মুন্সি বাড়ি: মেঘনার ভাংগন কবলিত অলিখিত আশ্রয়কেন্দ্র

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:০৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২০
সায়েম মাহমুদ

সায়েম মাহমুদ: ১৯৯৪ সালে জন্ম নেয়ার পর থেকেই দেখছি আলেকজান্ডার – দৌলতখান রুটের লঞ্চঘাট। এরপর আমাদের বাড়ি থেকে দূরত্ব কেবলই কমছে। নানা বাড়ি নদীর ওপারের জেলা ভোলায় হওয়াতে প্রায়ই যাওয়া হত সেখানে। নদী ভাঙ্গার ইতিহাস আর কষ্ট এ অঞ্চলের মানুষের এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা৷ হিসেব করলে হয়ত প্রতিদিনই কমপক্ষে একটি ভিটে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে।

নদীর এমন রাক্ষুসে স্বভাবের কথা সকলেই কম বেশি জানে কিংবা লিখছে। আজ আমি একটা মানবিক বাড়ির কথা বলব বলে মনস্থির করেছি। বাড়িটির নাম কখনও আব্দুস সোবহান মুন্সি বাড়ি। আবার কখনও হাজি ইব্রাহীম মুন্সি বাড়ি লেখা আছে। উল্লেখ্য, আব্দুস সোবহান মুন্সির ৬ (ছয় জন) পুত্রের মধ্যে ইব্রাহীম মুন্সি প্রথম সন্তান। আমি যে বাড়িটির কথা স্পেসিফিকলি বলতে চাচ্ছি সেটাতে ইব্রাহিম মুন্সি বাস করতেন। বর্তমানে পরবর্তী তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্ম বাড়িতে বসবাস করছে৷

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে (পরীক্ষিত তথ্য নয়, নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। ১৯০৫ সালের একটা দলিল আমাদের হাতে এসেছে) আব্দুস সোবহান মুন্সি সাহেব ব্রিটিশদের থেকে এ জমির মালিকানা নিশ্চিত করেছিলেন৷ সে থেকে এ জমির (পরিমান সম্পর্কে কেউ কোন ঠিক তথ্য দিতে পারেনি) মালিক আব্দুস সোবহান মুন্সি। তিনি মারা যাওয়ার পর মোট সম্পত্তির ছয় ভাগের একাংশের মালিক হন ইব্রাহিম মুন্সি৷ ইব্রাহিম মুন্সির মালিকানাধীন এ বাড়ির (শুধু বাড়ি) জমির পরিমান দুই হাজার শতাংশ। উল্লেখিত জমির ভেতরে রয়েছে – ৫ টি, পুকুর-, ১৬টি বসত ঘর, ২৬ প্রজাতির ফল গাছ, নানান রকমের কাঠ গাছ ইত্যাদি।

এবার আসি মূল অংশে। ২০১৩ সালের একটি লেখায় আমি বলেছিলাম যে এ এলাকায় ভাঙ্গন কবলিত মানুষের (যাদের থাকার জায়গা কম) একমাত্র ভরসার জায়গা হাজি ইব্রাহীম মুন্সি বাড়ি। বর্তমানে বাড়িটির নিজস্ব জায়গায় ৪০ এরও বেশি পরিবারের বসবাস। উল্লেখ্য, নতুন করে আসা মানুষদের অনেকেই নাম মাত্র মূল্যে কিছু জমি কিনে সেখানে বসবাস করছে তবে একটা বৃহৎ অংশ থাকছে তাদের (ইব্রাহিম মুন্সির উত্তরাধিকারদের) উদরতায়।

এটিই শেষ নয় । বাড়ির আশ-পাশ ছাড়াও এ বাড়ির মূল মালিকের (ইব্রাহিম মুন্সি) করা আরও কিছু জমি এবং পুকুর (প্রতিটির পরিমান ১৬০শতাংশেরও বেশি) রয়েছে যেখানে বসবাস করছে কমপক্ষে পঞ্চাশ পরিবার।পুকুর তিনটি অবস্থিত প্রথমটি বাড়ির দরজায়। দ্বিতীয় পুকুরটি বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মোল্লাবাড়ির কাছে। অন্য টি জনতা বাজার ফকির বাড়ির পাশে। চর সেকান্দর রাস্তার মাথা থেকে একটু দূরেই ৩৪*৮= ২৭২ শতাংশ জমি রয়েছে যার আয় দিয়ে কোন মুসাফির বিপদে পরলে বা আশ্রয় চাইলে তাদের সহযোগিতার করা হত।

আল্লাহর অশেষ রহমত আর যোগ্য আমানতদার ওসিলায় হয়ত ইব্রাহিম মুন্সির পঞ্চম প্রজন্ম পর্যন্ত এমন রাজকীয় হাল দেখার সুযোগ হচ্ছে। দুঃখের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে রাক্ষুসে মেঘনা! যার করাল থাবা থেকে ইতিমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে একটি দাখিল মাদ্রাসা ও পাচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (২০১৪ এর পরের হিসেব)। বর্তমানে হুমকির মূখে আছে রামগতির প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – বালুরচর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, সাথে আরও একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় (এ হিসেব শুধু এ বাড়ির চারপাশের) ।

বীরদর্পে দাড়িয়ে থাকা এ বাড়িটি হয়ত আগামী কয়েক বছরে নিশ্চিহ্ন হতে পারে আবার আল্লাহর রহমত ও দয়ার বরকতে স্হায়ী হতে পারে যুগযুগ ধরে। সবকিছু হারানোর মূহুর্তে মনে কান্নার ঢেউ ছুটছে নিয়মিতই – হয়ত গাইতে থাকব-

এমন দেশটি কোথাও খুজে পাব না কো তুমি,সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।

(তথ্য সূত্র শেষ পর্বে উপস্থাপন করা হবে)

 

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী (ইংরেজি)

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

ইমেইল: smkiiuc@gmail.com