বিজয় দিবসের গল্প: বেকারত্বের ভালবাসা

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০২০

স্বার্থান্বেষী পথচারী: পূর্ব আকাশে সূর্য উঠার আগ থেকেই মাথায় ভর করে থাকে এক চিলতে হতাশা আর দুশ্চিন্তা – কি হবে আগামী কাল? সকালের নাস্তা নিয়ে একদম টেনশন হয়না কারণ সকালে একটা টিউশন রাখা হয়েছে এই ভেবে যে ওরা প্রতিদিনই (কখনো কোন কারণে মিস হতেই পারে) ভাল ভাল নাস্তা পরিবেশন করে৷ কিন্তু দুপুরের খাবার নিয়েই একটু চিন্তায় পরতে হয়। রাতের খাবারের কোন ব্যবস্থা না হলেও চলবে কারণ রাতের টিউশন থেকে যা খেতে দেয়া হয় তা দিয়ে খুব সুন্দর মতোই রাত কাটিয়ে দেয়া যায়। বন্ধুরা খেতে বললে হরহামেশাই বলা হয় ‘ডাইট করছি মামা’। রাজ্যের হতাশা সবসময়ই মাথায় থাকা বেকার ছেলেটির মনেও তো ভালবাসা জন্মে – মায়ের প্রতি ভালবাসা, ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা, দেশের প্রতি ভালবাসা, দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা। সে জানে আর কেউ জানুক বা না জানুক, আর কেউ দেখুক বা না দেখুক তার ভালবাসা মনের গভীর থেকেই আসে।

ভালবাসার কোন রূপ যেমন হয়না তেমনি কোন কাঠামো বা প্রকাশও সম্ভবত হয়না সহজে। কে কখন কার প্রতি ভালবাসা অনুভব করে সেটা যার মন সেও বুঝে না যদিও একটি বিখ্যাত গান বলে – মনের হদিস সে-ই জানে যে ধারণ করে —

একটু দ্বিমত করার সুরেই বলব ভালবাসা আরও গভীর কিছু এটা সহজে টের পাওয়া যায় না – আমি প্রথম ভালবাসা অনুভব করি একটি বিড়াল ছানার প্রতি। বিড়ালটি প্রসবের পর মাত্র তিন কি চারদিন আমার কাছে ছিল এরপর আমি আর তাকে কখনও দেখিনি বা দেখলেও হয়ত ঠাওর করতে পারিনি। তবে তার প্রতি ভালবাসা আমাকে কাঁদিয়েছে, খারাপ লেগেছে কতদিন।

মূল জায়গায় ফেরা যাক – বেকার ছেলেটির পকেটে কোন টাকা নেই বললেই চলে – মাসের ১৪ তারিখ জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবস। পথে পথে হাটছে মনের সুখে। সকালে টিউশন থেকে বের হয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে হঠাৎ করে নতুন একটা ভালবাসা সামনে আসল – পকেটে তখন মাত্র ৫০ টাকার একটা ছেড়া ফাটা নোট আছে আর কোন টাকা নেই। কিন্তু ভালবাসার জন্য তো টাকা লাগে না। সে ভালবাসা যখন হয় দেশের জন্য, মাটির জন্য, একটি পতাকার জন্য তখন তা আরও গভীর হয় যার জন্য কতকাল না খেয়ে থাকা, রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া তো বাঙ্গালির ঐতিহ্য ।

রাস্তার ধারে পথশিশুর হাতে নানান সাইজের জাতীয় পতাকা দেখে আর লোভ সামলাতে পারছে না- চোখ ছল ছল করছে এই তো সেই পতাকা যার জন্য লক্ষ তরুন যুবা প্রান বিলিয়ে দিয়েছে। পকেটে যা টাকা আছে তা দিয়ে একটি পতাকা নামক ভালবাসা কিনে ফেললে যা অবশিষ্ট থাকবে তা দিয়ে পথ চলা কষ্টের। কিন্তু ভালবাসার জন্য কোন কষ্টই কষ্ট নয় সেটা যখন হয় পতাকার জন্য, দেশের জন্য তার তাৎপর্য বেড়ে যায় বহুগুন। নিজে কি খাবে, কেমন করে দিন কাটাবে সেসব ভাবতে ভাবতেই হুট করে চোখের সামনে ঝলঝল করতে থাকা একটি পতাকা হাতে পেয়ে রাজ্যের হাসি হাসতে পারাতেই তো রাজ্য জয়ের সার্থকতা— –

স্বার্থান্বেষী পথচারী

sarthanweshi@gmail.com