ভাসানচর – স্বপ্নপুরী হতে চলা এক জনপদ

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৯:০১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২০

মো: আইউব খান: বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলের মেঘনা মোহনায় অবস্থিত নান্দনিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সমারোহে গড়ে উঠেছে ভাসানচর।স্থানীয়দের কাছে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত এই দ্বীপটি সন্দ্বীপের নিকটবর্তী হলেও এটি মূলত নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চর ইশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত। মহিষ পালনের জন্য বিখ্যাত ৬৫ বর্গ কিলোমিটারের দ্বীপটি এখন একটি নগরে পরিণত হয়েছে।২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে” আশ্রয়ণ-৩”নামে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।যার বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।প্রকল্প কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেশি-বিদেশি ৩২ টি বহুজাতিক কোম্পানি ৩ বছরের ও কম সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে।এই মহা কর্মযজ্ঞের মূল লক্ষ হলো একুশ শতকের এই বিশ্বে জন্ম নেওয়া রাষ্ট্র ও নাগরিক পরচয়বিহীন সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী রোহিঙাদের আশ্রয় দেওয়া ।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা সমর্থিত অং সান সুচির সরকারের “অপারেশন ক্লিয়ারেন্স”নামের বর্বর ও নিষ্ঠুরতম অভিযানের সময় পালিয়ে আসা প্রায় ১ লক্ষ রোহিঙা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থ্যা করা হয়েছে এই ভাসানচরে। ভাসানচরে যাতায়াতের সহজ ও প্রধান রুট চট্রগ্রাম থেকে প্রায় ৩ ঘন্টা সাগরের উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিলে চারদিকে উপকূলীয় সবুজ বনায়ন বেষ্টিত দ্বীপে একটি “আশার বাতিঘর ” দেখা যাবে।গভীর সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে দিশেহারা নাবিকেরা যেমন বাতিঘর দেখে সমুদ্রের পথ দেখে ঠিক তেমনি এই বাতিঘর গভীর আগ্রহে জানান দিচ্ছে বাস্তুহারা,দুঃখকষ্টে জর্জরিত ১ লক্ষ রোহিঙা জনগোষ্ঠীকে এই দ্বীপে আশ্রয় দেওয়ার বার্তা।

সমুদ্রে ভাঙন ও জ্বলোচ্ছাস থেকে দ্বীপকে রক্ষা করার জন্য ২ কি.মি পাইলিং স্তম্ভ দেওয়া হয়েছে।চারপাশে ৯ ফুট উচ্চতার ১৩ কি.মি বেঁড়িবাধ ঘেরা দ্বীপের অভ্যন্তরে ৪২ কি.মি. পাঁকা সড়কের চারপাশে করা হয়েছে জাতিসংঘের স্টান্ডার্ড মান অনুযায়ী আবাসন ব্যবস্থা।ভূমি থেকে ৪ ফুট উঁচু করে ১২০ টি ক্লাস্টার হাউজ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় আশ্রয়ের জন্য ১২০ টি শেল্টার হাউজ। ১ টি ক্লাস্টারে ১২ টি হাউজ,১ টি হাউজে ১৬ টি করে কক্ষ। ১কক্ষে ৪ জনের ১ টি পরিবার থাকবে। রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও গোসলখানা। বায়োগ্যাস প্লান্টের চুলার ব্যবস্থা।গভীর নলকূপ ছাড়াও প্রতিটি ক্লাস্টারে ১ টি করে জলাধার।প্রতিটি ক্লাস্টারে শিশুদের জন্য রয়েছে বিদ্যালয়। এছাড়া আরো ২ টি বড় বিদ্যালয়,২ টি খেলার মাঠ,২টি হাসপাতাল ও ৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক।৩ টি টাউয়ার নেটওয়ার্ক।সৌর বিদ্যুৎ ও জেনারেটর থেকে দেয়া হবে ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ২ টি বাজার।১ লক্ষ মানুষের ৩ মাসের খাবার মজুদ রাখা হবে ৪ টি গুদামে।

রোহিঙারা সেখানে জীবিকার জন্য ফসল চাষ ও গবাদিপশু পালন করতে পারবে।তাদের নিরাপত্তার জন্য ভাসানচর নামে থানা গঠন করে তার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।পুলিশের সাথে থাকবে নৌবাহিনী।এছাড়া জাতিসংঘ প্রতিনিধি, রেডক্রস এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনারের অফিসের জন্য ১ টি করে ভবন বরাদ্দ করা হয়েছে।সরকার ও বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা ও যমুনার আদলে ১ টি অতিথি ভবন করা হয়েছে।আর কী বাকী আছে ভাসানচরে। সদা জাগ্রত,সদা নিশ্চিত,সদা নিরাপদ এই ভাসানচর। যাদের জন্য এত আয়োজন সেই রোহিঙাদের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ভাসানচর ভ্রমণ করে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।যার প্রধান কারন প্রাকৃতিক দূর্যোগ।এই অঞ্চলের বিগত ১৬৫ বছরের দুর্যোগের উপর স্টাডি করে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আমরা আশা করবো তারা আসবে (যদি না আসে জোর করে আনা হবেনা)। তারা না আসলে বা আসার পরে নিজ দেশে চলে গেলে তখন এখানে অন্যান্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো দেশের ভূমিহীন মানুষদের আশ্রয় দেওয়া হবে।অর্থ্যাৎ এই আয়োজন বৃথা যাবেনা। টেকনাফের শিবিরগুলো থেকে ও উন্নতমানের এই সুবিধা রোহিঙ্গারা নিবেন এবং বাংলাদেশের মহানুভবতা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিবেন এই প্রত্যাশায় সবাই।

লেখক: এমবিএ শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়