আবদুল্যাহ আল মামুন: একজন সাবেক সাংসদের জনপ্রিয়তার আখ্যান, পর্ব-১

Sarwar Sarwar

Miran

প্রকাশিত: ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) সংসদীয় আসনের সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব মো: আবদুল্যাহ আল মামুন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে কেন এত জনপ্রিয়? সাবেক হয়েও মানুষের মনে সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর নামই কেন সবার মুখে মুখে? কি এমন কাজ করেছেন যা তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে? এসব অনুসন্ধান নিয়েই ধারাবাহিক একাধিক পর্বে লিখেছেন দেশালোক ডটকম এর সম্পাদক ও প্রকাশক সারোয়ার মিরন। আজ পড়ুন প্রথম পর্ব
সারোয়ার মিরন:
গত ৫বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বে না থেকেও রামগতি-কমলনগর উপজেলার প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষের মনমনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব মো: আবদুল্যাহ। যাঁকে সবাই চেনেন আবদুল্যাহ আল মামুন নামে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে কর্মজীবন শুরু করে কঠোর পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার সফল প্রয়োগে হয়েছেন দেশের নামকরা শিল্পপতি। দেশের অন্যতম পোষাক উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপের চার সংগঠকের একজন এই আবদুল্যাহ আল মামুন। ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরিচালক ও অংশীদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে।

ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক ঘরানায় আনাগোনা না থাকলেও জন মানুষের সেবক হতে রাজনীতির হাতেখড়ি নেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগরে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছিনিয়ে এনেছেন দলীয় মনোনয়ন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে মহান জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের চার লক্ষাধিক মানুষের। (এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২৬৬৯৫১জন। ভোট দিয়েছন ১১৫২৫৬ জন যা শতকরা ৪৩.১৭%। নৌকা প্রতিক পেয়েছে ১০৫৫৮১ ভোট।)

নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রম্নতির একটি ছিল দীর্ঘ তিন যুগ ধরে ভাংগন কবলিত মেঘনার ভাংগন প্রতিরোধে কাজ করার। প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে সরকারি বরাদ্ধ পেতে দেরি হওয়ায় নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকেই কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের শেষ দিকে মেঘনার ভাংগন প্রতিরোধের কাজের অংশ হিসেবে প্রায় দুইশ কোটির টাকার একটি প্রকল্প পাশ করান। এ প্রকল্প কাজের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে মেঘনা উপকূলের প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় টেকসঁই বেড়ী বাঁধ নির্মান হয়। এর মধ্যে রয়েছে আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিমি, রামগতি বাজার এক কিমি এবং কমলগর উপজেলার মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার কাজ। যা গতে দশ বছর ধরে দৃশ্যমান। বর্তমানে এই সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেড়ীবাঁধ এলাকা পর্যটনের এক সুপরিচিত এলাকা। জনগনের চাহিদানুযায়ী ও তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস প্রকৌশল টীমের তত্ত্ববধানেই তখন কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল। এ ঐতিহাসিক কাজটিই তাঁকে বিশালতায় স্থান দিয়েছে। এর ফলেই তিনি হয়ে উঠেছেন সর্বসাধারনের। পরবর্তীতে পাস হওয়া অবশিষ্ট ৩২কিলোমিটার বেড়ীবাঁধের প্রায় ৩হাজার ১শ কোটি টাকার প্রকল্পেও তাঁর অবদান ছিলো অনস্বীকার্য। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হতে পারলে দ্বিতীয় ধাপের এ বেড়ীবাঁধের করুন দশা দেখতে হতো না বলে বিশ্বাস সবার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত দলীয় মনোনয়ন পেয়েও শুধুমাত্র দলীয় সিদ্ধান্তে জোটের শরিক বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এর নিকট প্রার্থীতা ছেড়ে দেন। দলীয় আনুগত্যের সবোর্চ্চ পরীক্ষা দিয়ে সফল দায়িত্ব পালন করেও ছেড়ে দিয়েছেন প্রার্থীতা। জনপ্রিয়তার বিচারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনে অংশ নিলে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করতে পারতেন তিনি। তা করেন নি তিনি! একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সাবেক সাংসদ হয়েও এ উপকূলীয় জনপদে সাংসদ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন আবদুল্যাহ আল মামুন। এর একমাত্র কারন মেঘনার ভাঙ্গনরোধে তাঁর একাগ্র সমর্পন সফলতা।

আবদুল্যাহ আল মামুন নির্বাচিত হয়েই সর্বপ্রথম এলাকার প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন। এর পর তা মোকাবেলায় কাজ শুরু করেছেন। বহুধারায় বিভক্ত আওয়ামীলীগকে সাংগঠনিক করা, আইন-শৃঙ্খলন উন্নতি করা, নদীভাঙ্গন রোধ করা, রাস্তাঘাট সংস্কার, শিক্ষা ও বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্ঠা করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব কাজে সফল তিনি। দায়িত্বের পাঁচ বছরে প্রথমে তাঁর আমন্ত্রণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের, ৩মে ২০১৪ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয় নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতিক, একই বছরে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং মৎস্য মন্ত্রী জনাব সায়েদুল হক রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিদর্শন করেছিলেন। বিভিন্ন মন্ত্রীদের এসব সফরে আবদুল্যাহ আল মামুন নির্বাচনী এলাকায় জনগণের প্রধান দাবি নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত করেন। একাধিক জনসভায় জনগণের প্রধান সমস্যা নদীভাঙ্গা সমাধানের আশ্বস্ত করেন এবং তা বাস্তবায়নের পরবর্তীতে কাজ করেন। এছাড়াও চলমান প্রকল্প গুলো গুণগতমান পরিদর্শনের জন্য ২০১৫-১৬ সালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীও পাঁচবার রামগতি ও কমলনগর পরিদর্শন করেন।

দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন: সাবেক সাংসদ আবদুল্যাহ আল মামুন: রামগতি-কমলনগরের গণমানুষের এমপি: পর্ব-২

– চলবে…

 

লেখক:

সম্পাদক ও প্রকাশক, দেশালোক ডটকম