কে এই পাপুল! Sarwar Sarwar Miran প্রকাশিত: ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২১ দেশালোক: শহিদ ইসলাম ১৯৬৩ সালের ২৮ মে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার কেরোয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও মাতার নাম তহুরুন নেছা। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল নামেও বেশ পরিচিত। শহিদ ইসলাম ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির আবুল খায়ের ভূঁইয়াকে পরাজিত করে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসন থেকে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত কিন্তু মহাজোটের পক্ষ থেকে মো: নোমানকে নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে পাপুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। তবে নোমান নির্বাচন থেকে নিজেকে পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আওয়ামলীগ শহিদ ইসলামকে সমর্থন দেয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন চাইলেও পাননি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টির তৎকালীন সাংসদ নোমান হঠাৎ আত্মগোপনে চলে যান। তখন অভিযোগ ওঠে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান নোমান। পরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সমর্থনপুষ্ট হয়ে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটিতে জয়লাভ করেন পাপুল। নিজে সংসদ সদস্য হওয়ারর পর নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-৪৯ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করান পাপুল। নিজের শ্যালিকাকেও আনেন লাইম লাইটে। কথিত আছে প্রায় ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি নোমানকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখেন। কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ওরফে কাজী পাপুল মূলত আলোচনায় আসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে। অর্থের বিনিময়ে মহাজোট প্রার্থীকে বসিয়ে দিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নির্বাচনে আগে অনুসারীদের মধ্যে শতাধিক দামী বাইক (মোটরসাইকেল) বিতরনের কথাও শোনা গেছে তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচার ও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশীকে কুয়েতে পাঠিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছে বলে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়। কুয়েতের সংবাদমাধ্যম আল-কাবাসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাপুল মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে আর্থিক অংশীদারিত্ব গড়ে কুয়েতে আয় করা বেশির ভাগ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার তথ্য প্রকাশ করা। পরের দিন, অর্থাৎ ২০২০ সালের ৮ জুন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৈনিক গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর। কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এমপি পাপুল নিজের নামে কিছুই করেন না। তিনি বিভিন্ন সাব-এজেন্টের মাধ্যমে মানবপাচার করিয়ে থাকেন। বিশেষ করে ক্লিনিং এবং সিকিউরিটির কাজের নামে তিনি এই মানবপাচার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাপুল যে শুধু অবৈধ পথে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত তা নয়, তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন সব জায়গাতেই নিজের তথ্য গোপন রেখে ব্যবসা করেন। দেশেই জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত দিগন্ত টিভি, নয়া দিগন্ত এবং দিগন্ত মিডিয়ায় তিনি পরিচালকের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন তিন কোটি টাকার বিনিময়ে। অবশ্য এই টাকা তিনি তার ব্যাংক হিসাব থেকে দেননি। তথ্য প্রমাণ না রাখতে নিজের শ্যালিকার হিসাব মাধ্যমে লেনদেন করেছেন। যদিও পাপুল এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। কয়েক মাস আগে কুয়েতের আল কাবাস ও কুয়েত টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে মানবপাচার ও ভিসা-বাণিজ্যের একটি চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের জড়িত থাকার কথা বলা হয়। দুই দেশের একাধিক দৈনিক পত্রিকায় কুয়েতি পত্রিকার বরাত দিয়ে পাপুলের কুয়েতের মানবপাচারের খবরটি প্রচারিত হয়। এসব খবরে বলা হয়, মানবপাচারের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই এমপি। পাপলু নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকার মিরপুরে তার বড় ভাইয়ের বাসায় এসে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৯২ সালে তিনি পড়াশোনার জন্য সাইপ্রাস চলে যান। সেখান থেকে ৯৩ সালে কুয়েত গিয়ে একটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। এর কিছুদিন একজন ভারতীয় পার্টনার নিয়ে কয়েকজন লোককে নিয়ে ক্লিনিংয়ের ব্যবসা শুরু করে। এরপর তিনি বাংলাদেশ থেকে ক্লিনার হিসেবে লোক নেয়া শুরু করেন কুয়েতে। জনপ্রতি আসা-যাওয়ার খরচ কুয়েতে মালিকের কাছ থেকে দেয়া হলেও তিনি বাংলাদেশ থেকে প্রতিটি লোকের কাছ থেকে আনা নেয়ার খরচ নিতেন। তার ভাই চাচাতো মঞ্জু রায়পুর উপজেলা কমিটির বিএনপির সভাপতি। কুয়েতে গিয়ে সেলিনা নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানে সেলিনাকে বিয়ে করে একসঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। সেলিনা ইসলাম ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা এনে আট কোটি টাকার বন্ড দেখিয়ে সিআইপি হন। ২০১৬ সালের শেষের দিকে কুয়েত প্রবাসী কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আসেন। ওই সময়ে তিনি রায়পুর পৌর শহরের আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জামশেদ কবির বাকি বিল্লাহের হাত ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করাসহ মানবসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার ঘোষণা দেন তিনি। পরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে ব্যাপক আর্থিক অনুদান দেয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি নিজেকে সর্বমহলে দানবীর ও ধনকুবের হিসেবে পরিচিতি করাতে সক্ষম হন। -উইকিপিড়িয়া ও ইন্টারনেট অবলম্বনে SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: