‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ চার বাংলাদেশিঃ জাতিসংঘের মূল্যায়ন

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২০

দেশালোক ডেস্কঃ চার বাংলাদেশিকে ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ উপাধি দিয়েছে জাতিসংঘটি। মুভি সিনেমায় নয়, বাস্তব জীবনের নায়কের স্বীকৃতি পেয়েছেন চার বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী। ‘বিশ্ব মানবিক দিবস’ উপলক্ষে জাতিসংঘ চলমান পরিস্থিতিতে আর্ত-মানবতার সেবায় বিশেষ অবদানের জন্যে সারা বিশ্বের বেশ কয়েকজনকে বাস্তব জীবনের নায়কের তালিকায় রেখেছে।

জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব মানবিক দিবস’ ছিল গতকাল ১৯ আগস্ট। নভেল করোনাভাইরাসজনিত বৈশ্বিক মহামারির বিশেষ এই পরিস্থিতিতে মানবতার সেবায় স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসা মানুষদের জাতিসংঘের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত, ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নুর ও আঁখি বিরল এ সম্মান পেয়েছেন। করোনা মহামারির সময়ে অন্যদের মতো জীবন রক্ষার্থে গৃহবন্দি হয়ে না থেকে আক্রান্তদের পাশে এবং অসহায় মানুষদের ‘সহায়’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় উল্লিখিত চারজনই মানবিক কার্যক্রমে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বলে মনে করে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া চার বাংলাদেশির মধ্যে তানভীর হাসান সৈকতের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, আমরা সাধারণত টিভি সিনেমায় নায়ক দেখি। যাঁদের জনসাধারণের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে দেখা যায়। বাস্তব জীবনের তেমনই এক নায়ক হলেন তানভীর হাসান সৈকত। সেখানে আরো লেখা হয়, করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যান, তখন সৈকত ক্যাম্পাসে থেকে প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা দেওয়া শুরু করেন। এপ্রিলের শুরু থেকে টানা ১১৬ দিন কার্যক্রম চালানোর পর করোনার প্রকোপ কমলে তিনি সুনামগঞ্জে যান এবং বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা দেন। বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করে এসব কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন সৈকত।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে সৈকতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি মন্তব্য উল্লেখ্য করা হয়। কাদের বলেন, ‘সৈকত ও তার বন্ধুরা মানবতার অন্যতম একটি দৃষ্টান্ত।’

এ ছাড়া প্রতিবেদনে সরোয়ার হোসেন নামের একজন রিকশাচালকের মন্তব্যও তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, ‘সৈকত ভাই না থাকলে আমরা এই মহামারিতে অনাহারে মারা যেতাম।’

বাস্তব জীবনের নায়ক স্বীকৃতি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি আঁখি। একসময় বাংলাদেশের আরো বহু শিশুর মতো শিশুশ্রমে নিয়োজিত আঁখিকে পুনর্বাসনে সহায়তা দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’। বয়সের কারণে স্কুলে ফেরানো না গেলেও, আঁখিকে দরজি কাজের প্রশিক্ষণ দেয় সংস্থাটি। পরে তাঁকে একটি সেলাই মেশিন আর কিছু কাপড় দেয় সংস্থাটি। সেখান থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন নিজেই গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তোলার। বর্তমানে আঁখি তাঁর মা এবং বড় বোনের সহায়তায় নিজের ব্যবসা পরিচালনা করেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে থাকলে দেখা দেয় মাস্ক সংকট। আর তখনই মাস্ক তৈরি শুরু করেন আঁখি। কম দামে আশপাশের দরিদ্র মানুষদের মধ্যে এসব মাস্ক বিক্রি করেন তিনি।

জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি রিজভী হাসানের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। স্থাপত্যবিদ্যার পাঠ চুকিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’-এ কাজ শুরু করেন রিজভী। তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের কাজ পান। তখনই তিনি দেখতে পান বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য স্বল্প খরচে আবাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় আক্রান্ত নারীদের সেবা প্রদানের জন্য স্বল্প খরচে নিরাপদ স্থান গড়ে তোলা শুরু করেন। এসব স্থানে রোহিঙ্গা শিবিরের নারীদের কাউন্সেলিংসহ নানা দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ব্যতিক্রমী এসব স্থাপনার মাধ্যমে বহু নারীকে নিরাপদে সেবা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্র্যাক ও ইউনিসেফ।

অনুবাদের কাজ করে বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছেন আরেক বাংলাদেশি তরুণ সিফাত নূর। জাতিসংঘ মনে করে, যেকোনো সংকটের সময় খাবার, পানি ও আশ্রয়ের মতোই মানুষের দরকার পড়ে তথ্য ও যোগাযোগের। এসব তথ্য ও যোগাযোগ হতে হয় তাদের নিজস্ব ভাষায়। আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে একজন অনুবাদকের কাজ।

জাতিসংঘ বলছে, সিফাত মানবিকতার নায়ক। কারণ, তিনি জটিল, জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন।

২০২০ সালের মার্চে ট্রান্সলেটর উইদাউট বর্ডারস নামে একটি সংস্থায় কাজ শুরুর পর এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি শব্দ বাংলায় অনুবাদ করেছেন সিফাত। আইএফআরসি ও ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার হয়ে এসব শব্দ অনুবাদের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কাছে জীবন রক্ষাকারী তথ্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন তিনি। সম্প্রতি কোভিড-১৯ নিয়ে সিফাতের অনুবাদ কাজের মাধ্যমে বহু মানুষ নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছেন।