তৃপ্তির ঢেঁকুর

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২১

সারোয়ার মিরন:

আব্বাস সাহেবের মনটা সকাল থেকেই খোশ মেজাজে। বহুদিন পর গ্রামে এসেছেন। সামনে ঈদ। গরীর দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর খায়েশে শহর থেকে নিয়ে এসেছেন গাঁইট তিনেক যাকাতের কাপড়। কাপড় অবশ্য তিনি নিজে কেনেন নি। তাঁর কাছে লজ্জা লাগে এত কম দামের কাপড় কিনতে। বাসার কাজের ছেলেটাকে পাটিয়েছেন কেনার জন্য। প্রতিটার দাম দেড়শো টাকা করে বাজেট। অতি চালাক কাজের ছেলেটা প্রতিটাতে ত্রিশ টাকা করে মেরে দিয়েছে। ভাউচারটা দেড়শোই রয়ে গেল।

সকাল থেকে গ্রামে মাইকিং করা হচ্ছে যাকাতের কাপড় দেয়া হবে। টিভি ক্যামেরাম্যানকে আগেই বুকড করা হয়েছে। লাইভ টেলিকাস্ট করা হবে আব্বাস সাহেবের যাকাত প্রদান অনুষ্ঠান। গ্রামের দুঃখী নিরন্ন মানুষেরা দু একজন করে আসতে শুরু করেছেন। সদর দরোজার বাহিরে জড়ো হতে থাকা মানুষের ভীড় দেখে যার পরানইনা বিমোহিত তিনি।বারবার আসছেন সামনের ব্যালকনিতে। গেটের বাহিরে তাকিয়ে দেখেন আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। মনে মনে ভাবতে থাকলেন। তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করবেন। টিভিতে দেখানো হবে তার দান খয়রাত। গেরামের মানুষকে স্বাক্ষুস দেখিয়ে দেবেন তিনি কতোটা দানবীর।

পায়চারির পরিমান ক্রমশঃ বাড়ছে। এ নিয়ে বার পাঁচেক ব্যালকনিতে এসে দেখে গেছেন যাকাত প্রত্যাশি মানুষ গুলোর অসহায় অপেক্ষা।আর এ ব্যাপারটিতেই আব্বাস সাহেব ভীষন মজা পান। নিজেকে ধনবান ভাবেন…।

দীর্ঘ সময় শেষে যাকাত দেয়া শুরু হয়। প্রথম কয়েকটা দেবার পর আব্বাস সাহেব উপরে উঠে যান। হতে পারে তা ক্যামেরা ধারন করার পর আর দরকার নেই তার। এরপর বাকিটা তার কর্মচারীরা বিতরন করেন। পাঁচশো কাপড়ের জন্য আসেন হাজার পাঁচেক মানুষ।কেউ পান কেউ পান না। এরই মধ্যে ভীড় সামলাতে বেশ কয়েকবার লাঠিপেটা করা হয়েছে। না পাওয়াদের দলে সিংহভাগ মানুষ পুরো দিন অপেক্ষার পর ক্রন্দন চেহারায় ফিরে যায় আপন ডেরা অভিমুখে..!

আব্বাস সাহেব সপরিবারে টিভিতে এসব দেখেন বাগান বাড়ির সুরম্য ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমে বসে। পাশে থাকা পানটা মুখে পুরে আবারো ব্যালকনিতে ফিরে আসেন তিনি।ভাবতে থাকেন রাতে আবারো টিভিতে পুনঃপ্রচার করবে তার যাকাতি আয়োজন। অনেকটা মনের অজান্তেই তাকিয়ে থাকেন সদর দরোজা পানে……..

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম