রামগতির আডাই লক্ষাধিক মানুষের আতংক অস্বাভাবিক জোয়ার!

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২১

সারোয়ার মিরন:
রামগতি উপজেলা উপকূলীয় ১পৌরসভাসহ পাঁচ ইউনিয়নে আতংকের নাম অস্বাভাবিক জোয়ার। এগুলো হল রামগতি পৌরসভা, ৪নং চর আলেকজান্ডার, ৬নং চরআলগী, ৪নং চর রমিজ, ৮নং বড়খেরী এবং ৭নং চরগাজি ইউনিয়ন।

পাঁচ ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম এবং পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডের প্রায় আডাই লক্ষাধিক মানুষ প্রতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর আগে অতিরিক্ত জোয়ারের ব্যাপকতা না দেখা গেলেও গতো বছর বর্ষা থেকে এ তীব্রতা বেড়েছে। কথা কথায় অতিরিক্ত জোয়ার। অমবস্যা ও পুর্নিমায় স্বাভাবিকের চেয়েও চার থেকে ছয় ফুট উচ্চতায় জোয়ার থাকে।

এ অস্বাভাবিক জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাছের ঘের, ফসলী জমি, রাস্তাঘাট, পুল কালভার্ট, বাড়িঘর, পুকুর এবং গবাদি পশু-পাখি। প্রচন্ড সংকেটে পড়ে সুপেয় পানির। জোয়ারের লোনা পানির প্রভাবে হাজার হাজার একর জমির ফসল (রবি শস্য) নষ্ট হয়েছে। লোনার প্রভাবে অনাবাদি থাকছে কৃষিজ জমি। বসত ঘরে প্রবেশ করছে বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু এবং পোকামাকড়। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভাংগনের শিকার হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার বেশ কয়েকটি বসত বাড়িতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুত সংযোগ।

অতিরিক্ত জোয়ারের প্রথম ভাবে এ কয়েকদিনের বর্ষায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে রামগতি থেকে বিবিরহাট সড়ক। চলাচলের এ প্রধান সড়কটির কোরের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার মোড নদী গর্ভে বিলীন। এছাড়াও চর রমিজের ছোট বড় বেশ কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক স্থানে ভেস্তে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বিবিরহাট থেকে রামদয়ালের মাজার সড়কে। আলেকজান্ডার ইউনিয়নে চরসেকান্দর রাস্তার মাথা থেকে মুন্সিরহাট সড়কটুও জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। এ সড়কটি সংষ্কারের (কার্পেটিং) এর এক সাপ্তাহের মধ্যেই বেশ কয়েকটি স্থানে ধেবে গেছে।

সড়ক গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সামান্য জোয়ারেই লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ৪টি কালভার্ট, ৮টি পাকা সড়কের ১১কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমান প্রায় ২কোটি ৩৬লক্ষ টাকা।

জোয়ারের তীব্রতাায় ভাংগনের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতো দু বছরে দক্ষিন চরআলগী, বালুরচরের সবুজ গ্রাম, আসলপাড়া, বড়খেরীর বিস্তীর্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। মুন্সিরহাট বাজার ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাংগনের মুখে রয়েছে বাংলাবাজার আলিম মাদরাসা, জনতা বাজার, রঘুনাথপুর পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি বহু স্থাপনা।

মুন্সিরহাট (জনতাবাজার) এলাকার মো: ইমাম হোসেন জানান, টেকসই এবং স্থায়ী বেড়ীবাঁধ না থাকায় প্রায়শই জোয়ারে হানা দেয়। লোকালয়ে জোয়ারের পানিতে নানামুখী দুভোর্গ দেখা দেয়। ভাংগনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গতো এক মাসেই মুন্সিরহাট মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম ছারওয়ার গ্রামীন কন্ঠকে জানান, প্রতিবারই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক গুলোর তালিকা পাঠাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। ইউনিয়র পরিষদের সংষ্কার বিষয়ক বরাদ্ধের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে বলেন এ বিশাল ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মতো সামর্থ পরিষদের নেই। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক গুলোর ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে বিবিরহাট বাজারস্থ তাঁর নিজ বাসায়ও পানি উঠেছে বলে জানান তিনি।

অস্বাভাবিক জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো: আবদুল মোমিন গ্রামীণ কন্ঠকে জানান, দীর্ঘ মেয়াদে কার্যক্রমের মধ্যে বললে আগামী অর্থ বছরেই মেঘনার ভাংগন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটির কাজ আগামী অর্থ বছরে শুরু হবে। এছাড়া এ বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা নেয়া হচ্ছে। চাল ডালসহ শুকনো খাবার এবং টিন বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকাও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরন করা হয়েছে।

ল²ীপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, আগামী তিন চার মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে আশা করি। তবে এ বর্ষায় জোয়ারের প্রভাবে ভাংগন কবলিত গুরুত্বপূর্ন স্থানে অস্থায়ী ভাবে বরাদ্ধের মাধ্যমে রোধ করার চেষ্ঠা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মেঘনা তীর সংরক্ষন বাঁধ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের অধীনে ১শ ৯৮কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৬কিমি নদী বাঁধের কাজ করা হয়। গত ১জুন একনেকে বাঁধ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয় এ প্রকল্পের আওতায় রামগতি কমলনগর উপজেলা দুটির মেঘনার ভাংগন কবলিত প্রায় ৩১কিলোমিটার বাঁধের কাজ হবে।