রামগতিতে দখলে বন্ধ স্লুইসগেট দু’বছর পর পুনরায় চালু Sarwar Sarwar Miran প্রকাশিত: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ সুরাইয়া আক্তার: দখল ও দূষণে স্লুইসগেটের ছয়টি ট্যানেল (পাইপ) বন্ধ থাকায় বন্যার পানি নামতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে- স্থানীয়দের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে একটি স্লুইসগেট পূনরায় চালুর ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুক্রবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (রামগতি উপ-বিভাগ) ইমতিয়াজ মাহমুদ এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল উপজেলার তোরাবগঞ্জ থেকে রামগতি বাজার বেড়ীবাঁধের চর পোড়াগাছায় এ স্লুইসগেট চালু ও ট্যানেল খনন কাজের পরিদর্শন করেন। এসসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহ বিন সফিক, উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, রামগতি থানার ওসি (তদন্ত) কার্তিক চন্দ্র দাস, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা: জামাল উদ্দিন, সদস্য সচিব সিরাজ উদ্দিন, উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুর রহিম, কমলনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল খায়েরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় রামগতি-কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গসহ স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে বন্ধ থাকা স্লুইসগেটটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা, চর বাদাম, চরআলগী এবং চরগাজীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গত একমাস ধরে অতিবৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা ও গত দশ দিনের বন্যায় ভুলুয়া নদীর দুপাশের অসংখ্য মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়ে। ভুলুয়া নদী অবৈধ দখল, পুল কালভার্ট নির্মান, পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়া এবং অবৈধ বাঁধ দেওয়ার ফলে বন্যার পানি এ নদী হয়ে মেঘনায় যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এর ফলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে। গত তিন চার দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এলাকাভেদে কোথাও কোথাও দু থেকে তিনফুট পর্যন্ত পানি কমেছে। পরিদর্শনে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (রামগতি উপবি-ভাগ) ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, ভুলুয়া নদী অংশের পানির উচ্চতার তুলনায় এবং বেড়ীবাঁধের দক্ষিনে পানির ব্যবধান এক থেকে দেড় ফুট নিচে (কম) রয়েছে। এ স্লুইসগেট দিয়ে কালীর খাল এবং ধলীর খাল দুটি দিয়ে পানি সহজে মেঘনায় নামতে পারবে। পাশাপাশি এর কোন প্রভাব বেড়ীবাঁধের দক্ষিনের এলাকাগুলোতে পড়বে না। সঠিক সময়ের মধ্যে স্লুইসগেটটি চালু করার পাশাপাশি তৎসংলগ্ন খাল দুটির প্রতিবন্ধকতা দুর করা গেলে বন্যাকবলিত এলাকার পানি কিছুটা হলেও কমবে। শুক্রবার এবং শনিবার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে স্থাপিত স্লুইসগেট এলাকার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- একটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে স্লুইসগেটের চ্যানেলগুলোর মুখ থেকে মাটি সরানোর কাজ করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। গত তিনদিন ধরে এ কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তারা। এ তিন দিনে ছয়টির মধ্যে চারটি ট্যানেলের দু পাশের মুখে ও ভেতরে জমে থাকা মাটি সরানো গেছে। বাকি দুটির কাজ চলছে। সবকটি চ্যানেলের মাটি সরিয়ে স্লুইসগেটটি পুরোপুরি চালু হতে আরো দু তিন দিন সময় লাগতে পারে। স্থানীয় আবদুল মতিন, নিজাম উদ্দিন, আবদুল খায়েরসহ বেশ কয়েকজন জানান, ১৯৭৫/৭৬ সালে তৎকালীন সরকার এ স্লুইসগেটটি নির্মান করেছে বেড়ীর দক্ষিণ পাশের পানি উত্তর পাশের ভুলুয়া নদীতে নামার জন্য। এখন উল্টোটা হচ্ছে। ভুলুয়ার পানি নদী না হয়ে এ গেট দিয়ে প্রবেশ করছে। খাল থাকায় এতে পানি মেঘনায় যেতে অসুবিধা হবেনা। তারা আরো জানান, মাটি জমে এটি গত দুই বছর ধরে বন্ধ ছিল। স্লুইসগেটটি চালু হচ্ছে এটা আমাদের এবং বন্যার্তদের জন্য খুশির বিষয়। কিন্তু প্রশাসনকে উদ্যোগ নিয়ে সবার আগে ভুলুয়া নদীকে দখলমুক্ত করতে হবে। দ্রুত এ নদীটি খনন করতে হবে তাহলে বর্ষায় আর বন্যার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। পাশাপাশি স্লুইসগেটের দু পাশের মুখ ও তৎসলংগ্ন খাল দখলমুক্ত করার দাবিও তারা জানান। এ সময় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্লুইসগেট চালু এবং তৎসলংগ্ন খাল দখলমুক্ত করতে প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ^াস দেন। এছাড়াও অতিউৎসাহী হয়ে কেউ যেন বেড়ীবাঁধ বা কোন সড়ক কেটে না দিতে পারে সে ব্যাপারে সর্তক থাকবেন বলেও তারা নিশ্চয়তা দিয়েছেন। রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, বন্যার্তদের সহযোগীতায় আমাদের আন্তরিকতার কোন কমতি নেই। বন্যা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি শুধু ভুলুয়া নদী নয়, উপজেলার সব ধরনের অবৈধ দখলদারিত্ব মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। SHARES আইন আদালত বিষয়: