নুরউদ্দিন রোকসার

রামগতি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ রাজনীতি

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২০

নুরউদ্দিন রোকসারঃ খুবই ভালো লাগতো এবং আশস্ত হতাম যদি খবরের বিষয়বস্তু এই রকম হতো- যে আজ ১৯ আগস্ট ২০২০, রামগতি উপজেলার হাজার হাজার পরিবার মেঘনার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে ! অতচ উপজেলা প্রসাশনে জন প্রতিনিধি তাদের খোঁজ-খবর না নেওয়ার অভিযোগ তুলে উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভা থেকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের সাধারণ সভা বয়কট করেছেন!

কিন্তু না! তেমন কিচ্ছু নয়, বরং ভাইরাল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; বৃহত্তর রামগতি উপজেলা #বি_এন_পির_সাবেক_সভাপতি এবং #লক্ষীপুর_জেলা_বি_এন_পির সাবেক সহ সভাপতি, জনাব শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল এর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, সরকারি সম্পদ ও অর্থ আত্মসাৎ এর প্রতিবাদে কিছু ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভা বয়কট করেন। সংবাদ মাধ্যমে তাদের অভিযোগগুলো যেনে ভিষণ পীড়িত হলাম। কি এক্টা হাস্যকর অবস্থা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়, আর রামগতি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি’র এত্তো ক্ষমতা ?? তিনি কোথায় কোন সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন ? বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। আর দুর্নীতি ??? হাহাহাহা… । শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের তিনি নাজেহাল করে ছাড়ছেন- কি হাস্যকর!

আচ্ছা- গেলকিছুদিন আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ছিলো। ১৫ আগস্ট বুজেন তো ?? স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মসূচির আয়োজন কেমন ছিলো, কতজন লোক হয়েছে ? ঐ প্রোগ্রামে কয়জন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন ?? বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনাকে নিলামে উঠিয়ে আর কয় দিন ?? এই লিখায় বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক হলেও কিছু একটা ইঙ্গিত দিয়ে রাখলাম।

প্রসঙ্গক্রমে জানতে চাই- প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে জনদূর্ভোগের সার্বিক চিত্র তুলেধরার জন্য সরকার ডিজিটাল সেবা চালু করেছে- যাতে মফস্বলের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের একটা যোগসূত্র থাকে। কই আজকের জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে সরকারি সাহায্যের আবেদন রেখে কোন ইউপি প্রতিনিধিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর দূর্ভোগের কথা তুলে ধরতে দেখলাম না। অনেক খোঁজ করেছি, একজন প্রতিনিধির তৎপরতাও যদি পাই, অন্যদের উৎসাহীত করতে তাকে তুলে ধরবো।

কিন্তু না! তারা ব্যাস্ত অন্যের পশ্চাৎদেশে অঙ্গুলি প্রদর্শন করতে।

রামগতির সাধারণ মানুষকে কি এরা আসলেই নির্বোধ, বোকা ভাবে ? না‘কি এলাকাবাসীর নিরবতার সুযোগ নিয়ে একটা চিহ্নিত গোষ্ঠী বিশেষ ফায়দা লুটে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে ?? না অন্য কোন উদ্দের্শ ???

রামগতি থেকে দূরে আছি, তাই বলে এলাকার রাজনীতি, বর্তামান সামাজিক অবক্ষয়ের খোঁজ রাখিনা, বিষয়টা একদমই সঠিক নয়। যেহেতু এই জনপদে দির্ঘ্য একটা সময় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলাম, সেহেতু এই এলাকার জনদূর্ভোগের কারণসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে সমাধান জানতে চাওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কারণ শেখ হাসিনার উন্নয়ণ চিত্র তুলে ধরে মানুষের কাছে যেয়ে ভোট ভিক্ষা আমাদের’ই চাইতে হয়। সুতারাং ভবিষ্যতে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ণ কর্মসূচি, স্থানীয় প্রতিনিধিদের এক্টিভিটি নিয়ে মানুষের কাছে সমর্থন চাইতে যাওয়ার মুখ ও সৎ সাহস আছে কি’না জানা-বুজার দরকার আছে।

আজকের ঘটনাটা শুনার পরে দু’এক জায়গায় খোঁজ খবর নিয়ে যৎদূর জানলাম- তাতে রিতিমত হাসি আর লজ্জাস্কর অনুভূতি প্রকাশ্যে আনার ইচ্ছা হলো… বিষয়টা নিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণ কোনদিকে মোড় নিচ্ছে, তার যৎসামান্য হিসেব রাখা সবার জন্য মঙ্গলজনক।

আচ্ছা- বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কে যেন ? ও হ্যাঁ- তিনি রামগতি উপজেলা বিএনপির সাকেব সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০১৪ এবং ১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নৌকা মার্কার ভোট করেছেন, প্রার্থীর নির্বাচনী দায়িত্বে থেকে জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন। তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতের স্পর্শধন্য হয়েছেন, তাদের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর পদধুলি পড়েছে, যখন বঙ্গবন্ধু ‍মুজিব স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনঃগঠনের উদ্দেশ্যে রামগতি সফরে আসেন। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। রেফারেন্সগুলো এই জন্য দিলাম, যাতে কেউ কেউ ছদ্মবেশের আড়ালে লম্বা লেকচার দেওয়ার স্বক্ষমতা হারায়। কারণ বর্তমানে রামগতিতে প্রকৃত আওয়ামী লীগার পরিচয়ে গৌরব প্রকাশ করার সুযোগ কারো নেই। বিষয়গুলো নিয়ে কেউ মতবিরোধে জড়িয়ে দূঃগন্ধ ছড়াক, তা চাইনা। আমার উদ্দের্শ আজকের ঘটনাগুলোর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এবং আমাদের সমাজের জন্য তার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো তুলেধরা।

প্রিয় এলাকাবাসী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রতি অনুরোধক্রমে বলছি- আপনারা সোচ্ছার হোন। ঘটনাগুলো যেন ঐ পর্যায়ে এসে না দাঁড়ায়- যেখানে এলাকা ভিত্তিক আপনার আইডেন্টিটি প্রকাশে সংকোচবোধ হওয়ার উপক্রম হবে। শুধু বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো’র ভাষায় এইটুকুই বলবো, রাজনৈতিকভাবে অসচেতনতার ক্ষতিকর প্রভাব হলো- “রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বা খোঁজ-খবর না রাখার একটি দণ্ড বা সাজা হচ্ছে- আপনি আপনার চেয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা শাসিত হবেন”। আর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার অর্থ এইনয় যে, আপনাকে সক্রিয় কোন রাজনৈতিক দলের কর্মি হতে হবে।

একটি তথ্য দিয়ে শেষ করছি- বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যে বা যিনি’ই হোন না কেন, কারো ব্যাক্তি আক্রোশের পরিণতিক্রমে বর্তমান চেয়ারম্যান পদচ্যুত হলে এই এলাকায় নুতন করে উপ-নির্বাচন হবেনা। হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সুতারাং স্ব স্ব ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্খাসহ শিক্ষিত, সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন কাউকে প্রতিনিধিত্ত্বের আসনে চিন্তা ভাবনারও সুযোগ নেই। এই বিবেচনায় পরবর্তী অবস্থানে কে বা কারা রয়েছে, তাদের স্ট্যাটাস কি ? তা আপনাদের বিবেক বিবেচনাবোধের কাছে প্রশ্ন করুন- আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন।

বিঃদ্রঃ সার্বিক বিবেচনায় আমি আমার জায়গা থেকে অপরাজনীতির উদ্দেশ্যমূলক ঘটনাপ্রবাহের তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এখানে কারো বিরুদ্ধাচরণ এবং বিশেষ কোন উদ্দের্শ নেই।

লেখক

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে)