আব্রাহাম লিংকনের চিঠি এবং বিশ্ব শিক্ষক দিবস

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২১
মো: আল আমিন:
————————-
ক্লাশ শেষে শিক্ষক কমন রুমে এসে বসলাম। আমার পর এসে বসল দিন মুহম্মদ স্যার। তিনি নতুন যোগ দিয়েছেন। আমার সাথে এখনো ভালো মত পরিচয় হয়নি।
তিনি পকেট থেকে একটা ছাপানো কাগজ বের করলেন।
আমি দেখলাম এটা একটা চিঠি যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তাঁর পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন।
দিন মুহম্মদ স্যার চিঠিটা আমার সামনে দিয়ে অন্য এক ম্যাডাম করে দেখিয়ে বললেন,” এটা আমি আমার মানিব্যাগে রাখি।”
আমি বললাম, ” অনেকেই রাখে। অনেকেই পড়ে। পড়ে টাক মেরে আব্রাহাম লিংকনের প্রশংসা করে।”
দিন মুহম্মদ স্যার বললেন, “আপনার কাছে কেমন মনে হয়।”
‘ফালতু!’
‘মানে?’
‘এ চিঠিতে যে আদেশ গুলো আব্রাহাম লিংকন দিয়েছিলেন সেগুলোর ফালতু। রূপকথা গল্পের মত। বাস্তবে এ গুলো অচল!
এমন উত্তর পেয়ে দিন মুহম্মদ স্যার অবাক হয়ে বলেন,
“কি বলছেন?”
“হুম ঠিকই বলছি। দেখেন তিনি বলেছিলেন, আমার সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। এখন কার পিতা মাতা কি বলে? ভালো করে পড়ান যাতে ভালো রেজাল্ট করে। জিপিএ ফাইভ পায়। মানুষ এমনই হয়ে যাবে।
আবার দেখেন, লিংকন সাহেব বলেছিলেন, আমার সন্তান কে শিক্ষা দিবেন পাঁচ ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চাইতে একটা উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। এটা কিভাবে শিক্ষা দিবেন বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের? 1 dollar greater than 5 dollar.”
এবার মনে হয় বিরক্ত হয়েই তিনি বলেছেন
“তাই বলে এই চিঠি ফালতু?”
“যেটা বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হবে না, সেটা বলা ফাতরামি নয়?”
“কি বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হয় না?”
“আমাদের স্যারদের কে বর্তমানে দেওয়া হয় পাঠ্যবই গিলাইতে। আর ভালো রেজাল্ট বের করতে। সেটা প্রশ্ন ফাঁস করে হক অথবা নকল করে হোক। দিন শেষে সবাই যে চায় রেজাল্ট।”
তিনি অনিচ্ছায় যুক্তি দিয়ে বললেন “তাইবে লিংকন যে বলেছিলেন, নকল করে পাশ করার চেয়ে অকৃতকার্য অধিক সম্মানজনক এটা ফালতু?”
“অবশ্যই ফালতু! কোন ছাত্র পাশ করল না, ফেল করল। সমাজে তাকে সম্মান দিবে? নাকি অপমানিত করবে? সবাই তাকে ফেল্লু বলে অপমানিত করবে। সে পারবে না পরের ক্লাসে ভর্তি হতে।”
হাল ছেড়ে দেওয়ার মত তিনি বললেন, “আমি আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না।”
পাশে বসে যে ম্যাডামরা আমার কথা শুনছেন তারাও মাথা ঝাঁকিয় জানিয়ে দিচ্ছেন যে তারাও একমত না।
“একমত না হতে পারাই যে স্বাভাবিক। রূপকথার গল্পটা যে বহু কাল থেলে প্রচারিত হয়ে আসছে। এখন কার দিনে ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়েছেন তো চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করে ছাড়াবে। তাদের গায়ে হাত দেওয়া দণ্ডনিয় অপরাধ। আর লিংকন সাহেব বলেছিলেন, সোহাগ করবেন না। কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। মানে প্রয়োজনে হাত তুলেন।”
“আমি আপনার কথা মানতে পারছি না।”
“স্যার, আমি, আপনি বা এই ম্যাডামরা সবাই একমত যে, লিংকন সাহের চিঠিটা সুন্দর। কিন্তু সেটা শিক্ষকদের কাছে না রেখে রাখা উচিৎ যারা অভিভাবক বা যারা শিক্ষা নীতি প্রনয়ণ করেন তাদের কাছে, তাইলেই আমরা আব্রাহাম লিংকের আদেশ মত শিক্ষা দিয়ে আমরা ছাত্রছাত্রী গড়ে তুলতে পারবো।
অন্যথায় না।”
দিন মুহাম্মদ স্যার চুপ হয়ে গেলেন। ম্যাডামরা চুপ হয়ে গেলেন। এখানেই কথা থেমে গেল।
এ কথোপকথন ছিলো আজ থেকে চার বছর আগে। আজ শিক্ষক দিবস। এ দিবসে অনেক প্রিয় ছাত্রছাত্রী আমাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আমি চাই যে, সকল পেশার ভালো মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করুক। ভালোবাসুক।
ক্লাশ শেষে শিক্ষক কমন রুমে এসে বসলাম। আমার পর এসে বসল দিন মুহম্মদ স্যার। তিনি নতুন যোগ দিয়েছেন। আমার সাথে এখনো ভালো মত পরিচয় হয়নি।
তিনি পকেট থেকে একটা ছাপানো কাগজ বের করলেন।
আমি দেখলাম এটা একটা চিঠি যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তাঁর পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন।
দিন মুহম্মদ স্যার চিঠিটা আমার সামনে দিয়ে অন্য এক ম্যাডাম করে দেখিয়ে বললেন,” এটা আমি আমার মানিব্যাগে রাখি।”
আমি বললাম, ” অনেকেই রাখে। অনেকেই পড়ে। পড়ে টাক মেরে আব্রাহাম লিংকনের প্রশংসা করে।”
দিন মুহম্মদ স্যার বললেন, “আপনার কাছে কেমন মনে হয়।”
‘ফালতু!’
‘মানে?’
‘এ চিঠিতে যে আদেশ গুলো আব্রাহাম লিংকন দিয়েছিলেন সেগুলোর ফালতু। রূপকথা গল্পের মত। বাস্তবে এ গুলো অচল!
এমন উত্তর পেয়ে দিন মুহম্মদ স্যার অবাক হয়ে বলেন,
“কি বলছেন?”
“হুম ঠিকই বলছি। দেখেন তিনি বলেছিলেন, আমার সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। এখন কার পিতা মাতা কি বলে? ভালো করে পড়ান যাতে ভালো রেজাল্ট করে। জিপিএ ফাইভ পায়। মানুষ এমনই হয়ে যাবে।
আবার দেখেন, লিংকন সাহেব বলেছিলেন, আমার সন্তান কে শিক্ষা দিবেন পাঁচ ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চাইতে একটা উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। এটা কিভাবে শিক্ষা দিবেন বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের? 1 dollar greater than 5 dollar.”
এবার মনে হয় বিরক্ত হয়েই তিনি বলেছেন
“তাই বলে এই চিঠি ফালতু?”
“যেটা বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হবে না, সেটা বলা ফাতরামি নয়?”
“কি বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হয় না?”
“আমাদের স্যারদের কে বর্তমানে দেওয়া হয় পাঠ্যবই গিলাইতে। আর ভালো রেজাল্ট বের করতে। সেটা প্রশ্ন ফাঁস করে হক অথবা নকল করে হোক। দিন শেষে সবাই যে চায় রেজাল্ট।”
তিনি অনিচ্ছায় যুক্তি দিয়ে বললেন “তাইবে লিংকন যে বলেছিলেন, নকল করে পাশ করার চেয়ে অকৃতকার্য অধিক সম্মানজনক এটা ফালতু?”
“অবশ্যই ফালতু! কোন ছাত্র পাশ করল না, ফেল করল। সমাজে তাকে সম্মান দিবে? নাকি অপমানিত করবে? সবাই তাকে ফেল্লু বলে অপমানিত করবে। সে পারবে না পরের ক্লাসে ভর্তি হতে।”
হাল ছেড়ে দেওয়ার মত তিনি বললেন, “আমি আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না।”
পাশে বসে যে ম্যাডামরা আমার কথা শুনছেন তারাও মাথা ঝাঁকিয় জানিয়ে দিচ্ছেন যে তারাও একমত না।
“একমত না হতে পারাই যে স্বাভাবিক। রূপকথার গল্পটা যে বহু কাল থেলে প্রচারিত হয়ে আসছে। এখন কার দিনে ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়েছেন তো চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করে ছাড়াবে। তাদের গায়ে হাত দেওয়া দণ্ডনিয় অপরাধ। আর লিংকন সাহেব বলেছিলেন, সোহাগ করবেন না। কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। মানে প্রয়োজনে হাত তুলেন।”
“আমি আপনার কথা মানতে পারছি না।”
“স্যার, আমি, আপনি বা এই ম্যাডামরা সবাই একমত যে, লিংকন সাহের চিঠিটা সুন্দর। কিন্তু সেটা শিক্ষকদের কাছে না রেখে রাখা উচিৎ যারা অভিভাবক বা যারা শিক্ষা নীতি প্রনয়ণ করেন তাদের কাছে, তাইলেই আমরা আব্রাহাম লিংকের আদেশ মত শিক্ষা দিয়ে আমরা ছাত্রছাত্রী গড়ে তুলতে পারবো।
অন্যথায় না।”
দিন মুহাম্মদ স্যার চুপ হয়ে গেলেন। ম্যাডামরা চুপ হয়ে গেলেন। এখানেই কথা থেমে গেল।
এ কথোপকথন ছিলো আজ থেকে চার বছর আগে। আজ শিক্ষক দিবস। এ দিবসে অনেক প্রিয় ছাত্রছাত্রী আমাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আমি চাই যে, সকল পেশার ভালো মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করুক। ভালোবাসুক। শুধু শিক্ষকদের পৃথকভাবে না করুক।
–লেখক: একজন শিক্ষক