রামগতিতে জনপ্রিয় হচ্ছে ইরি চাষ

সয়াবিন পোষায় না, কৃষকদের আগ্রহ ইরি চাষে

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১০:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২

সারোয়ার মিরন:
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যেখানে দেখা যেত সয়াবিন কিংবা রবি শস্যের চাষাবাদ। সেসব স্থানে এখন ইরি ধানের চাষ। রবি শস্যের তুলনায় অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ এখন ইরি চাষে। গত কয়েক বছর ধরে অসময়ে বৃষ্টি, জোয়ার জলোচ্ছ্বাসে সয়াবিন চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে পাকা সয়াবিন ঘরে তোলার সময়ই বৃষ্টিপাত দেখা দেয়। ফলশ্রম্নতিতে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষয়—ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই বিকল্প হিসেবে ইরি চাষে আগ্রহ তাদের।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইরি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলায় ১হাজার কৃষককে বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে দুই কেজি করে হাইব্রিড ধানের বীজ। চলতি মৌসুমে ইরি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২হাজার পাঁচশত হেক্টর জমি। ইরি চাষের সময় চলমান থাকায় এ লক্ষ্যমাত্রা পুরনের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ। তিনি জানান, উপজেলা সেচ কমিটির মাধ্যমে উপজেলায় সেচ কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন কে রামগতিতে আরো কয়েকটি খাল খনন—পুন: খননের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। সামনের সমম্বয় মিটিংসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষন করবেন।

উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের কৃষক লোকমান হায়দার। স্থানীয় হাজীগঞ্জ বাজারের দক্ষিন পাশে^র্ এককানি জমিতে ইরি (আলোক) ধানের চারা রোপন করেছেন। পরিচর্ষার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গত দশ বছর ধরে তিনি ইরি চাষ করছেন। অন্যান্যবার কম জমিতে চাষাবাদ করলেও এবার চাষ করেছেন এককানিতে। সাফল্যও পেয়েছেন তিনি। গন্ডা জমিতে ৬—৮মন ধান উৎপাদন করেছেন।

চরবাদাম ইউনিয়নের ইরিচাষী মো: ফরিদ জানিয়েছেন, ইরি ধান চাষে লাভ বেশি তাই অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে এর চাষ করছি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে ইরি চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।

কৃষকরা জানান, গণহারে ইরি চাষ শুরু না হওয়ায় ইঁদুরের উৎপাতে তিনি বেশ নাজেহাল হচ্ছেন। জলাশয়ের পানিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। রয়েছে কীটনাশক, স্যারসহ প্রয়োজনীয় উপকরনের দুষ্প্রাপ্যতাও। ইরি চাষে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমনটা জানতে চাইলে কৃষকরা জানান, মাঝে মধ্যে উপজেলা এবং ইউনিয়ন ব্লক থেকে কৃষি কর্মকর্তা পরিচয়ে অফিসাররা আসেন। নাম ঠিকানা ইত্যাদি লিখে নেন। তবে কখনো কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা তারা পাননি বলে জানান।

ইরি চাষে প্রধান উপকরন পানি। গভীর নলকূপ এবং বৈদ্যুতিক সেচের ব্যবস্থা করা হলে উপজেলা জুড়ে আরো বিস্তৃত হতো ইরি চাষাবাদ। উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি নোনাযুক্ত। ইরি চাষে এ পানি উপযুক্ত নয়। ভরসা কেবল বদ্ধ জলাশয় এবং গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক সেচের পানি। কিন্তু এখনো বৈদ্যুতিক সেচের প্রচলন কোথাও দেখা মেলেনি।

ইরি চাষে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে পরামর্শের জন্য ইউনিয়ন উপকৃষি কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে কৃষকদের অনুরোধ করেছেন। তবে বরাদ্ধ না থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ে চাষীদের উপকরন, সার, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলেও জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

জানা যায়, মেঘনা নদী অববাহিকায় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মিঠা পানি বহমান থাকে। যা ইরি চাষের জন্য খুবই সহায়ক। সেচ কিংবা খালের মাধ্যমে এ পানি সংরক্ষন করা গেলে উপজেলায় ইরি ধান চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এক দশক সময় আগেও উপজেলায় ইরি চাষ দেখা যায়নি। পাশের জেলা নোয়াখালী এবং ফেনীর বেশ কয়েকটি উপজেলায় ইরি চাষ দেখেই মূলত আগ্রহী হয়েছেন তারা। দক্ষিণাঞ্চলের শস্য ভান্ডারখ্যাত রামগতিতে ইরি চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ব্যাপকভাবে ইরি চাষে আগ্রহী হতো কৃষকরা।