পেঁয়াজ রিভ্যুলেশনঃ আরেকটা পানিপথের যুদ্ধ সূচনা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২০

সারোয়ার মিরন: আহারে!! লোকটা সাগরে পড়ে মারা গেলো, অথচ মরার সময় পানি খেতে পারেনি!! – এটা কৌতুক।

কথিত আছে কোন এক সময় বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা গেলো। একটু কৌশুলী হলে হয়তো তারা বেঁচেও যেত। কেননা সেখানটায় পানি ছিলো গলাসম। আতংকে হাউমাউ করে পা গুটিয়ে না রেখে সোজাসুজি করে রাখলেই হতো!! -এটা লোক মুখে শোনা।

এই যে ধরেন, বছরে কোরবানীর ঈদ ছাড়া আমরা নিম্নমধ্যবিত্তরা কালভদ্রে আমরা গরুর গোস্ত কিনি! অবশ্য বিয়ে শাদিতে, জেয়াবত খানায়ও টুকটাক খাই। আরো একটা শ্রেনি আছে যারা কোরবানীর ঈদ ছাড়া আর কখনোই গরুর গোস্ত খেতে পারেনা। আবার এমন একটা শ্রেনি আছে যারা প্রায় প্রতিদিনই গরু /খাশি গলাধরন করেন। নির্দিষ্ট সময়ান্তে সবারই জীবন চলে যায় প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই।

এই যে পেঁয়াজ!! তিনশো সাড়ে তিনশো টাকা দাম। একেবারে কোন রকম কারন ছাড়াই এ হরিলুট। দেশের তো বটেই, বিশ্বের ইতিহাসও ব্রেক এ দামের কাছে। সর্বশেষ বাজার অনুযায়ী তিনশোর দিকে হাঁটছে দাম। দু একদিনের মধ্যে তিনশোর মাইলফলক ছুঁলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

দেশে কি জানি রক্ষা একটা কমেডি আছে না!! ও হ্যাঁ, তেল গ্যাস, বিদ্যুত ও বন্দর রক্ষা কমেডি! জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো পেঁয়াজ রক্ষা কমেডি নাই! তাই তো গতো মাস দুয়েক ধরে পেঁয়াজরুপি হীরের দাম লাফাতে লাফাতে হিমালয় জয় করার কাছাকাছি যাওয়া সত্বেও কোন সচেতন নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, সোস্যাল একটিভিস্ট, ত্যানা পেঁছানো সাংঘাতিক, কবি সাহিত্যিক, দল বিরোধিদল কেহই মাঠে ময়দানে নামে নি!! হয়তো সাহসে কুলোয়নি!!

তাহলে কি এভাবেই বেড়ে যাবে পেঁয়াজের দাম!! অক্ষম আমাদের কিইবা করা উচিত। এর মধ্যেই তো হাতি ঘোড়া গেল তল! কোন কুল কিনারা ঠাওরাতে পারেনি। বাড়তে থাকুক, আরো বাড়ুক। আম পাবলিক হিসেবে আমরা যা করতে পারি তা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পেঁয়াজবিহীন রেসিপি এপ্লাই। ব্যস!! হয়ে গেলো একটা বৃহত্ রিভ্যুলেশন। এক্কেবারে ঘটে যাবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ। অনেকটা পানি পথের যুদ্ধের মতো পেঁয়াজ যুদ্ধ।

জ্বী! বস! আমি আপনীই পারি এ সম্মুখ সংগ্রামে স্বশরীরে নিজ নিজ ঘর বাড়িতে নিরাপদ থেকেই অংশ নিতে। আগামী পনের দিন পেঁয়াজ খাবেন না। কিনবেন না। প্লিজ, ভাই ব্রাদাররা কথাটা একটু মানেন। দেখবেন আপনার চোখের সামনেই ডাকাতরুপি আড়তদাররা কিভাবে তাসের ঘরের মতো ভেংগে চুরমার হয়ে যায়! দেউলিয়া হয়ে যায় কিভাবে! সুযোগটা শুধু কাজে লাগান। দেখেন কেরামতি!!

গরুর গোশত যেমন কালেভদ্রে খেলেও দিন যায়, আবার না খেলেও দিন যায়। অনেকে অাছেন তৈলাক্ত খাবার খান না। চিনি খান না, চা পান বিড়ি সিগারেট খান না। তরকারিতে গুঁড়ো মরিচ, আপোসা জিরা পছন্দ করেন না। অতিরিক্ত মসলা খান না। অনেকেই আবার নিরামিষ ভোজী। এসব না খাওয়ার মতো জাস্ট পেঁয়াজটা খাবেন না কয়েকটা দিন। এটা এমন কোন অতি প্রয়োজনীয় মসলাও নয় যে না খেলে জীবন ওপার এপার হয়ে যাবে!! এপ্লাই করে দেখুন কি খেলাটাই না খেলছে!!

লেখার শুরুর দুটি শ্রুতি কথায় নজর দিন। পেঁয়াজের দেশে থেকেও তা না খেয়ে বাঁচুন। হাহুতাশ না করে শিরদাঁড়াটি সোজা করে এবেলা থেকেই পেঁয়াজ খাদ্য তালিকা থেকে দুরে রাখুন। নিজের কাছে থাকা মোক্ষম এবং শেষ অস্ত্রটি ব্যবহার করে পেঁয়াজ রিভুলেশনের কর্মী হোন। ইতিহাস আপনার কথা একদিন না একদিন বলবেই।

চিরায়ত একটা গল্প বলে শেষ করতে চাই। রাজার তিন মেয়ের মধ্যে কোন মেয়ে তাকে বেশি ভালোবাসে তা পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিলেন। তিন মেয়েই বললো, আমি তোমাকে মিষ্টির মতো, লবনের মতো, পেঁয়াজের মতো ভালোবাসি। বড় মেয়ের বাড়িতে গেলেন। সে সব সুস্বাদু ও মিষ্টিময় খাবার খাওয়ালেন। সেজো জন লবন ছাড়া খাবার খাওয়ালেন। ছোট মেয়ে পেঁয়াজ ছাড়া খাওয়ালেন। রাজা বুঝতে পারলেন ছোট মেয়েই তাঁকে বেশি ভালোবাসে। কেননা সে খাবারে পেঁয়াজ না দিয়ে রাজ্যের একটা বিশাল অর্থ অপছয় বাঁচিয়েছে। যা প্রজাদের জন্য কল্যানকর ছিলো।

লেখক: সম্পাদক, দেশালোক ডটকম