এ ভাংগন-জোয়ার সইবো আমরা কেমন করে

নেইমপাম নেইমপাম

বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:২২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২০

দেশালোক সম্পাদকীয়ঃ পঁচিশ কিমি মেঘনা তীর প্রায় পুরোটাই ভাংগে। শুকনো মৌসুমে কিছুটা কম, বর্ষায় দেদারছে। দীর্ঘ এ উপকূল সীমার প্রায় সবটাই অরক্ষিত। ছয় সাত কিলোমিটার যে বেঁড়ীবাধ রয়েছে তাও কাজে দিচ্ছে না। কমলনগরের কাজ হওয়া এক কিমি বাঁধ তো গতো দু বছর ধরেই ভাংগন হুমকির মুখে। কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। কমলনগর মাতাব্বরহাটের এ এক কিমি বাঁধটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হয়নি বলে সঠিক কাজ করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

রামগতির হওয়া সাড়ে পাঁচ কিমি বাঁধের মধ্য আলেকজান্ডার এরিয়ায় সাড়ে চার কিমি এবং রামগতি বাজার এলাকায় এক কিমি। এ দু অংশের বাঁধের কাজটা ঐ দুই অংশে নদী ভাংগন কিছুটা রোধ করলেও বাকি বিশ কিলোমিটার দিয়েই ভাংগন চলমান। কিছু কিছু এলাকায় তো বাঁধের পাশ দিয়েই মেঘনা ভাংগতে ভাংগতে অনেকটা ভিতরে ঢুকে পড়েছে!!

প্রয়োজনের তুলনায় এ নগন্য বাঁধ না পারছে ভাংগন রোধ করতে। না পারছে জোয়ার ঠেকাতে! রামগতি পৌরসভা অংশে বেড়ীবাঁধ থাকলেও একাধিক খালে স্লুইসগেট না থাকা জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। রামগতি অংশে বেড়ীবাঁধের পশ্চিম মাথা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে! কমলনগরে তো দু পাশেই খোলা!!

কথায় কথায় জোয়ারের পানি! অমবশ্যা পুর্নিমায় তো কথায়ই নেই। ঝড় জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টিতে করুন অবস্থা বিরাজ করে উপকূল জুড়ে!

রামগতি কমলনগর উপজেলার প্রায় পঁয়ত্রিশটি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়তই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। রাষ্ট্র পক্ষ কিংবা পাউবো কেউ পাশে থাকেনি। দু এক কেজি চাল ডালে কি আর ছিঁড়ে ভেজে!!

উপজেলা দুটির মানুষ আজন্মই অবহেলিত। সরকারও উদাসীন। না হলে বহুমুখী প্রকল্প হিসেবে বারশো কোটি টাকার কাজটি কেন দুইশো কোটির পর হারিয়ে গেলো!! এখন কেন আবার তেত্রিশশো কোটির প্রজেক্টের মুলো ঝুলবে!!

কবে শেষ হবে এ প্রজেক্ট প্রজেক্ট খেলা! শংকায় আছি এ খেলায় ফলাফল আসতে না আসতে কি আবার মেঘনা থেমে থাকবে! জোয়ারের ভয়াবহতা রুখে যাবে! রামগতি কমলনগর টিকে থাকবে তো!

স্বাধীনতার পর থেকে ছোট বড় বহু বাঁধ হয়েছে। বিশ্ববেড়ী হয়েছে। সবই অপরিকল্পিত। স্থায়ী সমাধান ভাগ্যে জোটেনি বৃহত্তর রামগতির।

পঞ্চান্ন হাজার বর্গ মাইলের এ বাংলাদেশে তিনশো বর্গ কিমি আয়তনের এ রামগতি কমলনগর হয়তো কিছুই না! কিন্তু এখানের সাড়ে চার লক্ষ মানুষ দেশের অনেক কিছু। ভোটের হিসেবে খতিয়ানভুক্ত!!

উন্নয়নের এ মহা সড়কে জৈবিক চাহিদার কিছুটা সংস্থান হলেও বাসস্থানের নিশ্চয়তা মেলেনি এখনো! রামগতি কমলনগরের এমন হাজার হাজার পরিবার আছেন যারা একাধিক বার সর্বস্ব খুইয়েছেন মেঘনার ভাংগনে। মুক্তি মেলেনি!! আজ ভাংগনেও দিশেহারা, জোয়ারেও গলায় কাঁটা!!

সাবেক সাংসদ মোঃ আবদুল্যাহ (আল মামুন) কে ধন্যবাদ।দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থাকা ফাইলটি নিজ খরচে বারশো কোটি টাকার কাজটির প্রথম পর্যায়ের বাজেটে সাড়ে ছয় কিমি বেড়ীবাঁধ করেছেন। এরপর সাংসদ পাল্টেছে, প্রজেক্টও ঘোত্তা খেয়েছে। নতুন সাংসদ মেজর (অব.) আবদুল মান্নান নতুন করে চেষ্ঠা করছেন হয়তো। লোক মারফত শোনা। কিন্তু এ প্রজেক্ট কবে পাশ হবে! কবে বাজেটে বরাদ্ধ হবে? কবে কাজ শুরু হবে? সেটা আর কতো সময়!

সরকারী কাজ! দীর্ঘসূত্রিতা অনেক পথের! কিন্ত আমাদের প্রয়োজন এখনই। কি থেকে কি করবো! আমরা বাজেট ফাজেট আপাতত বুঝিনা। বুঝি কেবল মেঘনার বহুমুখী করাল গ্রাস থেকে জনভুমি বাঁচানোর প্রচেষ্টা।

আর এ প্রচেষ্টা আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। দেরি হলেই আনুপাতিক হারে কমতে থাকবে রামগতি কমলনগরের আয়তন। সাথে সাথে বাড়তে থাকবে দু লক্ষাধিক লোকের দুর্ভোগ! মানুষ মানবতার এ সময়ে ঢ়া বড্ডো বেমানান। হে মানবতার মা! আমাদের বাঁচান প্লিজ।

-সারোয়ার মিরন
সম্পাদক, দেশালোক