রামগতিতে তিন শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা, গ্রেফতার-২

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:১১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৫

দেশালোক:

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গত ৩ দিনে সাত থেকে দশ বছর বয়সের তিন শিশু মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার শিশুদের পরিবারের পক্ষে বাদি হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রামগতি থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- সূবর্ণচর উপজেলার চর বাগ্গা গ্রামের মোঃ মোমিনের ছেলে মোঃ জিহাদ (২২), উপজেলার চর নেয়ামত গ্রামের অটোরিকশা চালক বাহার উদ্দিন (৬০)। গ্রেফতারকৃতদের লক্ষ্মীপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর মামলার আসামি চর বাদাম ইউনিয়নের কারামতিয়া এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে মাকসুদকে (৪২) গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে চর নেয়ামত গ্রামের রব রোড এলাকার মোছলেহ উদ্দিনের মেয়ে পূর্ব চর নেয়ামত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় একা পেয়ে স্থানীয় একটি মুরগির খামারের আড়ালে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে একই এলাকার মৃত তছির আহমেদের ছেলে মোঃ বাহার উদ্দিন। এ সময় মেয়ের চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে বাহার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে মেয়ের মা বাদি হয়ে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে বাহার উদ্দিনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অপর ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় চর আফজল গ্রামের মোঃ ইউসুফের ৭ বছরের মেয়েকে স্থানীয় কারী আহমদ উল্যাহ জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম এবং পাশবর্তী চর আফজল নুরানি তালীমুল কোরআন ও এতিমখানা মাদ্রাসা শিক্ষক মোঃ জিহাদ তার রুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা করে মেয়ের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। এতে শিশুটির নাকে মুখে রক্তক্ষরণ হয়। এ ঘটনা দেখে জিহাদ মেয়েকে ছেড়ে দেয়। বাড়িতে না বলার কথা বলে শাসিয়ে দেয় শিশুটিকে। শিশুটিকে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে মেয়েকে থানায় নিয়ে আসে মেয়ের মা। পরে তিনি বাদি হয়ে জিহাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। পরে রাতেই পুলিশ আসামি জিহাদকে গ্রেফতার করে। পর দিন বুধবার সকালে আসামি জিহাদকে আদালত সোপর্দ করা হয়। জিহাদ সূবর্ণচর উপজেলার উত্তর চর বাগ্গা গ্রামের আবদুল মোমিনের ছেলে সে গত দুই বছর ধরে চর আফজল ওই মোয়াজ্জেমের দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
এছাড়াও গত রবিবার দুপুরে রামগতি পৌর ৭নং ওয়ার্ডের সমবায় গ্রাম এলাকায় ৭ বছর বয়সের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত মাকসুদ সম্পর্কে শিশুটির ফুফা হয়। সে উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের কারামতিয়া এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে। পেশায় একজন জেলে। ঘটনার পর মাকসুদকে (৪২) শাস্তি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও বেত্রাঘাত করে এবং কান ধরে উঠবস করিয়ে গ্রামছাড়া করেছেন স্থানীয় মাতবররা।
জানা যায়, শিশুটির বাবা একজন রিকশাচালক। সে ওই এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে তারা থাকেন। স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্টেনের প্রথম শ্রেণীতে পড়ে শিশুটি। মাকসুদ আত্মীয় হওয়ার সুবাধে প্রায়ই তাদের বাসায় যাতায়াত করত। ঘটনার দিন শিশুর মা বাড়িতে না থাকার সুযোগে মাকসুদ ঘরে ঢুকে শিশুটিকে একা পেয়ে জোরপুর্বক তার পরনের পায়জামা খুলতে চেষ্টা করে। শিশুটি তার পরনের পায়জামা খুলতে না দেওয়ায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে শিশুটিকে মারধর করে অভিযুক্ত মাকসুদ। পরে চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে। সুযোগ পেয়ে মাকসুদ পালিয়ে যায়। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা মাকসুদকে আটক করে ছয় বেত্রাঘাত ও কানধরে উঠবস করিয়ে এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলে গ্রামছাড়া করেন। ভবিষ্যতে এ ধরণের কাজ কখনো আর করবেনা এবং এলাকায় আসবেনা বলে তার থেকে মুছলেকা নেন স্থানীয়রা।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে শিশুটির মা বাদি হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় গত তিন দিনে শিশুদের মা বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক তিনটি ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করেন। আসামিদের মধ্যে জিহাদ, বাহার উদ্দিনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। অপর আসামি মাকসুদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।