ভালোবাসায় প্রেম ও কর্পোরেট গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ!

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
সারোয়ার মিরন: কথিত ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আইডিয়াটা কতিপয় মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীর বিকৃত মস্তিষ্কের ফসল। প্রেম ভালোবাসার মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ের ফন্দি মাত্র। আবেগ অনুভুতির সাথে ছলচাতুরী করার নামান্তর।
অন্যদিকে ভালোবাসা দিবসের মুল থিমটা গিলে খেয়েছে প্রেম নামের অদ্ভুদ এক আবেগ। ভালোবাসা আর প্রেমের প্রার্থক্য মিলে মিশে একাকার এখন। অনেকটা গুলিয়ে ফেলার মত ব্যাপার স্যাপার।
কবে যে ভালোবাসা আর প্রেমের প্রার্থক্য বুঝবো আমরা? যতদুর জানি আনা মেরী নামের যুক্তরাজ্যের এক কুমারী যুবতী তার মায়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা প্রকাশের ধারনা থেকেই ভালোবাসা দিবসটির সূচনা করেছেন। পরবর্তীতে বহুকাল ধরে বহু জনের হাত ঘুরে ভালোবাসা দিবসের ধারনা ব্যাপকতা লাভ করেছে। কিন্তু দীর্ঘ এ পরম্পরায় কেউ কোথাও কখনই ভালোবাসা প্রকাশে প্রেম ধারনা ব্যবহার করেন নি।
বাংলাদেশ নামের এ ভূখন্ডে ভালোবাসা দিবসটিকে উদযাপন করা হয় প্রেম দিবস হিসেবে।ভালোবাসা বলতে প্রেমকেই বুঝে থাকে। অথচ ভালোবাসার একটি ক্ষুদ্রতম প্রকাশ হলো প্রেম। ভালোবাসাকে যদি বট বৃক্ষ ধরি প্রেম হবে তার পাতা সাদৃশ্য মাত্র।
আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর থেকে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের নামে এসব কি দেখছি! যুবক যুবতীর নানা রকম অশ্লীলতা আর বেহায়াপনাই যেন এখানে ভালোবাসা প্রকাশের স্মৃতি চিহ্ন। ইজ্জত আব্রু বিসর্জন দেয়াটাই নাকি প্রেমের ঘনত্ব। ইদানিং আবার এ দিবসটির আগে পরে বিভিন্ন দিবস যেমনঃ রোজ দিবস, চকলেট দিবস কিংবা প্রপোজ দিবস নামের আজগুবি দিবস যুক্ত করে ব্যবসায়ী কৌশলের প্রয়োগ ঘটানোও হচ্ছে!!
প্রেমে মজে প্রেমিক প্রেমিকরা। আর ভালোবাসায় মজে সর্বজনে। ভালোবাসার প্রকাশ হতে পারে সন্তান তার বাবা মায়ের প্রতি। স্বামী স্ত্রীতে। প্রেমিক প্রেমিকায়। ছাত্র শিক্ষকে। ছেলে মেয়েতে। বড় ছোটতে। মোদ্দা কথা ভালোবাসা সার্বজনীন। ভালাবাসা প্রকাশে স্থান কাল পাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু প্রেম সীমাবদ্ধ। ক্ষুদ্রাংশ মাত্র।
ভালোবাসা দিবসে সার্বজনীন ভালোবাসা প্রকাশের মাঝে প্রেম আসতেই পারে। তবে কখনই তা বৃহাদার্থে নয়। ক্ষুদ্রাংশে। ভালোবাসা দিবসে কোন ভাবেই প্রেমকে প্রাধান্য দেয়া উচিত নয়। অন্যথায় এ দিবসটির মাত্রা দিনকে দিন ছোট হতেই থাকবে। প্রকৃত ভালোবাসা গৌন হয়ে উঠবে। সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে এ দিনের উদ্দেশ্যের পরিধি।এমনকি ব্যবসায়িক মারপ্যাঁচে এটি হয়ে যেতে পারে পন্যও।
ভালোবাসাকে শুধুমাত্র প্রেমে কুক্ষিগত রাখবো কেন? ভালোবাসা দিবসে প্রেম নামের অদ্ভুদ খেলায় প্রকৃত ভালোবাসাবাসিরা আজ মুখ লুকিয়ে রাখে লজ্জায়। ভাবে লোকে কি ভাববে মায়ের জন্য ফুল নিলে? স্ত্রীর জন্য উপহার কিনলে??
ভালোবাসা ক্ষনিকের বা একদিনে প্রকাশের বিষয় নয়। প্রতিটি দিন প্রতিটি ক্ষনই হোক ভালোবাসার। দিবসটা কেবল মাত্র উপলক্ষ্য। ফুল, কার্ড, চকলেট আর সামান্য উপহারে সীমাবদ্ধ না হোক ভালোবাসা। ভালোবাসা হোক সারা জীবনের জন্য। আমৃত্যু। প্রেম ক্ষয়শীল। আর ভালবাসা স্থায়ী ও সার্বজনীন।
আসুন, ভালোবাসাবাসিতে কার্পন্য না করি। ভালোবাসার জয় হোক।
সম্পাদক: দেশালোক ডটকম