স্যাটায়ারঃ অসময়

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২০

ফেসবুক থেকেঃ আমার ভাই রোডস অ্যান্ড হাইওয়েতে আছে। ৩ কোটি টাকা দিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে বাড়ি করতেছে!

আমি বললাম, আপনার ভাইয়ের বেতন কত?
গর্বে ভরা চেহারাটা মুহূর্তে ছাই হয়ে গেলো।

দোস্তো বলিস না, এই শালা ট্রাফিক পুলিশ, শালারা দুই টকারও ঘুষ খায়!
দোস্তো, তোদের ফ্লাটে কত খরচ পড়েছে? এই সব মিলে ৯৭ লাখ।
তোর বাবা তো ট্যাক্সে আছে, বেতন কত? চেহারা আবারও ছাই।

ওদিকে লায়লা তার বয়ফ্রেন্ডকে বলছে, কাবিন কিন্তু ৩০ লাখ টাকা হতে হবে। (বয়ফ্রেন্ড ২৮ হাজার টাকার বেতনের চাকুরি করে!+) না হলে আমার প্রেস্টিজ পাংকচার! ফেবুতে পোস্ট দিয়েছে, “যে ছেলে যৌতুক চায়, তাদের না বলুন!”

এদিকে মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলে কলেজের টিচার, আরেকজন পিডাব্লিউতে চাকুরি করে। মেয়ের বাবা পরেরজনে মত দেয়ায় মেয়ে বলছে, ” বাবা তোমার পছন্দ সেরা”!

এক আত্মীয়ের বাসায় গেলাম। সারা জীবন সততার বুলি আউড়িয়েছেন। মেয়ের জামাই চাকুরি করেন সিটি কর্পোরেশনে। খুব গর্ব করে বলছেন, তার মেয়ে ঘরের ফার্নিচার ৪/৫ বছর পরেই পালটায়। মেয়ে খুব সৌখিন। ৮০ লাখ টাকায় ফ্লাট কিনে আরও ৫০ লাখ টাকা খরচ করছে ইন্টেরিয়র কাজে!
জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান, জামাইয়ের বেতন কতো?
মুখটা আবার সেই পুলিশ অফিসারের মতো ছাই হয়ে গেলো।

আমরা এত নষ্ট হয়েছি, এত নষ্ট হয়েছি যে, আমাদের কোন লজ্জা নেই। ঘুষ আমার অধিকার, কিন্তু কন্ডাকটর ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা চাইলে, “এগুলা মানুষ না। এই টাকা খাইয়া এরা কিছুই করতে পারে না। মানুষের টাকা মাইরা কিছুই করতে পারে না।” অথচ একটু আগেই মোবাইলে আলাপ করছিলো, একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরির জন্য ৯ লাখ আর ১০ লাখের ঘুষের আলাপ!!

কন্ডাকটর গলা কাটছে। গলা কাটছে শিক্ষিত দুর্বৃত্তরাও। শিক্ষিতদের গলাকাটা বড় নির্মম, দেশটাকে এফোড় ওফোঁড় করে দেয়।

কন্ডাকটররা একটা নিদারুণ সত্যি কথা বলে,
“আফনেরা যে কলমের খোচায় কুটি কুটি টাকা মাইরা খান, হেই হিসাব তো আমরা নেই না!”

কথা সত্যি এবং নিদারুণ সত্যি।

আজকে কিছু অসভ্য শ্রমিকদের দেখলাম অ্যাম্বুলেন্সেও কালি দিচ্ছে, আটকাচ্ছে।

সেই অ্যাম্বুলেন্স দেখে মনে পড়ে গেলো এর চেয়ে ভয়াবহ অসভ্য গোষ্ঠীর কথা। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির দালালদের কথা, যারা অতি উচ্চ শিক্ষিত এবং যাদের পেছনে রাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। মেয়াদউত্তীর্ণ ঔষধ, আইসিইউতে রেখে গলা কাটার সেই সব অমানুষদের কথা।

মানুষ হয়তো আছে। সংখ্যাটা কম।

শেষ করি, দুটো উদাহরণ দিয়ে। দুটো চকচকে চেহারার কথা!

শরীয়তপুর নামে একটি জেলা আছে। যেখানকার লাখ দুই ছেলে ইটালি থাকে। সেই এলাকার কোন মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব যদি ইটালির ছেলে হয়, খুশিতে সবার চেহারা চকচক করে (ছেলে বুড়া, ধুরা, বিয়াতো, দুই পোলার বাপ হইলেও সমস্যা নাই)। তবে এই মানুষগুলো খুব সাধারণ।

আর একটা চকচকে চেহারা আপনারা দেখবেন! যারা অসাধারণ!!
মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তা কোথায় হলো, ছেলে কী করে?
যদি ঘুষের ডিপার্টমেন্টের হয়,
দেখবেন মেয়ের বাবা মা, ভাই বোন আর মেয়ের চেহারা খুশিতে কেমন চকচক করে!!

অথচ এই যে অরাজকতা, এই যে ভেজাল জিনিস, এই যে উচ্চমূল্য, এই যে গলাকাটা সেবা, এই যে পেনশনের টাকা তুলতে ফাইলের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যাওয়া, এই যে পরীক্ষায় ভালো করলেও চাকুরি না হওয়া, এই সবের মূলে তো ওই যে যেখান থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলে জিহবা চকচক করে, চেহারায় (নোংরা) খুশির ঢেউ উঠে, সেই দুর্নীতিবাজ শুওরদের কারণে।

বিখ্যাত এক অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, “শুওরের বাচ্চাদের অর্থনীতি”! এই শুওরের বাচ্চারা কারা?

এই লেখা পড়ে পরে যাদের চেহারায় চপেটাঘাত পড়বে, ছাই হয়ে যাবে, তারা।

-ফেসবুক থেকে