আমার জন্মদিনে মেসির বিয়ে এবং সুইস ব্যাংকের টাকায় ভারতে শপিং

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২১

সারোয়ার মিরন:

পবিত্র ঈদুল ফেতরের ব্যস্ততা এবং ব্যক্তিগত কিছু কাজ থাকায় মেসির বিয়েতে যেতে পারিনি। বেচারা মেসি নেমন্ত্রন্ন কার্ড পাঠিয়ে বেশ কয়েকবার ফোনও করেছেন। সাময়িক ভাবে খানিকটা মন খারাপ থাকলেও মেসিকে অভিবাদন জানিয়েছি। বিয়েতে না যেতে পারার কারনটাও বলেছি। আজেন্টিনা’র ইতিহাসে সবচেয়ে জাকঝমকপূর্ন এবং শতাব্দির শ্রেষ্ঠ বিয়েতে থাকতে পারলে মন্দ হতো না। বিশ্বের তাবদ তারকাদের সাথে খানিকটা সময় কাটানো যেতো। আমি আবার শিং মাছের ঝোল আর সাদা ভাত সাথে বেগুন ভর্তা ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারিনা তা জানানোর পর মেসি সেটার ব্যবস্থাও করে রেখেছে।

মেসির বিয়েতে ম্যারাদোনা দাওয়াত না পেয়ে আমার কাছে দু:খ প্রকাশ করাটাও আমি ভালো ভাবে নিতে পারিনি। আরে বাবা তোদের বিষয় আশয় তোরা থামা। আমাকে এত নরমাল কাজে লাগানোর কোন মানে হয় না।

এক জুলাই সকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোন দিয়ে জন্মদিনের উইশ করলেন। ঘোর না কাটতেই জানতে পারলাম আমার জন্মদিন। দেশি বেদেশী অনেক সেলিব্রেটিরা ফোন দিয়েছেন। টেক্সট করেছেন। সর্বত্রই কেবল জন্মদিনের শুভ কামনা। বরেন্য এসব মানুষের এতো ভালোবাসা আমি লুকাবো কোথায়। ত্রিশ বছর পূর্ন হয়ে সরকারী সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সিইও পদে আবেদন করার যোগ্যতা হারানোয় অনেকেই দু:খ প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশে এমন উদ্ভট নীতি ব্যাপক সমালোচনা করে আমার মতামত প্রকাশ করে প্রতিবেদন করেছে বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকা। আমার জন্মদিন বলে কথা। ফেসবুকের আপমর জনতা কাম আমার সকল বন্ধুবরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন এবং মোবারকবাদ। দেশ বিদেশের এতো এতো ভক্তকুলের ভালোবাসায় আমি যারপরানইনা প্লাবিত। অভিভূত।

ঈদের আগমনে এবার আমাদের আনন্দের উপলক্ষ্য ছিলো বহুমূখী। জলজট, যানজট আর সুইস ব্যাংক। এ ব্যাংকে আমারও কিছু টাকা আছে। দেশীয় ভ্যাট আর ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতায় এমাউন্টটা বলা যাবেনা। পত্রিকান্তরে জানা গেছে আমার মতো বাংলাদেশী খেটে খাওয়া মানুষের সুইস ব্যাংকে জমা আছে ছয় হাজার কোটি টাকা মাত্র। আমাদের দেশের পারিবারিক ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে কোন এক অদৃশ্য শক্তি নাকি না গিলে ফেলে। আবার আবার আবগারি শুল্ক নামে প্রতি লাখে এক হাজার টাকা কাটা হয়। এসব বহুমুখী শংকায় খেটে খাওয়া মানুষ গুলো সুইস ব্যাংকমুখী হয়েছে। এতে আমি মন্দ কিছু দেখিনা। আমাদের টাকা বিশ্বের কাজে লাগছে। এতেই আমি ব্যাপক গর্বভতী। টাকা কালো হোক আর সাদা হোক কিংবা পাচার হোক তা বিবেচ্য হবে কেন। ব্যাংকটাকে তো বাঁচাতে হবে। নাকি!

(পারিবারিক ব্যাংক বলতে একটি ব্যাংকে একই পরিবারের চার চারজন সদস্য পরিচালক হতে পারবেন বলে আইন হয়েছে। যা আগে ছিলো দুইজন। উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে আবগারী শুল্ক বিষয়টি বাদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন)

এবারের ঈদ আরো একটি কারনে বেশ আনন্দদায়ক বার্তা এনে দিয়েছে আমার মতো এলিট শ্রেনির নিদারুন ফ্ল্যাটে। নিউজ মতে এবারের ঈদে দেড় লক্ষাধিক এলিট পেশাজীবী পার্শ্ববর্তী দেশের কলকাতায় গেছেন ঈদ শপিং করতে। আমাদের জন্য দারুন সুখকর সংবাদ হলেও দেশীয় ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। আকাশ ভেংগে পড়েছে উনাদের মাথায়। দেশীয় ক্রেতা না থাকায় এলিট বলে খ্যাত শপিং মল ছিলো ক্রেতা শুণ্য। রয়ে গেলো শাড়ি ছুড়ি, পাঞ্জাবী, স্বর্নালংকার এবং প্রসাধনীর বিপুল সমাহার। বিরল খবরও আছে মাত্র ষাট হাজার টাকার পাঞ্জাবীও বিক্রি হয়েছে আমাদের দেশে। শাড়ির কথা আর নাইবা বললাম। আশা নিরাশার খবর যাই মনে করেন না কেন- এবারের ঈদে যাকাতের শাড়ি লুংগি দিতে/নিতে গিয়ে কেউ প্রান হারাননি। কোন হতাহতের খবর রটেনি দেশে।

এবারের ঈদে আমরা বহুগুন বেশি পরিমানে অতিথি আপ্যায়নে ভুমিকা রেখেছি। দেশপ্রেমের পাশাপাশি বিদেশ প্রেমও রেখেছি। কলকাতায় কেনাকাটা করে বিদেশ প্রীতি দেখিয়েছি। আবার ভীন দেশ থেকে আমার ঈদের ঈদিও পেয়েছি। যেমন- বিজিবি সদস্যের একটা লাশ আমরা প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরে পেয়েছি। দাদাদের বুলেটে ধরাদম ত্যাগ করেছে আমারই দেশের একাধিক নরকীট। উপহার, গিফট কিংবা ঈদি যা-ই বলেন না কেন। বলতে আপনাকে হবেই।

সর্বপোরি বাংলা একাডেমী ঈদকে ইদ বানাতে চাইলেও আমার মতো অসাধারন জনতা ঈদ-ই পালন করেছে। ভবিষ্যতে ঈদ-ই পালন করবে। ঈদের সাথে আমাদের সম্পর্ক বহু পুরোনো। ভেতর থেকে ইদ কখনোই নিতে পারিনা। পারবোওনা। বাংলা একাডেমী তুমি তোমার মতো কাজ করে যাও। আর আমরা আমার মতো। তা না হলে ঈদ কেন্দ্রিক কেন এ পরিবর্তন বিতর্ক সামনে আনা হবে। জানতে চাওয়া না চাওয়ার অধিকার সবার হয়তো থাকবে।

ঈদ এসেছে। আবার চলেও গেছে। মাঝখানে রেখে গেছে বেশ কিছুর তাজার রেশ। একারনেই তো আপনী পেলেন একটা আজগুবী প্যাঁচাল। যা হয়তো আপনাকে দিয়েছে বিরক্তের রেশ। হয়তো ফাও প্যাঁচালে আমাকেই বক ঠাওরিয়েছেন। আপনার বহুমূখী প্রতিক্রিয়ায় আমি খুশি। আবেগাপ্লুত। আমার সাথে উপরোক্ত ক্যাঁচাল না মিললেও। বিশ্বের অনেকের সাথে এটি মিলে যাবে। এবং এটাই স্বাভাবিক। হতাশ হওয়ার কারন নেই। আমি সে এলিট নই। নিতান্তই গোবেচারা। আপনার উদারতায় এবার উৎরে গেলেই বাঁচি।

(২০১৭ সালে লেখা। পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো)