলো আজ। ২০১৮ সালের আজকের দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে চিরবিদায়  নেন সুরের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চু। আজ এই সুর সম্রাটের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। যার বিমোহিত গীটারের ধ্বনি ঝড় তোলে না দু বছর। রুপালি গীটারের একচ্ছত্র অধিপতি নিরবে নিভৃতে  শুয়ে আছেন অন্ততকালে।

এই রুপালি গিটার ছেড়ে, এক দিন চলে যাব দূরে, বহু দূরে’ এভাবেই গেয়েছিলেন বাংলা ব্যান্ড জগতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। রুপালি গিটার ফেলে চলে যাওয়ার আভাস দিয়েছিলেন অনেক আগেই। তবে সেই সময়টা যেদিন এলো, অশ্রু গোপন করে রাখতে পারেননি তার ভক্তদের কেউই। কয়েক প্রজন্মকে গানের বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। সেই ক্যাসেট-ফিতার কাল পেরিয়ে স্মার্টফোন-ল্যাপটপের যুগে এসেও তার গানের আবেদন কমেনি এতটুকুও। বইয়ের ফাঁকে তার ভিউকার্ড জমানোর সেই উন্মাদনা কখনো কি ভোলা সম্ভব! অটোগ্রাফের জমানা শেষে ফটোগ্রাফের আমলে, বাঙালির চিঠি লেখার অভ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার পরে, ই-মেইল, ফেসবুকের কালে প্রবেশের পরও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকুও।

কত লক্ষ-কোটি বিরহী প্রেমিক তারা ভরা রাতে তার গানকে সঙ্গী করেছেন, সে হিসাব কেউ কি জানে? ফেরারি মন নিয়ে নিয়ন আলোয় হেঁটে যাওয়া তরুণ-তরুণীর বড্ড আপনজন ছিলেন বাচ্চু। ইট-পাথরের শহর ঢাকাবাসীকে সুরের মূর্ছনায় ভাসাতে মঞ্চে কেবল আইয়ুব বাচ্চুর উপস্থিতি থাকলেই হতো। কী এক অদ্ভুত মায়া, টান ছিল তার গিটারে! গভীর কোনো বেদনা থেকেই কি অমন বিরহের সুর তুলতেন তিনি!

হৃদয় স্পর্শ করে যাওয়া অমন সুরের মোহে আচ্ছাদিত থাকত উপস্থিত সবাই। শুধু কি শহর! মফস্বলেও আইয়ুব বাচ্চুর উপস্থিতি মানেই ছিল রোমাঞ্চকর, সারা জীবন মনে রাখার মতো কিছু মুহূর্ত। তবে সবাইকে দুই হাতে আনন্দে বিলিয়ে বেড়ানো আইয়ুব বাচ্চুর সুরের বুকে লুকিয়ে থাকা কান্নার সন্ধান পেয়েছিলেন ক’জনা? সবাইকে ফাঁকি দিয়ে আকাশে উড়াল  দেবেন কেউ কি ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিলেন?

বড্ড অচেনা হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। এভাবেই কি যাওয়ার কথা ছিল! এভাবে কি যেতে হয়! মঞ্চে সুরের ঝঙ্কার তোলা সুরস্রষ্টার চিরবিদায় বেলায় শীতপ্রকৃতির মতোই নির্জীবতা বিরাজ করছিল সর্বত্র। আইয়ুব বাচ্চু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাংলা গানের জগতের একটি অধ্যায়।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। জনপ্রিয় ব্যান্ড দল এলআরবির দলনেতা ছিলেন তিনি। একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা ব্যান্ড জগৎ। ১৯৭৮ সালে তিনি ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে পথচলা শুরু করেন। এরপর ১০ বছর সোলস ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করেন। নব্বইয়ের দশকে তার হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্যান্ড দল এলআরবি’।

তিনি অসংখ্য কালজয়ী, জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। ‘চলো বদলে যাই,’ ‘হাসতে দেখো,’ ‘এখন অনেক রাত,’ ‘রুপালি গিটার’, ‘মেয়ে’ ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি,’ ‘সুখের এ পৃথিবী,’ ‘ফেরারি মন,’ ‘উড়াল দেবো আকাশে,’ ‘বাংলাদেশ,’ ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি,’ ‘এক আকাশের তারা,’ ‘সেই তারা ভরা রাতে,’ ‘কবিতা,’ ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি,’ ‘যেওনা চলে বন্ধু,’ ‘বেলা শেষে ফিরে এসে,’ ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি,’ ‘তিন পুরুষ’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি।

বাংলাদেশের শ্রোতাদের রক কিংবা হার্ডরক গান শোনার অভ্যাস তৈরি করেছেন আইয়ুব বাচ্চুর মতো লিজেন্ড। যতদিন গান করেছেন এক্সপেরিমেন্ট করেই গেছেন। একটা প্যাটার্ন নিয়ে কখনো থেমে থাকেননি। শুধু অর্থনৈতিক বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। দিন যতই গড়িয়েছে নিজেকে বিশ্বমানের উপযোগী করার চেষ্টা করেছেন। নিরন্তর গবেষণা করেছেন মিউজিক নিয়ে। কখনো সুনীল দের সঙ্গে ভায়োলিনের ব্যবহার আবার কখনো বাঁশি নিয়ে চমৎকার এক্সপেরিমেন্ট। যা করেছেন সবকিছুই নিজস্ব কনসেপ্ট থেকেই করেছেন। দেশীয় প্রেক্ষাপটে প্রথম আনপ্লাগড-এর ব্যবহার আইয়ুব বাচ্চুই করেছেন। আর এই কারণেই জাতীয়ভাবে তার গান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু মিউজিকের বিষয়েই নয়, তার ড্রেসআপ থেকে শুরু করে কথা বলার স্টাইল সব কিছুর মধ্যে স্বতন্ত্র একটা ভাব ছিল। সব ধরনের গান করার চেষ্টা করেছেন তিনি। রক কিংবা হার্ডরকের পাশাপাশি রোমান্টিক, সফট সেন্টিমেন্টাল এমনকি সমাজের বিভিন্ন সঙ্গতি অসঙ্গতি তথা গণমানুষের গান করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মিউজিশিয়ান হিসেবে আখ্যা দিলে ভুল হবে না।