আহ! মানব জীবন, জীবনের ধর্ম

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২১
সারোয়ার মিরন: ইসলাম ধর্মমতে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। অন্য ধর্ম গুলোতেও মানুষকে সেরা হিসেবে বলা হয়েছে। সেরা জীব এ মানুষ কতো অসহায়। জীবন কালেও অসহায়, মরে গিয়েও অসহায়। যতদুর জানি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় মনুষ্য লাশকেও সন্মান করতে হয়। এটাই মানুষ মানবতার বহিঃপ্রকাশ। হাতি বেঁচে থাক আর মরে যাক উভয়েই নাকি তার দাম লাখ টাকা!! আর মানুষ? কতোটা নির্মমতার শিকার এক করোনা-ই শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে! চোখের রঙ্গিন চশমাটা সরাতে হবেনা, এমনিতেই দেখতে পাওয়া যায় নির্মম নিয়তির খেল!
বেঁচে থাকতেই মানুষ দেখে হানাহানি, হিংসা বিদ্বেষ, যুদ্ধ হাঙ্গামা, অস্ত্র বারুদে ম ম বিশ্ব। কাক না খেলেও মানুষের মাথা মানুষে খায়। বৈশ্বিক বলয়ে মানবতাবোধ নিন্মমুখী বলেই পৃথিবীর এক প্রান্তে কেউ খাবারে টুইটম্বুর, অন্য প্রান্তে মাটির বিস্কিট গলাধঃকরণ করে মনুষ্য কীট। লোকশ্রুতি আছে একমাত্র মানুষই এমন প্রানি যারা ক্ষুধা লাগলেও খায়, আবার না লাগলেও খায়। কি অদ্ভুদ ব্যাপার তাই না! পৃথিবীতে যে পরিমান রুটি রুজির সংস্থান রয়েছে যার সুষম বন্টন নিশ্চিত করা গেলে আরো দুশো বছর এ পৃথিবীর বয়স বাড়ানো সম্ভব।
বিশ্ব এখন গোলাবারুদ সঞ্চয়ে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে। পারমানবিক সহায় সম্বলে পরম বিশ্বাসী। সর্বত্রই এখন মানুষে মানুষ মারতে উদ্ধর্ত্য। কে কাকে কত সহজে ঠেকিয়ে রেখে চরকা ঘোরাবে তার এন্তেজামে বিশ্ব। কে খেলো আর কে খেলো না সেটা দেখার সময় কই! বৈশ্বিক রাজনীতির করালগ্রাসে বিধ্বস্ত দুর্বল রাষ্ট্র। এ ধরুন এ লেখাটা লেখার সময়েও পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ না খেয়ে আছে। পক্ষান্তরে অর্ধেক আছে প্রয়োজনের চেয়ে বহু গুন বেশি খাবার নিয়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে এ অর্ধেকের উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দিলেও বাকি অভুক্তরা পেট পুরে খেতে পারবে!
অনলাইনে গতো কয়েকদিন ধরে মাইক্রোসফট এর কর্ণধার বিল গেটস্ এর একটি কথা ভাসছে। তিন চার বছর অাগে তিনি একটি বক্তব্যে বলেছেন, ‘বিশ্বে এখন আর মরনাস্ত্রে মানুষ মারা যাবে না, মারা যাবে মহামারিতে। অথচ মানুষ মরনাস্ত্রে বিনিয়োগ করে, হাসপাতাল বা সুরক্ষায় নয়’। একটু খেয়াল করলেই এখনকার পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে তার মিল খুঁজে পাবেন। মানুষ এখন ভাবে নিজের ঘর ভিটিটা উঁচু হোক, রাস্তাটা গোল্লায় গেলে কার কি! পানিতে রাস্তায় লুঙ্গি তুলে চললেও ঘরে তো সেইফ থাকা যাবে!
গতকাল সিলেটে একটা বিদেশি লোক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আছেন। তাকে বহু কাটগড় পুড়িয়ে হাসপাতালে নেয়ার জন্য এম্বুলেন্স আনা গেলেও ওটা উঠাতে যা করা হলো তা এক কথায় জঘন্য। অসুস্থ লোকটি একবার এম্বুলেন্স থেকে পড়েও গেছে। শুধুমাত্র সন্দেহের বশে তাকে কেউ ধরতে আসেনি! পরে অবশ্য স্থানীয় অন্য দু ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। লোকটির শেষ পরিনতি কি হয়েছিলো সেটি জানা না গেলেও অন্তত এটা জানা হয়ে গেছে মানুষ বেঁচে থেকেও কতো অসহায়!
করোনা চিকিত্সায় হাসপাতাল তৈরিতে বাধা দেয়। লাশ দাফন করতে বাধা দেয়। রোগি রাখতে বাধা দেয়। কোয়ারেন্টিন করতে বাধা দেয়! হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়। হায় আল্লাহ! সৃষ্টির সেরা জীব আমরা। কেবলমাত্র রোগ সন্দেহে আমরা কেমন অমানুষ হয়ে যাই। যে ডাক্তারদের আমরা দ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা হিসেবে চিনি জানি সে জাতির কিছু অংশও আজ শাটডাউন করেছে। পালিয়ে গেছে। চেম্বার, হাসপাতাল লক করে দিয়েছে। স্বাভাবিক  রোগি দেখলেও কাছে ঘেঁষতে দেয় না। করোনা দুরে থাক স্বাভাবিক রোগেও এখন চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হতে হচ্ছে! শত সহস্র অনুনয় বিনয়ও টলাতে পারছেনা ডাক্তার কিংবা হাসপাতালের গেট। আপনজন, প্রতিবেশি সবাই দুরে সরে যাচ্ছে। গোসল কিংবা জানাযায় যেতে পারেনা। সৎকারে সংকোচ লাগে। কি জঘন্য বাস্তবতা।
প্লিজ ভাবুন। কার জন্য কি সব করছেন! বৃটিশ রাজ পরিবারের মেয়েও করোনা সংক্রমনে মারা গেছে। অঢেল সহায় সম্পদ পড়ে আছে রোগ দুরে থাক শুধুমাত্র সন্দেহেই আপনী আমি এ পৃথিবীর বুকে কতো বেশি অপাংক্তেয়, উচ্ছিষ্ট! মানুষ মানবতা কতো শতো সহস্র মাইল দুরে অবস্থান করে! অনেক বাঘা বাঘা রাষ্ট্র প্রধান কুপোকাত! ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকায় করোনা আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এ সংকটে বিশ্ব এখন কেউ কারো নয়। নিজেকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। মরার আগেই মরে দেখতে হবে না, বাস্তব প্রমান এ করোনা ভাইরাসেই দেখিয়ে দিচ্ছে। চেনাচ্ছে নিজের ভ্যালু আসলে কতটুকু! সংকটময় এ সময়ে মানুষ চিনে নিন।নিজের মুল্য বুঝুন। মানুষ ঠিক কতোটা অসহায়!
লেখকঃ
শিক্ষক ও ফ্রিল্যান্সার
সম্পাদক: দেশালোক ডটকম
(বি: দ্র: লেখাটি গতো বছরের আজকের এ দিনে লেখা। করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশালোক ডটকমের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।